নীলফামারীর ডোমার উপজেলার নাঠুয়াগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এম.এ.এম. আকতার জাহান বিউটি। প্রায় ৩৮ বছরের কর্মজীবনের শেষ দিনটি স্মরণীয় করে রাখতে সহকর্মী ও শিক্ষার্থীরা আয়োজন করেন এক আবেগঘন বিদায় সংবর্ধনার।
সহকর্মীরা তাকে ফুলে সাজানো রিকশায় করে বিদ্যালয় থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে তার বাড়ি পৌঁছে দেন। এ বিদায় দৃশ্য উপস্থিত সবার চোখে জল এনে দেয়। ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও সম্মানের এক অসাধারণ আবহে শেষ হলো একজন আদর্শ শিক্ষকের কর্মজীবনের পথচলা।
বুধবার (৩০ এপ্রিল) বিকেলে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বিদায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সহকারী শিক্ষক মো. আব্দুল মান্নান। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সুদীপ চন্দ্র শর্মা।
জানা গেছে, ২০১৮ সালে নাঠুয়াগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন বিউটি ম্যাডাম। প্রায় ৩৮ বছরের কর্মজীবনের শেষ দিনেও তিনি ক্লাস নিয়েছেন, যা শিক্ষার্থীদের মাঝে এক অনুপ্রেরণার বার্তা দেয়। অনুষ্ঠানে বিদ্যালয়ের সহকর্মী শিক্ষকসহ আশপাশের বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বক্তব্য রাখেন।
পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী সালমা আক্তার জানায়, ম্যাডাম আমাদের খুব ভালোবাসতেন, শাসন করতেন, ভালোভাবে পড়াতেন।
চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী উৎসব রায় জানায়, ম্যাডামের পড়ানোর ধরণ একেবারে আলাদা ছিল। তিনি আমাদের আদর করতেন, আবার প্রয়োজন হলে শাসনও করতেন। আমরা তাকে খুব মিস করব।”
সহকারী শিক্ষক মো. আব্দুল মান্নান বলেন, প্রধান শিক্ষক আকতার জাহান বিউটি উপস্থিতিতে বিদ্যালয়ের চিত্রই বদলে গিয়েছিল। তিনি ছিলেন সবার প্রিয়। শৃঙ্খলা, পাঠদানে আগ্রহ ও শিক্ষার্থীদের ফলাফল সবদিকেই উন্নতি হয়েছে। এমন একজন শিক্ষককে বিদায় জানানো আমাদের জন্য অত্যন্ত বেদনাদায়ক।
সহকারী শিক্ষক দীপক চন্দ্র রায় বলেন, তিনি শুধু একজন শিক্ষক নন, ছিলেন অভিভাবকের মতো। বিদ্যালয়ের যেকোনো সমস্যায় তিনি সবার আগে এগিয়ে আসতেন।
বামুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, আকতার জাহান বিউটি একজন দায়িত্বশীল, সৎ ও নিষ্ঠাবান শিক্ষক ছিলেন। তার অবদান দীর্ঘদিন ধরে এ এলাকার শিক্ষাক্ষেত্রে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সুদীপ চন্দ্র শর্মা বলেন, তিনি ছিলেন একজন আদর্শ শিক্ষক। সবসময় শিক্ষার্থীদের কল্যাণকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। সময়ানুবর্তিতা, আন্তরিকতা ও দায়িত্ববোধের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত তিনি। এমন একজন শিক্ষককে বিদায় জানানো যেমন কষ্টের, তেমনি গর্বেরও।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে বক্তব্যে এম.এ.এম. আকতার জাহান বিউটি বলেন, চাকরি জীবনে সবসময় চেষ্টা করেছি নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের। শিক্ষার্থীদের ভালোবাসা ও সাফল্যই আমার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। আজ তাদের চোখের জল আর ভালোবাসা দেখে বুঝতে পারছি আমার এ দীর্ঘ কর্মজীবন সার্থক হয়েছে। সবার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।
অনুষ্ঠান শেষে তাকে ফুলে সাজানো একটি রিকশায় করে সম্মাননা জানিয়ে বিদায় দেওয়া হয়। সহকর্মীরা তাকে রিকশায় করে বিদ্যালয় থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে তার বাড়ি পৌঁছে দেন। এ বিদায় দৃশ্য উপস্থিত সবার চোখে জল এনে দেয়। ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও সম্মানের এক অসাধারণ আবহে শেষ হলো একজন আদর্শ শিক্ষকের কর্মজীবনের পথচলা।