বাংলাদেশে এত দিনের সংকট তৈরি হয়েছে ডেমোক্রেসি (গণতন্ত্র) বনাম ডিক্টেটরের (স্বৈরাচার) যুযুধান লড়াইয়ে ডেমোক্রেসিকে ‘সিস্টেমেটিক ডিক্টেটরশিপ’ (প্রাতিষ্ঠানিক স্বৈরাচার) দ্বারা পরাজিত করিয়ে। রাষ্ট্রবিজ্ঞান মোটাদাগে যে চার ধরনের স্বৈরাচারের কথা বলে, তার একটি ‘সামরিক স্বৈরাচার’, যেটি ছিলেন আইয়ুব-এরশাদ।
‘রাজকীয় স্বৈরাচার’ ছাড়া বাকি দুটি—‘একদলীয় স্বৈরাচার’ ও ‘একব্যক্তিকেন্দ্রিক স্বৈরাচার’ গত রেজিমের সঙ্গে খুব মানানসই। কিন্তু গত রেজিম ‘প্রাতিষ্ঠানিক স্বৈরাচার’ নামের একটি নতুন প্রকৃতির জন্ম দিয়েছে, যেখানে রাষ্ট্রের তামাম প্রতিষ্ঠানকে ‘যথাযথ উপায়ে’ ব্যবহার করে ক্ষমতা কুক্ষিগত করা হয়েছে।
তথাকথিত ‘নির্বাচনী গণতন্ত্র’কে কবর দেওয়া হয়েছে আইনসভায় দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতাকে ব্যবহার করে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে। সেটিও আবার ‘স্বাধীন’ বিচার বিভাগের দ্বারা আইনসিদ্ধ (লেজিটেমাইজ) করে এবং রায়কে মনগড়াভাবে সংসদে ব্যাখ্যা করে, যেন ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করা যায়।
বিচার বিভাগ যে নির্বাহী বিভাগ থেকে স্বাধীন না, তা কোটা সংস্কারের ক্ষেত্রে হাইকোর্টের রায়েই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু আরও পরিষ্কার চরিত্র বোঝা যায়, ত্বকীর কথা ভাবলে, সাগর-রুনির কথা ভাবলে, তনু কিংবা মুনিয়ার কথা ভাবলে। এ কেমন বিচারব্যবস্থা, যেখানে ‘উৎপীড়িতের ক্রন্দন রোলের’ সামনে বিচারের বাণী নিভৃতই শুধুই থাকেনি, রীতিমতো প্রহসন করেছে। সুবিচার চাইলেই জনগণ হয়ে গেছে ‘রাজাকার’।