Homeদেশের গণমাধ্যমেমানুষের প্রাপ্য আদায়ে ইসলামের নির্দেশনা

মানুষের প্রাপ্য আদায়ে ইসলামের নির্দেশনা

[ad_1]

মানুষের মধ্যকার পারস্পরিক সম্পর্ক, লেনদেন, আচার-ব্যবহার ইত্যাদি হক বা অধিকার হিসেবে আল্লাহর পক্ষ থেকে অর্পিত। একইভাবে সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ ও মানুষের মধ্যকার সম্পর্ক, দায়িত্ব-কর্তব্যও হক বা অধিকার বলে বিবেচিত। মানুষের করণীয় হচ্ছে, স্রষ্টা ও সৃষ্টি-সবার হক ও অধিকার নিশ্চিত করা। আর এ দায়িত্বের কারণেই মানুষ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ। মানুষের ওপর অর্পিত এসব দায়িত্ব, হক বা অধিকার প্রধানত দুই ভাগে বিভক্ত—১. হাক্কুল্লাহ তথা আল্লাহর হক ও প্রাপ্য। ২. হাক্কুল ইবাদ তথা মানুষের হক ও প্রাপ্য। প্রতিটি মানুষকেই এ দুটো প্রাপ্য আদায় করতে হয় পৃথিবীতে। তাহলে পরকালে লাভ করবে প্রতিদান ও পুরস্কার।

এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হজরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.) বলেন, আমি নবী (সা.)-এর পেছনে একটি গাধার ওপর সওয়ার ছিলাম। তিনি বললেন, ‘হে মুয়াজ! তুমি কি জানো, বান্দার ওপর আল্লাহর হক কী এবং আল্লাহর ওপর বান্দার হক কী?’ আমি বললাম, ‘আল্লাহ ও তার রাসুল (সা.)-ই অধিক জানেন।’ তিনি বললেন, ‘বান্দার ওপর আল্লাহর হক এই যে, সে তার ইবাদত করবে, এতে তার সঙ্গে কোনো কিছুকে শরিক করবে না। আর আল্লাহর ওপর বান্দার হক এই যে, যে ব্যক্তি তার সঙ্গে কোনো কিছুকে শরিক করবে না, তিনি তাকে আজাব দেবেন না।’ অতঃপর আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! আমি কি লোকদের এ সুসংবাদ দেব না?’ তিনি বললেন, ‘তাদের সুসংবাদ দিও না। কেননা, তারা এরই ওপর ভরসা করে বসে থাকবে।’ (বোখারি: ২৮৫৬)

মহান আল্লাহর প্রতি মানুষের হক হচ্ছে, তার দেওয়া আদেশ-নিষেধ মেনে চলা। তার সঙ্গে কাউকে শরিক না করা। তার ইবাদত করা। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘তোমরা ইবাদত করো আল্লাহর, তার সঙ্গে কোনো কিছুকে শরিক কোরো না। আর সদ্ব্যবহার করো পিতামাতার সঙ্গে, নিকটাত্মীয়ের সঙ্গে, এতিম, মিসকিন, নিকটাত্মীয়-প্রতিবেশী, অনাত্মীয়-প্রতিবেশী, সাথী, মুসাফির এবং তোমাদের মালিকানাভুক্ত দাস-দাসীদের সঙ্গে। নিশ্চয়ই আল্লাহ পছন্দ করেন না তাদের, যারা দাম্ভিক-অহংকারী’ (সুরা নিসা: ৩৬)। আরও বর্ণিত হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তার সঙ্গে শরিক করাকে ক্ষমা করবেন না। এ ছাড়া অন্যান্য পাপ যাকে ইচ্ছা তিনি ক্ষমা করবেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে শরিক করল অবশ্যই সে চরম ভ্রষ্টতায় পথভ্রষ্ট হলো।’ (সুরা নিসা: ১১৬)

আর মানুষের হক বা অধিকার হচ্ছে—জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে ভালোবাসা, সবার সেবা করা, সাহায্য-সহযোগিতা করা। একজন মুসলিম অন্য মুসলিমের সঙ্গে দেখা হওয়া মাত্র যে হক আদায় করতে হয়, তার অন্যতম হচ্ছে সালাম ও সৌজন্য বিনিময় করা। সালাম বিনিময় শুধু একজন মুসলিমের সঙ্গে অন্য মুসলিমের হক আদায় নয়, এর মাধ্যমে সম্প্রীতি বাড়ে, শত্রুতা কমে। পরস্পরের জন্য কল্যাণের দোয়া করা হয়। পরিবার, সমাজ ও মানবসেবাও হলো হাক্কুল ইবাদের অন্যতম দিক। হাদিস শরিফে নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি দুনিয়ায় অন্যের একটি প্রয়োজন মিটিয়ে দেবে, পরকালে আল্লাহ তার ১০০ প্রয়োজন পূরণ করে দেবেন এবং বান্দার দুঃখ-দুর্দশায় কেউ সহযোগিতার হাত বাড়ালে আল্লাহ তার প্রতি করুণার দৃষ্টি দেন।’ (মুসলিম: ২৫৬৬)

মানুষের হক ও অধিকারের বিষয়টি অনেক ব্যাপক। অভাবী মানুষকে সহায়তা করা, তাদের তরে নিজেকে বিলিয়ে দেওয়া, বস্ত্রহীনকে পোশাক-আশাক দিয়ে সহায়তা করাও সওয়াবের কাজ। হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বলেন, নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘কোনো মুসলমান অন্য মুসলমানকে বস্ত্রহীনতায় বস্ত্র দিলে আল্লাহ তাকে জান্নাতের সবুজ বস্ত্র পরাবেন।’ (তিরমিজি: ২৮৩৫)। আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘যে মুসলমান অন্য কোনো মুসলমানকে বস্ত্রহীন অবস্থায় বস্ত্র দান করবে, আল্লাহ তাকে জান্নাতে সবুজ বর্ণের পোশাক পরাবেন, খাদ্য দান করলে তাকে জান্নাতের ফল খাওয়াবেন, পানি পান করালে জান্নাতের শরবত পান করাবেন।’ (আবু দাউদ: ১৭৫২)

অন্নহীনকে খাবার দেওয়াও হাক্কুল ইবাদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। হাদিসে এ প্রসঙ্গে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা ক্ষুধার্তকে খাদ্য দাও, অসুস্থ ব্যক্তির খোঁজখবর নাও, বস্ত্রহীন লোকদের বস্ত্র দাও এবং বন্দিকে মুক্ত করে দাও।’ (বোখারি: ২৪১৭)। রাসুলুল্লাহ (সা.) ক্ষুধার্তকে খাবার দান করতে কঠোর নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, ‘তোমরা ভিক্ষুককে (ক্ষুধার্ত) কিছু না কিছু অবশ্যই দাও, আগুনে পোড়া একটি খুর হলেও।’ (মুসনাদে আহমাদ: ১৬৬৯৯)। আরও বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই ওই ব্যক্তি পূর্ণ মুমিন নয়, যে নিজে পেট পুরে আহার করে। কিন্তু তার প্রতিবেশী ক্ষুধার্ত থাকে।’ (বায়হাকি: ৩৩৮৯)

মানুষের পাওনা পরিশোধ করাও অন্যতম একটি দায়িত্ব। কিছু মানুষ নামাজ-রোজা ঠিকঠাক পালন করলেও মানুষের পাওনার ব্যাপারে সচেতন নয়। অথচ এর জন্য পরকালে কঠিন অবস্থার সম্মুখীন হতে হবে।

নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি পরিশোধের নিয়তে মানুষের সম্পদ গ্রহণ করে, আল্লাহতায়ালা তার পক্ষ থেকে তা পরিশোধ করে দেন। আর যে তা বিনষ্ট করার নিয়তে গ্রহণ করে থাকে, আল্লাহ তাকে বিনষ্ট করে দেন।’ (বোখারি: ২৯১০)। আরও বলেন, ‘ঋণ পরিশোধ করা ছাড়া মৃত্যুবরণ করলে হাশরের মাঠে নিজের নেকি থেকে ঋণের দাবি পূরণ করতে হবে।’ (বোখারি: ২৪৪৯)। আরও বলেন, ‘মুমিনের আত্মা ঝুলন্ত অবস্থায় রাখা হয় তার ঋণের কারণে, যতক্ষণ তার পক্ষ থেকে ঋণ পরিশোধ করা না হয়।’ (তিরমিজি: ১০৭৮)

ইসলাম একটি মহান ধর্ম, মানবতার মুক্তি ও কল্যাণের জন্য আল্লাহর পক্ষ হতে নির্ধারিত একমাত্র জীবনাদর্শ। ইসলাম প্রদর্শন করেছে তার অনুসারীদের জন্য সঠিক পথ। ইসলামে রয়েছে অধিকার ও কর্তব্যের সুন্দর সমন্বয়। সবাইকে দেওয়া হয়েছে তার প্রাপ্য অধিকার। হজরত আবু সিরমা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি অন্য কারও ক্ষতিসাধন করে, আল্লাহতায়ালা তা দিয়েই তার ক্ষতিসাধন করেন। যে ব্যক্তি অন্যকে কষ্ট দেয়, আল্লাহতায়ালা তাকে কষ্টের মধ্যে ফেলেন।’ (তিরমিজি: ১৯৪০)।

নবীজি (সা.) আরও বলেছেন, যার কাছে তার ভাইয়ের হক রয়েছে, তা মানসম্মানের হোক বা অন্য কিছুর হোক, সে যেন আজই ক্ষমা চেয়ে নেয় (বা পরিশোধ করে মিটমাট করে নেয়)। এমন দিন আসার আগেই, যেদিন কোনো অর্থকড়ি থাকবে না। যদি ব্যক্তির কোনো নেক আমল থাকে, তা দিয়ে পাওনাদারের ঋণ বা হক শোধ করা হবে। আর যদি কোনো নেক আমল না থাকে, তাহলে পাওনাদারের বা হকদারের পাপের বোঝা সমপরিমাণ তার মাথায় দিয়ে দেওয়া হবে।’ (বোখারি)। তাই আমাদের উচিত আখিরাতে মুক্তির স্বার্থে মানুষের পাওনা পরিশোধের জন্য সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাওয়া এবং মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করা। সর্বোপরি আল্লাহর হক ও মানুষের হক উভয়টি পালনের প্রতি সর্বাত্মক সচেতনতা কাম্য।

লেখক: ইমাম ও খতিব



[ad_2]

Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত