Homeদেশের গণমাধ্যমেঝুঁকি নিয়েই চলছে চার বিদ্যালয়ের পাঠদান

ঝুঁকি নিয়েই চলছে চার বিদ্যালয়ের পাঠদান


দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার চারটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে দীর্ঘদিন ধরে ক্লাস করছে। এতে একদিকে যেমন শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা হুমকির মুখে, অন্যদিকে মানসম্মত শিক্ষার পরিবেশ ব্যাহত হচ্ছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকরা দ্রুত এসব বিদ্যালয়ে নতুন ভবন নির্মাণের দাবি করেন।

সরেজমিন দেখা গেছে, উপজেলার কৌগাঁও পাঠানপাড়া, বেলপুকুর, আঙ্গারপাড়া ও পূর্ব নলবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনগুলো জরাজীর্ণ। সরেজমিন এসব বিদ্যালয়ের ভবনের ছাদে দেখা দিয়েছে ফাটল। কোথাও কোথাও প্লাস্টার খসে পড়ে বেরিয়ে গেছে মারিচা পড়া রড। সব সময় আতঙ্কে থাকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

স্থানীয় ও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভাবকী ইউনিয়নের কৌগাঁও পাঠানপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ১৯৯১ সালে প্রতিষ্ঠিত। ১৯৯৭-৯৮ অর্থবছরে এলজিইডির অর্থায়নে নির্মিত একতলা ভবনটিও এখন ভগ্নপ্রায়। দেয়াল ও ছাদ থেকে খসে পড়ছে পলেস্তারা। শিক্ষার্থীরা জানায়, জরাজীর্ণ ভবনে তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে লেখাপড়া করছে। অনেক সময় বাড়ি থেকে বাবা-মায়েরা স্কুলে আসতে নিষেধ করেন। তার পরও এমন শঙ্কার ভেতরে ক্লাস করছে তারা। স্কুলের এমন জরাজীর্ণতার কারণে কক্ষ ছেড়ে পাশেই অবস্থিত টিনশেডে ক্লাস করছে অনেকে।

প্রধান শিক্ষক ইয়াসিন আলী বলেন, ‘প্রতিদিন ভবনটি ধসে পড়ার আশঙ্কা থাকে। বহুবার লিখিতভাবে জানানো হলেও কোনো সুরাহা হয়নি।’

ভেড়ভেড়ী ইউনিয়নের বেলপুকুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ২০১৯ সালে উপজেলা প্রকৌশলী পরিত্যক্ত ঘোষণা করেন। তবুও এখানেই চলছে পাঠদান। বিদ্যালয়টিতে বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১১১।

শিক্ষার্থী সিনথিয়া আক্তার বলে, ‘ছাদ দিয়ে পানি পড়ে, দেয়াল থেকে পলেস্তারা খসে পড়ে। পড়ার চেয়ে ভয়ই বেশি লাগে।’

প্রধান শিক্ষক মীর আবুল খায়ের জানান, ‘বছরের পর বছর ধরে ভবনটি পরিত্যক্ত হলেও বিকল্প ব্যবস্থা নেই। তাই ঝুঁকি নিয়েই ক্লাস নিতে বাধ্য হচ্ছি।’

এদিকে, ১৯১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত আঙ্গারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২০৫। কিন্তু বিদ্যালয়টি রয়েছে ঝুঁকিতে। দুটি জরাজীর্ণ টিনশেড ঘর ও একটি ছোট পাকা ভবনে চলছে পাঠদান।

পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী বাবু ভূঁইয়া বলে, ‘বৃষ্টি হলে ক্লাস রুমে পানি পড়ে। বেঞ্চে বসতে পারি না। মাথায় পলেস্তারা পড়ে যাওয়ার ভয় থাকে।’

প্রধান শিক্ষক শামসুন্নাহার বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের বসার জায়গা নেই। শ্রেণিকক্ষে আলো-বাতাস প্রবাহ নেই। বর্ষাকালে টিনের ওপর বৃষ্টি পড়লে শব্দে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কথাও শোনা যায় না।’

এ ছাড়া গোয়ালডিহি ইউনিয়নের পূর্ব নলবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১৯৯৩-৯৪ অর্থবছরে নির্মিত ভবনটিতে দেখা দিয়েছে ফাটল। পলেস্তারা খসে পড়ায় ছাদ-দেয়ালের অনেক জায়গার মরিচা ধরা রড বের হয়ে গেছে। বিদ্যালয়টিতে বর্তমানে ১৩০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে।

শিক্ষার্থী মাসুদ ও সানজিদা আক্তার বলে, ‘ছাদের নিচে বসতে ভয় পাই। স্যার ও আপারা বলেন, দেয়ালের পাশে না বসতে।’

বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘দেয়াল ফেটে গেছে। ছাদে বিশাল ফাটল। প্রতিদিন আতঙ্কে ক্লাস করতে হয়। যে কোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।’

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির তালুকদার কালবেলাকে বলেন, ‘বিদ্যালয়গুলোর সমস্যা সম্পর্কে আমরা অবগত। এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে ভবন নির্মাণের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ এলেই কার্যক্রম শুরু হবে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুজ্জামান সরকার কালবেলাকে বলেন, ‘বিদ্যালয়গুলো পরিদর্শন করেছি। এরই মধ্যে নতুন ভবনের জন্য চাহিদা পাঠিয়েছি। আশা করছি খুব দ্রুত ভবনগুলোর নির্মাণ কাজ শুরু হবে।’





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত