মোটর দক্ষতা বিকাশ এমন একটি প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে শিশুরা তাদের পেশি এবং শরীরের নড়াচড়া নিয়ন্ত্রণ এবং সমন্বয় করতে শেখে। এই বিকাশ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ঘটে এবং হাঁটা, লেখা, খাওয়া, এমনকি খেলাধুলার মতো দৈনন্দিন কার্যকলাপের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
মোটর দক্ষতার ধরন: ১. গ্রস (মোট) মোটর দক্ষতা—গ্রস মোটর দক্ষতার মধ্যে রয়েছে বৃহৎ পেশি গোষ্ঠী এবং পুরো শরীরের নড়াচড়া। যেমন: হামাগুড়ি দেওয়া, হাঁটা,
লাফানো, বল নিক্ষেপ ইত্যাদি। ২. ফাইন (সূক্ষ্ম) মোটর দক্ষতার মধ্যে ছোট পেশি জড়িত, বিশেষ করে হাত এবং আঙুলের সুনির্দিষ্ট কাজে এটি প্রয়োজন। যেমন: পেনসিল ধরা, শার্টের বোতাম লাগানো, জুতার ফিতা বাঁধা, কাঁচি ব্যবহার ইত্যাদি।
কখন হয়: মোটর দক্ষতা শিশুর বিভিন্ন বয়সে হয়। শিশু শূন্য থেকে দুই মাস বয়সে পেটের ওপর উপুড় থাকা অবস্থায় মাথা অল্প তুলে ধরে, হাত ও পা মসৃণভাবে নড়াচড়া করে। ২ থেকে ৪ মাস বয়সে সাহায্য ছাড়াই মাথা স্থির রাখে, পেট থেকে পেছনে গড়াতে পারে, হাত মুখের কাছে আনে,
হাত এবং চোখ একসঙ্গে ব্যবহার করে। ৪ থেকে ৬ মাস বয়সে শক্ত পৃষ্ঠে পা ঠেলে গড়িয়ে যেতে পারে, উভয় বাহু দিয়ে কোনো জিনিস স্পর্শ করে। ৬ থেকে ৯ মাস বয়সে সাহায্য ছাড়াই বসতে, হামাগুড়ি দিতে পারে, এক হাত থেকে অন্য হাতে জিনিস স্থানান্তর করে। ৯ থেকে ১২ মাস বয়সে দাঁড়াতে চেষ্টা করে, আসবাবপত্র ধরে পা তুলতে পারে।
দৃষ্টি, শ্রবণশক্তি এবং স্পর্শ: মোটর বিকাশ দৃষ্টি, শ্রবণশক্তি এবং স্পর্শের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িত। যখন একটি শিশু খেলনার দিকে হাত বাড়ায়, তখন দৃষ্টি এবং নড়াচড়ার মধ্যে সমন্বয় করে। মোটর দক্ষতা ভাষা বিকাশের সঙ্গে সম্পর্কিত। অঙ্গভঙ্গি, ইশারা হলো যোগাযোগের প্রাথমিক হাতিয়ার। মোটর দক্ষতা শিশুদের যত্নশীল এবং সহনশীল করে।
মোটর দক্ষতার পূর্ণ বিকাশ: শিশুরা যখন মাথা ঘুরিয়ে
বাবা-মায়ের হাসিমুখের দিকে তাকায়, একটি আকর্ষণীয় খেলনা ধরাতে হাত বাড়ায় এবং ঘরের মধ্যে ছোট ছোট পায়ে হাঁটার সময় ভারসাম্য বজায় রাখে, তখন তাদের মোটর দক্ষতার পূর্ণ বিকাশ প্রমাণিত হয়। চোখ ও মাথার নিয়ন্ত্রণ শিশুকে ঘটনা, বস্তু এবং পৃষ্ঠের অবস্থান সম্পর্কে জানার সুযোগ করে দেয়।
মোটর দক্ষতার বিকাশ জিনতত্ত্ব, পরিবেশ, অনুশীলন এবং অভিজ্ঞতার মিশ্রণ দ্বারা প্রভাবিত। এটি শৈশবকাল থেকে শুরু হয়ে বয়ঃসন্ধিকাল এমনকি প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায়ও অব্যাহত থাকে।
ডা. আকলিমা আক্তার
প্রভাষক, পাবলিক হেলথ
বিভাগ (চাইল্ড অ্যান্ড নিউট্রিশন)
আনোয়ার খান মডার্ন ইউনিভার্সিটি