দক্ষিণ ও মধ্য পাকিস্তানে তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে তাপমাত্রা এই সপ্তাহেই ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছাতে পারে বলে আশঙ্কা করছে আবহাওয়া বিভাগ। এমন উত্তাপ পূর্ববর্তী রেকর্ড ছুঁতে কিংবা অতিক্রম করতেও পারে বলে জানিয়েছে দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট।
বুধবার (৩০ এপ্রিল) পাকিস্তানি সংবাদমাদ্যম ডন তাদের প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত সপ্তাহে পাকিস্তানের কিছু অঞ্চলে তাপমাত্রা ৪৭.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস (প্রায় ১১৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট) পর্যন্ত উঠেছিল। আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে, বুধবার ও বৃহস্পতিবার এই তাপমাত্রা আরও বাড়বে।
২০১৮ সালে সিন্ধু প্রদেশের নবাবশাহ শহরে এপ্রিল মাসে রেকর্ড ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল—চলতি সপ্তাহে আবার সেই অঞ্চলটিকেই বিশেষভাবে নজরে রাখা হচ্ছে।
পাকিস্তান আবহাওয়া অধিদপ্তর ২৬ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত দেশটির বেশিরভাগ অঞ্চলে তাপপ্রবাহ সতর্কতা জারি করেছে। জনগণকে যথাসম্ভব ঘরের ভেতরে থাকার এবং পর্যাপ্ত পানি পানের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ভয়াবহ উত্তাপ মধ্যপ্রাচ্য থেকে দক্ষিণ এশিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত উচ্চচাপ বলয়ের অংশ, যা এক প্রকার ‘ঢাকনা দেওয়া পাত্রে আটকে থাকা উত্তাপের’ মতো আচরণ করছে।
এই তাপপ্রবাহ শুধু পাকিস্তানেই নয়, বরং ভারত, ইরান, সৌদি আরব, ইরাক, সুদান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ ২০টির বেশি দেশে চরম প্রভাব ফেলছে।
জানা গেছে, এই তাপপ্রবাহের প্রভাবে তুর্কমেনিস্তান ও উজবেকিস্তানসহ মধ্য এশিয়ার দেশগুলোতেও সপ্তাহের শেষভাগে ভয়াবহ গরম পড়তে পারে।
বিশ্বখ্যাত আবহাওয়াবিদ ম্যাক্সিমিলিয়ানো হেরেরা বলেছেন, নবাবশাহের ২০১৮ সালের রেকর্ড এখনো এশিয়ার এপ্রিল মাসের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা হিসেবে টিকে আছে। তবে এবার সেটি ভাঙার আশঙ্কা প্রবল।
ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর মিড-রেঞ্জ ওয়েদার ফোরকাস্টের মডেল অনুযায়ী, পাকিস্তানে বুধবার ও বৃহস্পতিবার তাপমাত্রা ৪৯ থেকে ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠতে পারে।
এদিকে, ২০২৫ সালের এপ্রিল মাস বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে রেকর্ড ভাঙা উষ্ণতা নিয়ে হাজির হয়েছে। ইরাক ১১৫°F, ইরান ও সংযুক্ত আরব আমিরাত-এও একই মাত্রার উত্তাপ রেকর্ড হয়েছে। তুর্কমেনিস্তান এখন পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে গরম স্থানগুলোর একটি হিসেবে উঠে এসেছে।
বৈশ্বিকভাবে, ২০২৫ সালের প্রথম তিন মাস ছিল ইতিহাসের দ্বিতীয় উষ্ণতম সময়কাল, যা ২০২৪ সালের সর্বোচ্চ উষ্ণতার রেকর্ডকে ঘিরে উদ্বেগ আরও বাড়িয়েছে। চলতি বছর লা নিনা আবহাওয়ার প্রভাব সত্ত্বেও বিশ্বজুড়ে গড় তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় অনেকটাই বেশি।
জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞরা হুঁশিয়ার করেছেন, এই ধরণের চরম তাপপ্রবাহ অদূর ভবিষ্যতে আরও ঘন ঘন এবং ভয়াবহ হবে, যদি না বিশ্বব্যাপী কার্বন নির্গমন হ্রাসে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়।