[ad_1]
ফেনীর ফুলগাজীর আমজাদহাট সীমান্তে গড়ে উঠেছে সংঘবদ্ধ মাদক, চোরাচালান ও মানবপাচার চক্র। অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, এই চক্রের নেতৃত্ব দিচ্ছেন স্থানীয় ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও বিএনপিকর্মী রহিম উল্যাহ।
প্রতিদিন মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত উপজেলার সীমান্তবর্তী খেজুরিয়া, হাড়িপুস্করনী, বসন্তপুর, উত্তর তারাকুচা এবং ফেনাপুস্করনী এলাকায় চলে ভারতীয় পণ্য, মাদক ও গরু চোরাচালান। স্থানীয়দের দাবি, প্রতিদিন এসব রুটে কোটি টাকার লেনদেন হয়।
গত শনিবার (১৯ এপ্রিল) রাতে তারাকুচা এলাকা থেকে ভারতীয় চকলেটসহ জহির আলম রাহিম (২৫) নামে এক যুবককে আটক করে ফুলগাজী থানা পুলিশ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্থানীয় বাসিন্দা জানান, প্রতি রাতেই ১০ থেকে ২০ লাখ টাকার মদ, গাঁজা ও ইয়াবা এই রুটে প্রবেশ করে। ভোর হওয়ার আগেই এসব চলে যায় ছাগলনাইয়া, পরশুরাম ও ফেনীর বড় মাদক কারবারিদের কাছে।
তিনি বলেন, “৫ আগস্টের পর থেকে একটি প্রভাবশালী রাজনৈতিক চক্র এসব অপরাধে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। সাধারণ মানুষ ভয়ে মুখ খুলতে পারছে না।”
অভিযোগ রয়েছে, ইউপি সদস্য রহিম উল্যাহর নেতৃত্বে হাড়িপুস্করনীর সলিমুল্লাহ সলু, নবী, সোহাগ, সাইফুল, মনির, বসন্তপুরের টিপু, উত্তর তারাকুচার মাদক ডিলার খ্যাত আনোয়ার, ফেনাপুস্করনীর রুবেল ও সুজনসহ বেশ কয়েকজন এসব অপরাধমূলক কাজে জড়িত।
স্থানীয়দের অভিযোগ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখের সামনে এসব ঘটলেও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
স্থানীয় বাসিন্দা হাবিবুর রহমান বলেন, “আগে ১৫০০ টাকায় ভারত পার করে দিত, এখন একই কাজের জন্য নেওয়া হয় ২০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকেও মানুষ এসে এ সীমান্ত পাড়ি দেয়। অনেকে জড়িয়ে পড়ে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে।”
স্থানীয় জাফর ইমাম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিশ্বজিৎ মজুমদার বলেন, “এত সহজলভ্যভাবে মাদক মিলছে যে স্কুলের অপ্রাপ্তবয়স্ক শিক্ষার্থীরাও এতে জড়িয়ে পড়ছে। এখনই বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা দরকার।”
মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে ইউপি সদস্য রহিম উল্যাহ অভিযোগ স্বীকার করে বলেন, “সীমান্তে মাদক, গরু চোরাচালান, মানবপাচার সবই করি। আমাদের পেশাই এটা। ভারত থেকে পেঁয়াজ, রসুন, গরু এনে বিক্রি করি।”
এরপর সাংবাদিকের পরিচয় জানতে চেয়ে বলেন, “ঢাকা-চিটাগংয়ের সাংবাদিকদেরই গুণি না, আপনি তো হলেন ফেনীর!”
এ বিষয়ে ফুলগাজী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ফখরুল আলম স্বপন বলেন, “রহিম উল্যাহ আমাদের কর্মী হলেও কেউ অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়ালে দলে তার স্থান নেই। তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এদিকে বিজিবি তারাকুছা ক্যাম্প এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
তবে, ৪ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোশারফ হোসেন বলেন, “অপরাধী যত বড়ই হোক, ছাড় নেই। মাদক ও চোরাচালান রোধে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করা হচ্ছে। রহিম মেম্বার সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য পাওয়া গেছে। সীমান্ত চোরাচালানের ডাটাবেইজ তৈরি হচ্ছে। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সহায়তায় শিগগিরই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ফুলগাজী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ লুৎফর রহমান বলেন, “মাদক ও চোরাচালান রোধে আমাদের টহল জোরদার রয়েছে। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।”
[ad_2]
Source link