লিভারপুলের ৮০’র দশকের এক ফুটবল সুপারস্টার একবার বলেছিলেন, ‘প্রথম মানে প্রথম, দ্বিতীয় মানেই কিছুই না।’ আজও এই লাইনটা একটা দলকে তাড়িয়ে বেড়ায়—আর্সেনাল।
মঙ্গলবার রাতে এমিরেটসে চ্যাম্পিয়নস লিগ সেমিফাইনালের প্রথম লেগে পিএসজির মুখোমুখি হচ্ছে আর্সেনাল। প্রতিপক্ষ ফরাসি জায়ান্টরা হলেও, আসল প্রতিপক্ষ হয়তো ভেতরেরই—সেই ‘প্রায়-প্রাপ্তির’ মানসিকতা। যে মানসিকতা আর্সেনালকে পরিণত করেছে ফুটবলের এক প্রায় দলে, যে দল শিরোপা জিতে না কিন্তু কাছে যায়।
মিকেল আর্তেতার অধীনে আর্সেনাল নিঃসন্দেহে বদলেছে। দাপুটে ফুটবল, টেকনিক্যাল স্কিল, আর তারুণ্যের দুর্দান্ত মিশেলে তৈরি হয়েছে নতুন এক ‘গানার বাহিনী’। কিন্তু প্রশ্নটা আসলে এখানেই—এই দলটা কি শুধু ‘ভবিষ্যতের চ্যাম্পিয়ন’ হয়েই থাকবে, নাকি এবারই নাম লেখাবে ইউরোপের সেরা হিসেবে?
গত কয়েক মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগে দু’বার শিরোপা হাতছাড়া, ইউরোপা ও লিগ কাপ সেমিফাইনালে হোঁচট—সবই বলে দেয়, সাফল্যের দোরগোড়ায় বারবার পৌঁছে ফিরেছে তারা খালি হাতে।
এই মৌসুমে রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে ৫-১ অ্যাগ্রিগেট জয়টা আর্সেনালের জন্য একটা বড় বিবৃতি। তারা জানিয়ে দিয়েছে, এখন আর তারা ‘শুধু অংশগ্রহণকারী’ নয়, ট্রফির দাবিদার।
মাইকেল আর্তেতা বলেই দিয়েছেন, ‘এখন সময় জয়ের। এতদূর এসেছি, এখন না জিতলে সেটাই হবে সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা।’
তবে জয় মানে কেবল মাঠে প্রতিপক্ষকে হারানো নয়—জয় মানে নিজস্ব ভয় আর অতীত ব্যর্থতাকে জিতিয়ে হারানো।
লিভারপুলও একসময় এমনই ছিল। ইয়র্গেন ক্লপের শুরুর বছরগুলোতে ইউরোপা, লিগ কাপ, এমনকি চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালেও হেরেছিল তারা। কিন্তু ২০১৯ সালে টটেনহ্যামকে হারিয়ে ইউরোপীয় শ্রেষ্ঠত্ব পাওয়ার পর খুলে গিয়েছিল ট্রফির ঝাঁপি।
আরেকদিকে, মরিসিও পচেত্তিনোর টটেনহ্যাম? হ্যারি কেইন, সন, এরিকসেনদের স্বর্ণযুগেও তারা ছিল ‘প্রায় জয়ী’—ট্রফিহীন।
বুকায়ো সাকা, ওডেগার্ড, সালিবা, ডেক্লান রাইস—এই তরুণ তারকারা সময়ের অন্যতম সেরা প্রতিভা। কিন্তু প্রতিভা যদি ট্রফি না আনে, ইতিহাসে জায়গা হয় না। আর্সেনাল যদি এবারও না পারে, তাহলে তারা থেকে যাবে শুধুই সেই ‘নির্বাণের প্রহর’-এ আটকে থাকা এক দল হিসেবে।
এই সেমিফাইনাল শুধু ১৮০ মিনিটের লড়াই নয়। এটা এক যুগান্তকারী প্রশ্নের উত্তর খোঁজার সুযোগ—আর্সেনাল কি এবার ইতিহাস গড়বে, না কি আরও একবার থেকে যাবে ‘প্রায় চ্যাম্পিয়ন’-এর শিরোনামে?
কারণ ফুটবল বলে—প্রথমই সব। দ্বিতীয় মানেই শূন্য।