Homeদেশের গণমাধ্যমেগাজার ৫ হাজার বছরের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন

গাজার ৫ হাজার বছরের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন


প্রাচীন সভ্যতার একটি জীবন্ত সাক্ষী গাজা উপত্যকা। প্রাচীনকাল থেকেই ভূমধ্যসাগর, এশিয়া এবং ইউরোপের সংযোগস্থল হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ছিল গাজা উপত্যকা। যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকা থেকে সংগৃহীত প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের প্রদর্শনী হচ্ছে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে। প্যারিসের আরব বিশ্ব ইনস্টিটিউটে আয়োজিত ‘গাজা থেকে উদ্ধারকৃত ধনসম্পদ: ৫ হাজার বছরের ইতিহাস’ শীর্ষক প্রদর্শনীটি দর্শকদের নিয়ে যায় একটি বিস্ময়কর সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক যাত্রায়। এ প্রদর্শনীতে গাজার পাঁচ হাজার বছরের পুরাতাত্ত্বিক ঐতিহ্যের ১৩০টি নিদর্শন প্রদর্শিত হচ্ছে, যার মধ্যে রয়েছে ভাস্কর্য, মোজাইক, খোদাই করা পাথর এবং বিভিন্ন শিল্পকর্ম। উল্লেখযোগ্য নিদর্শনগুলোর মধ্যে রয়েছে পোড়ামাটির পাত্র, গ্রিক যুগের মার্বেল নির্মিত দেবী আফ্রোদিতির মূর্তি এবং সূক্ষ্ম অলংকরণযুক্ত রোমান তেলের বাতি।

প্রদর্শনীতে একটি বিশেষ আকর্ষণ হলো একরঙা মোজাইক, যা একটি ফিলিস্তিনি কৃষকের মাধ্যমে বেইত লাহিয়াতে আবিষ্কৃত হয়। এ মোজাইকটি ৬ মিটার লম্বা ও ৩ মিটার চওড়া, যার উৎপত্তি ১৭৯ খ্রিষ্টাব্দে রোমান যুগে। এটি গাজার সমৃদ্ধ ইতিহাস এবং পূর্বের গুরুত্বপূর্ণ সময় তুলে ধরে। একই সঙ্গে এটি প্রকাশ করে গাজার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং ফিলিস্তিনি শিল্পীদের অভিরুচি। প্রদর্শনীতে ১৯৯৫ সালে শুরু হওয়া ফরাসি-ফিলিস্তিনি খনন কার্যক্রমের মাধ্যমে আবিষ্কৃত নিদর্শন এবং জাওয়াদ খোদরির ব্যক্তিগত সংগ্রহের নিদর্শনও প্রদর্শিত হচ্ছে। এটি ফ্রান্সে প্রথমবারের মতো প্রদর্শিত হচ্ছে।

আরব বিশ্ব ইনস্টিটিউটের সভাপতি জ্যাক ল্যাং বলেন, ‘এ প্রদর্শনী গাজার পাঁচ হাজার বছরের ইতিহাস তুলে ধরে, যা বর্তমান ও ভবিষ্যতের সঙ্গে অতীতের সংযোগ স্থাপন করে।’ তিনি বলেন, ‘গাজা কখনোই পূর্বের রিভিয়েরা হবে না।’ ল্যাং আরও বলেন, ‘গাজার জনগণ তাদের ভূমি ছাড়তে চায় না, কারণ এটি তাদের ইতিহাস, স্মৃতি এবং পরিচয়ের অংশ।’ তিনি ট্রাম্পের গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদের পরিকল্পনাকে ‘পাগলামি’ ও ‘অযৌক্তিক’ বলে অভিহিত করেন।

প্রদর্শনীতে একটি ৩ডি ভার্চুয়াল ট্যুরের মাধ্যমে দর্শকরা সেন্ট হিলারিয়নের মঠসহ বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থান ঘুরে দেখতে পারেন। এ ছাড়া, ‘গাজা: ধ্বংসপ্রাপ্ত ঐতিহ্যের তালিকা’ প্রকল্পের মাধ্যমে ৪০ জন গবেষক একটি ইন্টারেকটিভ মানচিত্র তৈরি করেছেন, যা গাজার হুমকির মুখে থাকা ঐতিহাসিক স্থানগুলো চিহ্নিত করে। প্রদর্শনীতে গাজার ইতিহাসের সঠিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরা হয়েছে এবং যুদ্ধের সময় ঐতিহ্য সংরক্ষণের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। এতে গাজার বর্তমান অবস্থা, সাম্প্রতিক গবেষণা এবং ২০ শতকের গোড়ার দিকে তোলা বিরল ছবি প্রদর্শিত হয়েছে।

প্রদর্শনীর কিউরেটর এলোডি বোফার বলেন, ‘আন্তর্জাতিক চুক্তি অনুযায়ী, যুদ্ধের সময় ঐতিহাসিক স্থান ও নিদর্শন সংরক্ষণ করা জরুরি। এ প্রদর্শনী ফিলিস্তিনি ঐতিহ্যের মূল্য তুলে ধরে।’ বোফার আরও বলেন, ‘মানুষ তার ঐতিহ্য ও পরিচয়ের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত। ঐতিহ্য ধ্বংস মানে মানুষের অস্তিত্ব ধ্বংস। ফিলিস্তিনি শিল্পকর্ম সংরক্ষণ মানে ফিলিস্তিনি জনগণকে সংরক্ষণ।’

প্রদর্শনীতে ‘আনাস্তাসিয়া স্টুডিও’-এর সহযোগিতায় একটি সৃজনশীল দৃশ্যপট তৈরি করা হয়েছে, যা ১৭ বছরেরও বেশি সময় ধরে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় নির্বাসিত থাকা নিদর্শনগুলোর গল্প তুলে ধরে। প্রথম গ্যালারিতে গাজার ইতিহাস ও নিদর্শনগুলোর পরিচিতি দেওয়া হয়েছে, যা ৩৫০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ থেকে শুরু করে আধুনিক সময় পর্যন্ত বিস্তৃত। দ্বিতীয় গ্যালারিতে যুদ্ধের সময় ফিলিস্তিনি ঐতিহ্যের ধ্বংসপ্রাপ্তির চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।

বোফার বলেন, ‘আমরা গবেষক ও ইউনেসকোর সঙ্গে কাজ করেছি এবং লক্ষ করেছি যে, গাজার ৩৫০টি পরিচিত ঐতিহাসিক স্থানের মধ্যে ১৫০টি আংশিকভাবে এবং ৯৪টি সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এ প্রদর্শনী একটি সাংস্কৃতিক প্রতিরোধের রূপ, যা গাজার ঐতিহ্য এবং ফিলিস্তিনের পরিচয় সংরক্ষণে সহায়তা করে।’

‘গাজা থেকে উদ্ধারকৃত ধনসম্পদ: ৫ হাজার বছরের ইতিহাস’ শীর্ষক এ প্রদর্শনীটি ‘অ্যাভার ডু রুইয়ঁ’ অ্যাসোসিয়েশন, জেনেভার শিল্প ও ইতিহাস জাদুঘর, ফিলিস্তিনি জাতীয় কর্তৃপক্ষ এবং আলিফ ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় আয়োজিত হয়েছে এবং ২০২৫ সালের ২ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে।

* আলজাজিরা আরবি অবলম্বনে





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত