Homeদেশের গণমাধ্যমেছেলেকে এখনও খুঁজে ফেরেন মা রওশন আরা

ছেলেকে এখনও খুঁজে ফেরেন মা রওশন আরা

[ad_1]

সরকার পতনের আন্দোলনে নিহত বগুড়ার দুপচাঁচিয়ার যুবদল কর্মী আবু রায়হান রাহিমের শোক এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেননি মা রওশন আরা বেগম। তার চোখের পানি যেন থামছেই না। সন্তানকে এখনও প্রতিনিয়ত খুঁজে ফিরছেন তিনি। 

ছেলে যেখানে তার জুতা রাখতেন সেখানে গিয়ে পরখ করে আসছেন জুতা জোড়া আছে কিনা। যে সময়টায় ছেলে বাসায় ফিরতেন সে সময় বাড়ির পাশ দিয়ে কোনো মোটরসাইকেল গেলেই বুকের ভেতরটা খাঁ খাঁ করে ওঠছে তার। ওই সময় তার মনে হয়, রাহিম এখনই দরজায় করা নাড়বে। বাড়িতে প্রবেশ করে তাকে জিজ্ঞেস করবে ‘মা ভাত খেয়েছেন?’ বলছিলেন রাহিমের মা।

রাহিম বগুড়ার দুপচাঁচিয়া পৌর শহরের চকসুখানগাড়ী মহল্লার মৃত শাহজাহান আলীর ছেলে। তিনি উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ছিলেন। পেশায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন।  গত ৪ আগস্ট সরকার পতনের আন্দোলনে গিয়ে দুপচাঁচিয়া থানার সামনে দুই পায়ে গুলিবিদ্ধ হন রাহিম। এরপর তাকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নেওয়ার পর সেখান থেকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে ওই দিনই তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়। পরে ৫ দিন ঢাকার জাতীয় জাতীয় অর্থোপেডিক (পঙ্গু) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৯ আগস্ট মারা যান। 

এ ঘটনার পর রাহিমের মা রওশন আরা বেগম বাদী হয়ে গত ১৭ আগস্ট ২২ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ৮২ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন।

রওশন আরা বেগম জানান, রাহিমের জন্য প্রতিরাতেই তার ঘুমে ভেঙে যায়।  রাহিমের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, “একবার এক ঘটনায় রাহিমের উপর রাগ করেছিলাম। ভাত না খেয়েছিলাম। রাহিম আমার দুই পা মাথায় নিয়ে বলেছিলো, ‘এটাই আমার জান্নাত, এটাই আমার স্বর্গ, এটাই আমার সব। ও মা তুমি একগ্রাস এনা ভাত খাও মা।’ এরপর রাহিম আমাকে ভাত তুলে খাইয়েছিল।” 

তিনি জানান, এই স্মৃতিটা তাকে খুব বেশি কষ্ট দিচ্ছে। এই স্মৃতিটা তিনি ভুলতে পারছেন না। তার বুক হাহাকার করছে। চোখ বন্ধ করলেও রাহিমের চেহারা ভেসে উঠছে, চোখ খুললেও রাহিমের চেহারা ভেসে উঠছে! রাতে এখনও কেউ যদি বাড়ির পাশ দিয়ে মোটর সাইকেল নিয়ে যায়, হর্ন বাজালেই তার বুকের ভেতর হুহু করে ওঠে। তিনি দৌড়ে বাইরে বের হতে চান!

ছেলের ছবি হাতে কাঁদছেন মা

রওশন আরা বেগম বলেন, “৪ আগস্ট সেদিন সকাল থেকেই বাইরে অনেক মানুষ আন্দোলনে যাচ্ছিলো। অনেক ছোট ছোট ছেলেও ছিলো। অনেকেই বাসায় এসে পানি খেতে চাচ্ছিলো। আমি তাদের পানি খাওয়াচ্ছিলাম। এর মধ্যে আমি রাহিমকে বলি ‘বাবা তুমি আজকে যেন ওদিকে যেওনা, সে বলেছিলো, না মা আমি যাবো।’ এরপর আমি বাড়ির অন্য কাজ করছিলাম। পরে বাড়ির বাইরে বের হতেই একজন আমাকে জানায় তোমার ছেলে আজ আবার আন্দোলনে গেছে। পরে আমি রাহিমকে খোঁজার জন্য যেতেই কেউ একজন আমাকে বলে রাহিম গুলি খেয়েছে। তাকে জিজ্ঞেস করি এখন কোথায় আছে। তিনি আমাকে জানান, দুপচাঁচিয়ায় এক হাসপাতালে আছে। আমি সেখানে যাই। গিয়ে দেখি আমার ছেলেকে বেডে শুয়ে রাখা হয়েছে। ওর পায়ের নিচে যে চাদর ছিলো সেই চাদর রক্তে ভিজে চপচপে হয়ে গিয়েছিলো। আমাকে দেখেই রাহিম বলে ঊঠলো, ‘মা, মা, আমি হয়তো আর বাঁচবো না মা’! পরে ওই হাসপাতালের ডাক্তাররা আমাদের জানালো এখানে চিকিৎসা হবে না আপনারা মেডিকেলে নিয়ে যান। পরে তাকে মেডিকেলে নিয়ে যাওয়ার জন্য চেষ্টা করি। কিন্তু কোন গাড়ি পাচ্ছিলাম না। পরে আমাদের পাড়ার এক ছেলে স্থানীয় এক গ্যারেজ থেকে অটোরিকশাওয়ালাকে ডাকলে সে গাড়ি ভাঙবে এমন ভয়ে যেতে চাচ্ছিলো না। পরে অন্যজন রাহিমের অবস্থা দেখে ঝুঁকি নিয়ে সে যেতে রাজি হয়। আমি আর রাহিমের স্ত্রী দুই মেয়ে মানুষ আমাদের সাথে আর কেউ ছিলো না। পরে সাথে আরেকজন সাহায্যে এগিয়ে আসে। আমরা রাহিমকে মেডিকেলে নিয়ে যাই। সেখানেও চিকিৎসা দিতে গিয়ে ডাক্তাররা ঢাকায় নিয়ে যেতে বলে। ঢাকাতে নিয়ে যাবো। সেখানে যাওয়ার জন্যও কোন গাড়ি পাচ্ছিলাম না। এদিকে আমার ছেলে যন্ত্রণায় চিৎকার করছিলো। ছটফট করছিলো। পরে একজন ড্রাইভার ৩০ হাজার টাকা ভাড়া দাবি করলে আমি তাতেই রাজি হয়ে ছেলেকে ঢাকায় নিয়ে যাই। প্রথমে তাকে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর তারা সেখান থেকে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালে পাঠায়। যেহেতু আমার ছেলের দুই পায়েই গুলি লেগেছিলো। সেখানে তার পায়ে অপারেশন করা হয়। এরপরেও রাহিমের পায়ের যন্ত্রণা কমছিলো না। সে আমাকে বার বার বলছিলো, ‘মা অপারেশন তো হয়ে গেলো, এরপরেও কেন আমার পায়ের যন্ত্রণা কমছে না মা’।” 

তিনি বলেন, “রাহিমের যন্ত্রণা কমছিল না, এ জন্য ডাক্তারদের কাছে দৌড়িয়েছি। কেউ আমার ছেলের যন্ত্রণা কমাতে পারেনি। রাহিমের অবস্থা বেশি খারাপ হলে ৯ তারিখে তাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। পরে সকাল সাড়ে ৭টায় আমাদের জানানো হয় রাহিম মারা গেছে।”

রাহিমের স্ত্রী দিলরুবা আক্তার বলেন, “যে দুনিয়া এবং আখিরাতের সঙ্গী, সে ছাড়া কিভাবে থাকা যায়? আর্থিকভাবে আল্লাহ যেভাবে চালাচ্ছে, আলহামদুলিল্লাহ। কিন্তু আমার স্বামী যে নাই, এটার অভাব কি টাকা পয়সা কোনো কিছু দিয়ে পূরণ করা সম্ভব! যে ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে সেটা তো আজীবন থেকেই যাবে।  স্বামী সন্তানকে নিয়ে সুন্দর জীবন যাপনের ইচ্ছে ছিলো। কিন্তু সেটা আমার ভাগ্যে ছিলো না। স্বৈরশাসকের কারণেই এটা হলো। তা না হলে হয়তো সে আরো কিছুদিন বাঁচতো। আমাদের সাথে থাকতো! উনি শহীদ হয়েছেন এখন আমার একটাই চাওয়া আল্লাহ তাকে ভালো জায়গায় রাখুক। শান্তিতে রাখুক। কবরটাকে জান্নাতের বাগান বানিয়ে দিক।”



[ad_2]

Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত