Homeদেশের গণমাধ্যমেধোঁয়া ওঠা পিঠায় শীতের আগমনী বার্তা

ধোঁয়া ওঠা পিঠায় শীতের আগমনী বার্তা

[ad_1]

হেমন্তের সোনালি ধানের চোখ ভোলানো প্রকৃতি পেরিয়ে আসে পাতা ঝরা শীত। আর শীতের সকাল মানেই কুয়াশায় মোড়ানো প্রকৃতি আর বাড়ির উঠানে ধোঁয়া ওঠা চুলায় পিঠা তৈরির প্রস্তুতি। বাংলার শীত যেন পিঠা-পুলির উৎসবকে কেন্দ্র করে আরও আনন্দময় হয়ে ওঠে। বাঙালির এই পিঠার সংস্কৃতি প্রাচীন এবং ঐতিহ্যবাহী। গ্রাম থেকে শহর, সর্বত্রই শীতকালে পিঠার বিশেষ স্থান রয়েছে।

কিন্তু কর্মব্যস্ততার কারণে শীতকালে শহরের জীবনে পিঠার এক আলাদা আবেদন থাকে। গ্রামবাংলার উঠানে পিঠার ধোঁয়া আর সরল আয়োজন হয়তো শহরের ব্যস্ত জীবনে অনুপস্থিত, কিন্তু শহুরে মানুষের শীতকালীন পিঠার প্রতি ভালোবাসা কোনও অংশেই কম নয়। সময়ের সঙ্গে বদলে যাওয়া জীবনযাত্রার মধ্যেও শহুরে শীতের পিঠা বাঙালির ঐতিহ্যকে বহন করে চলেছে।

শহরে শীতের পিঠা মানেই রাস্তার ধারে ভ্রাম্যমাণ পিঠার দোকান। সন্ধ্যায় ধোঁয়া ওঠা চিতই পিঠার ঘ্রাণ বা গরম ভাপা পিঠার সঙ্গে আড্ডা, অফিসফেরত মানুষের জন্য এক আনন্দঘন মুহূর্ত তৈরি করে। আবার শীতের সকালে বাসায় নারকেল কুঁচি আর খেজুরের গুড় দিয়ে মায়ের তৈরি পিঠার স্বাদ শহুরে জীবনের ক্লান্তি ভুলিয়ে দেয়।

রাস্তার পাশে পিঠা বানানোতে ব্যস্ত এক বিক্রেতা

কর্মব্যস্ত মানুষকে কেন্দ্র করে শহরের ফুটপাতগুলো চলে শীতকালীন পিঠাসহ নানান খাবারের দোকান। শহরের বিভিন্ন জনাকীর্ণ মোড়ে বসে এসব দোকান। শহরের কিছু দূর যেতে চোখে পড়ে ধোঁয়া ওঠা ভাপা পিঠা, চিতই পিঠা ও মোমোর দোকান। এছাড়া শীতকালে ভাজাপোড়ার রয়েছে বিশেষ চাহিদা, পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন নকশী পিঠা ও সিদ্ধ হাঁসের ডিম।

কর্মব্যস্ত অফিস ফেরত মানুষ, শীতের ক্লান্ত বিকালে বিষণ্ণতা কাটাতে ঘুরতে বের হওয়া দম্পতি, শিক্ষার্থী-শিক্ষক, দিনমজুরসহ সব শ্রেণির মানুষ এসব দোকানের ক্রেতা। এসব আয়োজনকে কেন্দ্র করে শহুরে শীত জমতে শুরু করেছে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের।

অফিস শেষ করে ঘুরতে বেরিয়েছেন সাজিয়া-শাহজাহান দম্পতি। তারা এসেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়। ভাপা পিঠার দোকানে বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে কথা হয় তাদের। তারা জানান, দুজনই প্রাক্তন ঢাবি শিক্ষার্থী এবং চাকরিজীবী।

গরম গরম মমো পরিবেশনের জন্য চুলা থেকে নামানো হচ্ছে

শীতের পিঠা নিয়ে স্মৃতিচারণ করে সাজিয়া বলেন, ‘শীতের পিঠার সঙ্গে জড়িয়ে আছে অনেক স্মৃতি। শৈশবে মা-দাদুর হাতের পিঠার স্বাদ, গ্রামবাংলার পিঠা উৎসব, সব কিছু মনে পড়ে যায় শীতের এসব পিঠা হাতে নিলে। পিঠা ছাড়া যেন ঠিক শীত শীত অনুভূতি কাজ করে না। শহরের ব্যস্ত মানুষের জন্য এই ধরনের আয়োজন (ফুটপাতে পিঠার দোকান) আশীর্বাদ।’

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের সামনে ভাপা পিঠার দোকানে বন্ধুদের নিয়ে পিঠা খাচ্ছিলেন ঢাবি শিক্ষার্থী রায়হান শিকদার। তিনি বলেন, ‘শীতকাল মানেই খাওয়ার আয়োজন। সেটার মধ্যে অবশ্যই পিঠা চাই, সেটি না হলে জমে না। আমাদের শীতকে উপভোগ্য করতে যারা এসব আয়োজন করছেন তাদের ধন্যবাদ।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেট্রোরেল স্টেশনের নিচে মোমো খাচ্ছিলেন ফারহানা-সাদিয়া নামে দুই শিক্ষার্থী। তারা একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এখানে এক বান্ধবীর সঙ্গে আড্ডা দিতে এসেছেন। মোমো সবসময়ই তাদের পছন্দ, কিন্তু শীতের মোমো তাদের কাছে একটু বেশি স্পেশাল। বিভিন্ন রকম হাতে বানানো সস দিয়ে পরিবেশন করা হয় বলে একটু বেশিই ভালো লাগে তাদের।

শীতের আগমন শুরুর সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে সিদ্ধ ডিম বিক্রি

শীতের সঙ্গে ব্যবসা আরও জমে ওঠার প্রত্যাশা

শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এসব পিঠাপুলির চাহিদা আরও বাড়বে বলে প্রত্যাশা ফুটপাতের পিঠা বিক্রেতাদের। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ভাপা পিঠা বিক্রি করছেন সাথী আক্তার। তিনি বলেন, ‘গ্রীষ্মে লেবুর শরবত আর শীতে ভাপা পিঠা বিক্রি করে আমার সংসার চলে। আর বর্ষায় তেমন কিছু করি না। এখন প্রতিদিন সব খরচ শেষে দৈনিক পাঁচশ টাকা আয় হয়। শীত বাড়লে এই চাহিদা আরও বাড়বে আশা করি। সে সময় হাজার টাকার ওপরে আয় হতে পারে।’

মোমো বিক্রেতা অনিক হোসেন বলেন, ‘মোমো শীতকালে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়। হাতে বানানো সস দিয়ে গরম গরম মোমো শীত উপভোগ করতে অনেকেরই পছন্দ। প্রতিদিন ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা আয় হয়। শীত বাড়লে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় হতে পারে। আর বইমেলা শুরু হলে ছুটির দিনে কখনও কখনও ৫ হাজার টাকাও আয় হয়।’

ঢামেকের সামনে চিতই পিঠা বিক্রি করেন আলতাফ হোসেন। তিনি জানান, সকাল ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত এখানে পিঠা বিক্রি করেন। তাদের চার জন সদস্যের প্রত্যেকের প্রতিদিন গড়ে এক হাজার টাকার মতো থাকে। শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের চাহিদা বাড়ছে, সামনে আরও বাড়বে বলেও প্রত্যাশা তার।

শহীদ মিনার এলাকায় সিদ্ধ ডিম বিক্রি করেন জাকির হোসেন। তিনি জানান, শীত আসার পর হাঁসের ডিমের চাহিদা বাড়ছে। বর্তমান ১০০-১২০ পিস ডিম বিক্রি হয়। এতে ৪০০-৫০০ টাকা থাকে। শীত বাড়লে চাহিদাও বাড়বে। তখন হয়তো ২০০ থেকে ২৫০ পিস বিক্রি হবে। এতে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা লাভ হতে পারে।

ছবি: প্রতিবেদক



[ad_2]

Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত