জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে শহীদ পরিবারের সদস্যদের আর্থিক সহায়তার চেক প্রদান করেছে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন। শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) খুলনা জেলা শিল্পকলা একাডেমি অডিটরিয়ামে চেক প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানে খুলনা বিভাগের ১০ জেলার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৫৮ শহীদ পরিবারকে পাঁচ লাখ টাকা করে মোট দুই কোটি ৯০ লাখ টাকার চেক প্রদান করা হয়।
জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম বলেন, ‘প্রোপাগান্ডা সেলগুলো অবস্থাকে ভিন্নভাবে প্রবাহিত করে করে নোংরা রাজনীতি করার চেষ্টা করছে কি না, আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। গুজব লীগের মতো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলো যারা হাজার হাজার কোটি টাকা দেশের মানুষের অর্থ চুরি করে বিদেশে মজুত করেছে, সেই টাকাগুলো ব্যবহার করে দেশ অরাজকতার পাঁয়তারা করছে কি না, এই অভ্যুত্থানার সঙ্গে সম্পর্কিত মানুষগুলোকে বিভিন্ন গুজবের মাধ্যমে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করছে কি না, এই জিনিসগুলো ফ্যাক্ট চেক করার মানসিকতা আমাদের রাখতে হবে। কেউ কিছু বললে বিশ্বাস করা যাবে না, সেগুলো যাচাই করতে হবে।’
শহীদ পরিবারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘এই চেক বিতরণ সবে শুরু। নির্দিষ্ট কিছু অর্থ দিয়ে এই অভাব পূরণ করা সম্ভব নয়। এই জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন, আপনারা যতদিন এই বাংলাদেশে থাকবেন এই ফাউন্ডেশনের প্ল্যাটফর্ম যতদিন থাকবে, জীবনের বিনিময় হলেও আপনাদের জন্য কাজ করে যাবো।’
তিনি আরও বলেন, ‘সবচেয়ে দায় এবং সবচেয়ে বড় দায়বদ্ধতা আমার এই প্রত্যেক শহীদ ভাইয়ের বিচার করা। খুনি হাসিনার বিচার করা। ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা এই হত্যাযজ্ঞের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। যারা অবৈধ অস্ত্র নিয়ে আমাদের ভাই-বোনদের হত্যা করেছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সবচেয়ে বড় দায়, যদি তাদের জায়গা থেকে জুলাই আন্দোলনে শহীদদের বিচার করে যেতে না পারে, তবে এটা তাদের ব্যর্থতার সবচেয়ে বড় প্যারামিটার হবে।’
স্বাগত বক্তব্যে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী কর্মকর্তা মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ বলেন, ‘এই যে মামলাগুলো হচ্ছে, কেন শহীদদের লাশ কবর থেকে উঠাতে হবে। আমরা এর আগেও বিভিন্ন হত্যা মামলার বিচার দেখেছি, যারা মৃত ছিল তাদের কবর থেকে লাশ না উঠিয়ে হত্যার বিচার করা হয়েছে। তবে কেন শহীদের লাশ উঠিয়ে শহীদ পরিবারদের অপমানিত করা হবে।’
অনুষ্ঠানে অতিথিরা বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আমরা নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। তারা জীবন দিয়ে নতুন বাংলাদেশ উপহার দিয়ে গেছেন। এ বাংলাদেশ আত্মপ্রত্যয়, দুর্বার ও সাহসের বাংলাদেশ। নতুন বাংলাদেশকে সামনে এগিয়ে নিতে হবে। এই অভ্যুত্থানের ইতিহাস নতুন বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার সংগ্রামের ফসল। ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে একটি মহল অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। অভ্যুত্থানকে বিতর্কিত করার চেষ্টা এখনও চলছে। ছাত্রদের স্পৃহা, মনের আকাঙ্ক্ষা আমাদের বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। গত ১৫ বছর সকল ক্ষেত্রে বৈষম্য ছিল। আমাদের সমাজ ও বাংলাদেশকে বৈষম্যহীনভাবে গড়ে তুলতে হলে সকল ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।’
এ ছাড়া খুলনার বিভাগীয় কমিশনার মো. ফিরোজ সরকার, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. জুলফিকার আলী হায়দার, অতিরিক্ত রেঞ্জ ডিআইজি মো. হাসানুজ্জামান, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, পুলিশ সুপার টি এম মোশাররফ হোসেন, কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মো. তারিকুল ইসলাম, আশরফা খাতুন ও মো. ওয়াহিদুজ্জামান অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
অনুষ্ঠানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের পরিবারের সদস্য, বিভিন্ন সরকারি দফতরের কর্মকর্তা, জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সদস্য, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় ও খুলনা জেলার সমন্বয়ক ও গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।