স্বচ্ছতার সঙ্গে বিচারক নিয়োগ করতে হবে বলে দাবি জানিয়েছেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ও বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। তিনি বলেন, আমাদের সুস্পষ্ট দাবি, স্বচ্ছতার সঙ্গে বিচারক নিয়োগ করতে হবে। একটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে। সেই অধ্যাদেশের বিষয়ে হাইকোর্ট শুনানি শেষে কয়েকটি পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন। আমরা কিন্তু এখনও জানি না কী পর্যবেক্ষণ। আগে পর্যবেক্ষণ দেখবো আমরা। অধ্যাদেশের মেরিট আদালত বিচারাধীন।’
বুধবার (৭ মে) ‘বৈষম্যবিরোধী আইনজীবী সমাজের’ ব্যানারে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের সামনে এক সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি।
‘ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার দোসর আইন কর্মকর্তাদের পদত্যাগ ও অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় বিচারপতি নিয়োগের প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও আইনজীবী সমাবেশ’ শিরোনামে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে কায়সার কামাল বলেন, এর মধ্যে শুনছি বিচারক নাকি নিয়োগপ্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। আমি বিশ্বাস করতে চাই, যা শুনেছি তা অসত্য। যে অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে, সেই অধ্যাদেশটা পরীক্ষা–নিরীক্ষা হাইকোর্ট বিভাগ করেছেন। পরীক্ষার ফলাফল দেখে রিভিশন রিভিউ করা যাবে। তার আগেই যদি সেই অধ্যাদেশের আলোকে বিচারক নিয়োগ দেওয়া হয়, তাহলে কিন্তু আইনজীবী সমাজ মেনে নেবে না।’
জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, ‘অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে বর্তমান শাসনব্যবস্থা তথা সরকার সত্যিকার অর্থে শেখ হাসিনা এবং তাদের দোসরদের বিচার চায় না। কারণ, যে শেখ হাসিনাকে বিদায় করতে হাজার হাজার ছাত্র-জনতা রক্ত দিয়েছিল, সেই শেখ হাসিনার সমর্থনপুষ্ট, মদতপুষ্ট এবং শেখ হাসিনার অন্ধভক্ত আজকে রাষ্ট্রের যারা বিচার কর্মকর্তা অনেকে কিন্তু সেখানে (আইন কর্মকর্তা হিসেবে) নিয়োগ পেয়েছেন এবং আগের থেকে এখন পর্যন্ত বহাল তবিয়তে আছেন।’
ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, ‘যার বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেই অভিযুক্তের বিপক্ষে যিনি যুক্তি উপস্থাপন করবেন, অর্থাৎ রাষ্ট্রপক্ষ সেই রাষ্ট্রপক্ষই যদি শেখ হাসিনার সমর্থনপুষ্ট আইনজীবী আইন কর্মকর্তা হন, তাহলে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কি কোনও বিচার হবে? এখন কিন্তু তাই দেখতে পাচ্ছি। অনেক কর্মকর্তা ছাত্রলীগ করতেন, যুবলীগ করতেন, আওয়ামী লীগ করতেন। আওয়ামী লীগের অনেক জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের জুনিয়র ছিলেন। তারা কিন্তু এখনও ওই ভবনে (অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের ভবনের দিকে ইঙ্গিত দিয়ে) বহাল তবিয়তে বসে আছেন। আমরা সুস্পষ্টভাবে দাবি জানাচ্ছি, অবিলম্বে তাদের পদত্যাগ করতে হবে অথবা আইন মন্ত্রণালয় আপনিও জানেন তাদের বরখাস্ত করুন। অন্যথায় আইনজীবীরা কিন্তু সচিবালয় পর্যন্ত যাবে।’
সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সিনিয়র আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘আমরা শুনছি, ওই দিকে বিচারক নিয়োগপ্রক্রিয়া চালু হয়ে গেছে। কায়সার কামাল বলেছেন, মামলা বিচারাধীন রয়েছে। তার আগে গোপনে গোপনে আপনারা কাদেরকে নিয়োগ করছেন? ওই যেভাবে ল অফিসার (আইন কর্মকর্তা) নিয়োগ করছেন, সেভাবে? আইনজীবীরা সেটা হতে দেবে না।’
জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সুপ্রিম কোর্ট ইউনিটের আহ্বায়ক সিনিয়র আইনজীবী এম বদরুদ্দোজা বাদল সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন। অন্যান্যের মধ্যে বাংলাদেশ আইন সমিতির আহ্বায়ক মনির হোসেন, ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ আলী, সাংগঠনিক সম্পাদক গাজী কামরুল ইসলাম বক্তব্য দেন। সঞ্চালনায় ছিলেন ফোরামের সুপ্রিম কোর্ট ইউনিটের সদস্যসচিব গাজী তৌহিদুল ইসলাম।