Homeদেশের গণমাধ্যমেকুবিতে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা দিলেন বহিষ্কৃত শিক্ষার্থী

কুবিতে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা দিলেন বহিষ্কৃত শিক্ষার্থী


কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) মাদক সম্পৃক্ততার অভিযোগে সাময়িক বহিষ্কৃত হয়েও সেমিস্টার ফাইনাল পরিক্ষায় অংশ নিয়েছেন প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের এক শিক্ষার্থী।

এতে বিভাগের শিক্ষার্থীদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে । তবে বিভাগ সংশ্লিষ্টদের দাবি, প্রশাসন থেকে বহিষ্কার হওয়া সংক্রান্ত কোনো আনুষ্ঠানিক চিঠি বিভাগে প্রেরণ করা হয়নি।

ওই শিক্ষার্থী হলেন, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শাকিল খান। গত ৬ মে বিজয়-২৪ হলে হল প্রাধ্যক্ষের নেতৃত্বে মাদকবিরোধী অভিযানে মাদকের সঙ্গে সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া যায়। পরে ৭ মে তাকে হল থেকে বহিষ্কার এবং ১৪ মে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।

জানা গেছে, গত ২৯ এপ্রিল বিভাগটিতে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের এআরসি-২২১ কোর্সের পরীক্ষার মধ্য দিয়ে চতুর্থ সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হয়। এই সেমিস্টারের বাকি পরীক্ষাগুলো ছিল যথাক্রমে এআরসি-২২২ কোর্স ৪ মে, এআরসি-২২৩ কোর্স ৮ মে এবং এআরসি-২২৪ কোর্সের পরীক্ষা ছিল ১২ মে।

সর্বশেষ রবিবার (১৮ মে) এআরসি-২২৫-সাউথ এশিয়ান এপিগ্রাফি (এনসিয়েন্ট পিরিয়ড) কোর্সটির পরীক্ষা ছিল। এই পরীক্ষাটি বহিষ্কার হওয়ার পর অনুষ্ঠিত হয়। বহিষ্কৃত হয়েও শাকিল খান সর্বশেষ এআরসি-২২৫ কোর্সের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন।

নিয়ম অনুযায়ী, বহিষ্কারের মেয়াদকালে ক্লাস-পরীক্ষাসহ সব ধরনের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞাসহ বহিষ্কৃতরা বিশ্ববিদ্যালয় ও আবাসিক হলেও অবস্থান করতে পারবেন না। কিন্তু এই বিধানের তোয়াক্কা না করে পরীক্ষা দিয়েছেন ওই শিক্ষার্থী।

এ নিয়ে অভিযুক্ত শিক্ষার্থী শাকিল খান বলেন, “আমি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিলাম। তবে আমি যে পরীক্ষায় বসতে পারব না, এ বিষয়টি বিভাগ থেকে আমাকে কিছু জানায়নি।”

বিভাগ সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, একটি সিদ্ধান্ত হলে সেটা বিভাগে প্রশাসন প্রেরণ করবে, এটাই নিয়ম। কোনো আনুষ্ঠানিক চিঠি ছাড়া তো আমরা একজন শিক্ষার্থীকে পরীক্ষায় বসতে না করতে পারি না। শৃঙ্খলা বোর্ড বহিষ্কারের সুপারিশ করেছে। সেটা যদি পাস হয়ে থাকে, তাহলে একটি অফিস আদেশ বিভাগে পাঠানোর কথা। তখন আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারব। কিন্তু এমন কোনো চিঠি বিভাগে আসেনি। এটা প্রশাসনই ভালো বলতে পারবে।

চলমান চতুর্থ সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা কমিটির সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন ড. মোহাম্মদ মাহমুদুল হাছান খান। একইসঙ্গে বহিষ্কৃত শিক্ষার্থী শাকিল খান যে হল থেকে বহিষ্কার হয়েছেন, মাহমুদুল হাসান খান সেই হলেরই প্রাধ্যক্ষ। তিনি অভিযান চালিয়ে শাকিল খানের মাদক সম্পৃক্ততা পান।

এ নিয়ে পরীক্ষা কমিটির সভাপতি সহকারী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহমুদুল হাছান খান বলেন, “বহিষ্কার হয়েছে কি না সেটা তো প্রশাসন থেকে আমাদের কিছু জানানো হয়নি। আনুষ্ঠানিক কোনো চিঠিও পাঠানো হয়নি। সেজন্য আমরা তাকে (শাকিল) পরীক্ষায় বসতে দিয়েছি। এখন যদি প্রশাসন মনে করে পরীক্ষা গ্রহণযোগ্য হবে না, তবে সেটা প্রশাসনের বিষয়।”

প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড. মুহাম্মদ সোহরাব উদ্দিন বলেন, “শৃঙ্খলা বোর্ডের কমিটিতে আমিও ছিলাম। সেখানে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এই সংক্রান্ত কোনো অফিসিয়াল চিঠি প্রশাসন থেকে বিভাগে আসেনি। সেজন্য পরীক্ষা দিতে দিয়েছি।”

বিভাগীয় দপ্তরে চিঠি না পাঠানোর বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাসুদা কামাল বলেন, “যেহেতু বিভাগীয় প্রধান মিটিংয়ে (শৃঙ্খলা বোর্ডের) ছিলেন, তো উনি বিষয়টি (বহিষ্কার) সম্পর্কে অবগত রয়েছেন। সেখানে চিঠি ইস্যু করা না করা তো কোন বিষয় না। আমি এখন ছুটিতে আছি, চিঠি পাঠানোর বিষয়ে রেজিস্ট্রার স্যার ভালো বলতে পারবেন।”

রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, “শৃঙ্খলা বোর্ডের একটি মিটিং হয়েছে। মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে। ওইটার ফাইল নোট পাস হয়ে ঘুরে আসলে তারপর আমি পাঠাতে পারব। অনুমোদন না হলে সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে না। বহিষ্কার ফাইল নোট এখনো পাস হয়ে রেজিস্ট্রার দপ্তরে আসেনি। তাই আমরা এখনো চিঠি দিতে পারিনি।”

গত ১৪ মে শৃঙ্খলা বোর্ডের সভায় নেওয়া সিদ্ধান্তের অনুলিপি প্রতিবেদকের কাছে রয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা পরিপন্থি ও নৈতিক অবক্ষয়মূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার কারণে সর্বসম্মতিক্রমে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব হলের আবাসিকতার অধিকার থেকে বঞ্চিত করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ওই সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো হলে অবস্থান করতে পারবে না এবং অ্যাকাডেমিক সব কার্যক্রম থেকেও সাময়িক বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

শৃঙ্খলা বোর্ডের সিদ্ধান্তের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এবং শৃঙ্খলা বোর্ডের সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. মো. আবদুল হাকিম বলেন, “বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত যেদিন নেওয়া হয়, সেদিন থেকেই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়ে থাকে। সেই হিসেবে বহিষ্কার হওয়া শিক্ষার্থী অ্যাকাডেমিক কোনো কার্যক্রম অংশ নিতে পারবে না। এমনকি ক্যাম্পাসে বা হলেও প্রবেশ করতে পারবে না। আর বহিষ্কার হওয়া শিক্ষার্থী তো কোনোভাবেই পরীক্ষায় বসতে পারবে না।”

পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরের প্রধান নূরুল করিম বলেন, “আইন অনুযায়ী একজন বহিষ্কৃত শিক্ষার্থী কোনোভাবে পরীক্ষায় বসতে পারে না। যদি ওই বহিষ্কৃত শিক্ষার্থী পরীক্ষায় বসে থাকে, তাহলে বিষয়টি আমার জানা নেই। এখন শুনছি ওই বহিষ্কৃত শিক্ষার্থী পরীক্ষায় বসেছে, বিষয়টি তদন্ত করে দেখতে হবে।”

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলীর মোবাইলে কল দেওয়া হলে তিনি রিসিভ করেননি।





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত