ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামে লেখক ও নাট্যশিল্পী প্রশান্ত কুমার হালদারের বাড়ির রান্নাঘর, দরজা-জানালার সামনে মানুষের মলমূত্র রেখে আসা হতো। কয়েকবার দূর থেকে লক্ষ করে ঢিলও ছোড়া হয়েছে।
সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার (২২ মে) মধ্যরাতে বাড়িটিতে আগুন লাগিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। এতে বাড়ির প্রাচীরের মধ্যে থাকা খড়ের পালা, জ্বালানির স্তূপ ও গোয়ালঘর পুড়ে গেছে। এতে ৪ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে পরিবারের লোকজন জানিয়েছে।
আগুন লাগার খবর পেয়ে ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়িতে ছুটে আসেন লেখক প্রশান্ত হালদার। পরে শনিবার (২৪ মে) বিকেল ৩টার দিকে তিনি কালীগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দেন।
এরপরই ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা। এদিন ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান ঝিনাইদহের পুলিশ সুপার মোহাম্মাদ মনজুর মোরশেদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইমরান জাকারিয়া, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দেদারুল ইসলাম, কালীগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) মোফাজ্জেল হোসেনসহ অন্যরা। এ বিষয়ে ইউএনও দেদারুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি জানার পর শনিবার বিকেলে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। পুলিশ তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।’
গত বৃহস্পতিবার রাত ২টার দিকে রঘুনাথপুরের নাটাবাড়িয়া এলাকার হালদার বাড়িতে আগুন লাগে। এ সময় প্রতিবেশীরা আগুন দেখে কালীগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।
বাড়ির মালিক নির্মল হালদার বলেন, ‘গভীর রাতে কে বা কারা এসে বাড়ির মূল ভবনের পেছনে আগুন দেয়। তখন বাড়ির সবাই ঘুমিয়ে ছিলেন। প্রতিবেশীদের চিৎকারে তারা ঘুম থেকে উঠে দেখেন বাড়িতে আগুন লেগেছে। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। এতে বাড়ির পেছনে রাখা বিচলি (খড়), কাঠের স্তূপ ও প্রচুর খড়ি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।’
প্রশান্ত হালদারের বোন ভোরের কাগজের বিনোদন বিভাগের প্রধান শ্রাবনী হালদার রাখী বলেন, বৃহস্পতিবার গভীর রাতে তাদের বাড়িতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এরপর সকালে (শুক্রবার) তিনি ঢাকা থেকে বাড়িতে আসেন। এই বাড়িতে তার বাবা-মা, চাচা-চাচি, বড় চাচার ছেলে, তার স্ত্রী ও তাদের সন্তানরা থাকেন। প্রতিবেশীরা সহযোগিতা না করলে অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যেত।
লেখক ও নাট্যশিল্পী প্রশান্ত কুমার হালদার বলেন, তিনি স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ঢাকায় থাকেন। বাড়িতে মা-বাবা ও তার ছোট ভাই পরিবারসহ থাকেন। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে আগুনের ঘটনায় তিনি শনিবার বাড়িতে আসেন। এরপর থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছেন। আগুনে বাড়ির মূল ভবনের পেছনে থাকা বিচলি, খড়ি ও আসবাবপত্র বানানোর জন্য রাখা কাঠ পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আগুন গোয়ালঘরেও ছড়িয়ে পড়ে।
তিনি আরও বলেন, এর আগেও আমাদের বাড়ির রান্নাঘরে মানুষের মল মাখিয়ে রেখে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এছাড়াও কয়েকবার দূর থেকে দোতলা ঘর লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করার ঘটনাও ঘটেছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) ইমরান জাকারিয়া কালবেলাকে বলেন, আমরা খবর পেয়ে শনিবার বিকেলে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। আইনগত সহযোগিতা করার জন্য মামলা করার কথা বলেছি। বিষয়টি নিয়ে পুলিশ তৎপর আছে। ওই এলাকায় পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে।
কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. দেদারুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, বিষয়টি জানার পর শনিবার বিকেলে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। এ বিষয়ে পুলিশ তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।