Homeদেশের গণমাধ্যমেকৃষিপণ্য রপ্তানি বাড়াতে প্রয়োজন উন্নত পদ্ধতির অনুশীলন

কৃষিপণ্য রপ্তানি বাড়াতে প্রয়োজন উন্নত পদ্ধতির অনুশীলন

[ad_1]

বাংলাদেশ একটি কৃষিপ্রধান দেশ হলেও, গত কয়েক বছরে দেশের মোট রপ্তানির তুলনায় কৃষিপণ্যের রপ্তানি আশানুরূপ হারে বৃদ্ধি পায়নি। এর পেছনে মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে নীতিগত সহায়তার অভাব, উৎপাদন খরচের ঊর্ধ্বগতি এবং উন্নত কৃষি পদ্ধতি অনুশীলনের অনুপস্থিতি। যেখানে তৈরি পোশাক শিল্প বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে শীর্ষে রয়েছে বিদেশি ক্রেতাদের মানসম্মত চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদনের মাধ্যমে, সেখানে কৃষিপণ্য রপ্তানিতে এখনো কাঠামোগত প্রস্তুতির দিক থেকে ঘাটতি রয়ে গেছে। তবে ইতিবাচক দিক হলো, সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বাংলাদেশের বেসরকারি খাতও এখন কৃষির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সক্রিয় ভূমিকা রাখছে, যা ভবিষ্যতে রপ্তানিমুখী কৃষির জন্য সহায়ক হতে পারে।

অভিজ্ঞ মহল মনে করেন, কৃষিপণ্য রপ্তানি বাড়াতে হলে উন্নত কৃষি অনুশীলন বাস্তবায়ন করা জরুরি। কেননা বাংলাদেশ উত্তম কৃষি চর্চা নীতিমালার তথ্যানুযায়ী, উন্নত কৃষি অনুশীলন (জিএপি) হচ্ছে এমন একটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পদ্ধতি, যার মাধ্যমে কৃষি উৎপাদনের প্রতিটি ধাপে – ফসল চাষ থেকে শুরু করে ফসল সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াকরণ পর্যন্ত – নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য, পরিবেশ এবং মান বজায় রাখা হয়। ফলে বাংলাদেশের কৃষিপণ্য রপ্তানির সক্ষমতা বাড়াতে হলে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসারে উৎপাদন পদ্ধতি গ্রহণ করা অত্যাবশ্যক।

এরই অংশ হিসেবে দেশের কৃষি খাতে উন্নত কৃষি প্রযুক্তি ও পরিবেশবান্ধব উৎপাদন পদ্ধতির প্রয়োগে বেসরকারি খাতের কিছু উদ্যোগ ইতোমধ্যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এর উল্লেখযোগ্য একটি দৃষ্টান্ত হলো স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের কার্যক্রম। সাসটেইনেবল অ্যাগ্রিকালচার ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের সাথে চলতি বছরের শুরুর দিকেই যৌথ উদ্যোগ নেয় এ প্রতিষ্ঠান। তাদের উদ্যোগটির মাধ্যমে রংপুর জেলায় দুটি ‘স্মার্ট মডেল কৃষি গ্রাম’ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। টেকসই কৃষি পদ্ধতি বাস্তবায়নের মাধ্যমে সুবিধাবঞ্চিত গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন এবং কৃষিভিত্তিক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করাই ছিল এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য।

এ কর্মসূচির আওতায় ৩ হাজার ৫০০ জনেরও বেশি গ্রামের মানুষ সরাসরি উপকৃত হয়েছেন এবং তরুণ উদ্যোক্তারা কৃষি খাতে নেতৃত্ব দিতে উৎসাহিত হয়েছেন। উদ্যোগটির মাধ্যমে দুটি ‘সেন্টার অব এক্সিলেন্স’ গড়ে তোলা হয়েছে, যা কৃষি প্রশিক্ষণ, উদ্ভাবন ও কমিউনিটি সেবা কেন্দ্র হিসেবে কাজ করছে। কৃষকদের প্রযুক্তির ব্যবহার শেখানো ও পরামর্শ সেবা দিতে ‘ফার্মার্স হাব’ তৈরি করা হয়েছে। এছাড়াও হাইব্রিড সৌর সেচ পদ্ধতি, কম্বাইন হারভেস্টার, ট্রাক্টর, প্রাকৃতিক মজুদাগার, মাটিবিহীন চারা, ভার্মি কম্পোস্টের মতো আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ইতিমধ্যে এ উদ্যোগের আওতায় ৬২টি নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে এবং ৩৭ জন গ্রামীণ উদ্যোক্তা গড়ে উঠেছে।

এদিকে কৃষকদের জীবনমান উন্নয়ন ও স্বল্প সময়ে কৃষিকে অধিক লাভজনক খাতে রূপান্তরের লক্ষ্যে বিএটি বাংলাদেশ বেশ কিছু কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। শ্রম সংকট ও উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে, প্রতিষ্ঠানটি ২০২১ সালে চালু করে ‘লোকাল-ফিট ফার্ম মেকানাইজেশন’। এই উদ্যোগের আওতায় কৃষিকাজে ব্যবহৃত হচ্ছে স্থানীয়ভাবে তৈরি আধুনিক যন্ত্রপাতি। যেমন, ক্ষেতের সারি তৈরির যন্ত্র, সার প্রয়োগকারী ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় কৃষি যন্ত্র। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএআরআই) এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহায়তায় ২০২৪ সাল পর্যন্ত এই প্রকল্পের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে ৩৭ হাজার ৭০০ জন কৃষককে। যন্ত্র নির্ভর এই কৃষি ব্যবস্থার ফলে এখন পর্যন্ত ৫৩ হাজার ৫০০ জনেরও বেশি কৃষক সরাসরি উপকৃত হয়েছেন।

এছাড়াও ফসলের ক্ষতিকর কীটনাশক ব্যবহারের পরিবর্তে পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি ব্যবহার নিশ্চিত করতে বিএটি বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহায়তায় কুষ্টিয়ার মেহেরপুর, ঝিনাইদহ, চেচুয়া ও আল্লারদর্গাসহ বিভিন্ন এলাকায় গড়ে তুলেছে ৭৫টি ‘আইপিএম ক্লাব’। এই ক্লাবগুলোর মাধ্যমে কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে কীটনাশক ব্যবস্থাপনায় জীববৈজ্ঞানিক ও টেকসই পদ্ধতির ওপর, যা একদিকে যেমন উৎপাদন ব্যয় কমাচ্ছে, অন্যদিকে পরিবেশও রক্ষা করছে।

উন্নত কৃষি পদ্ধতি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এ সি আই লিমিটেড বাংলাদেশের কৃষকদের অন্যতম পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির দুটি প্রধান শাখা – এ সি আই ক্রপ কেয়ার এবং এ সি আই ফর্মুলেশন্‌স লিমিটেড – সারা দেশে কৃষকদের মধ্যে ফসল সুরক্ষা, বালাইনাশকের সঠিক ও নিরাপদ ব্যবহার এবং সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করছে। এ উদ্যোগ জিএপির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক, যা আন্তর্জাতিক মান রক্ষা করে কৃষিপণ্যের রপ্তানি বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। নিরাপদ, মানসম্মত এবং পরিবেশবান্ধব উৎপাদনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পাশাপাশি কৃষিকে রপ্তানিমুখী খাতে রূপান্তরের লক্ষ্যে অবিচল রয়েছে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. আতিকুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের কৃষিপণ্য রপ্তানি বৃদ্ধিতে শুধু সরকারি উদ্যোগ যথেষ্ট নয়। এই রূপান্তরে বেসরকারি খাতের সক্রিয় অংশগ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিছু প্রতিষ্ঠানের কর্মসূচি যে ইতোমধ্যে মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়িত হয়েছে, তা প্রশংসনীয়। কৃষির উন্নয়নে এমন আরও উদ্যোগ প্রয়োজন, যাতে কৃষকের আয় বাড়ে, উৎপাদন হয় টেকসই এবং রপ্তানি বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা সম্ভব হয়। দেশের কৃষিকে রপ্তানিমুখী করতে হলে সরকারি ও বেসরকারি অংশীদারত্বে একটি সমন্বিত ও দীর্ঘমেয়াদি কৌশল বাস্তবায়ন জরুরি হয়ে পড়েছে।



[ad_2]

Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত