[ad_1]
ইমাম বোখারি (রহ.) ইসলামী জ্ঞান ও হাদিস শাস্ত্রের এক অনন্য ও উজ্জ্বল নক্ষত্র। তার পুরো নাম মুহাম্মদ ইবনে ইসমাইল ইবন ইবরাহিম ইবন মুগিরা ইবন বারদিজবা আল-বোখারি। তিনি ১৯৪ হিজরি মোতাবেক ৮১০ খ্রিষ্টাব্দে মধ্য এশিয়ার খোরাসান অঞ্চলের (বর্তমান উজবেকিস্তানের অন্তর্গত) বোখারা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। বোখারা ছিল তখনকার যুগের জ্ঞান-বিজ্ঞান ও সভ্যতার অন্যতম কেন্দ্র। ইমাম বোখারির পিতা ইসমাইল ছিলেন একজন ধর্মভীরু ও মুহাদ্দিস ব্যক্তি, যিনি ইমাম মালেক (রহ.)-এর ছাত্র ছিলেন। ছোটবেলায় ইমাম বোখারি তার পিতাকে হারান। তার মাতা ছিলেন একজন পরহেজগার ও বুদ্ধিমতী নারী, যিনি একা সন্তানদের লালনপালন করেন।
ইমাম বোখারির কিশোরবেলাতেই জ্ঞানের প্রতি গভীর আগ্রহ দেখা যায়। তিনি দশ বছর বয়সে হাদিস মুখস্থ করতে শুরু করেন এবং মাত্র ষোলো বছর বয়সে প্রায় ষোলো হাজার হাদিস মুখস্থ করে ফেলেন। জ্ঞান অর্জনের জন্য তিনি মক্কা, মদিনা, মিশর, ইরাক, শাম, বসরা, কুফা, বাগদাদ, নেশাপুর ইত্যাদি বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করেন।
ইমাম বোখারি ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী, সংযমী ও সতর্ক একজন মুহাদ্দিস। হাদিস সংগ্রহ ও যাচাইয়ের ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন কঠোর নিরীক্ষক। কোনো বর্ণনাকারীর চরিত্র, স্মরণশক্তি ও আমানতদারিতা যাচাই না করে তিনি কোনো হাদিস গ্রহণ করতেন না। তার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কীর্তি হলো ‘সহিহুল বোখারি’, যা ইসলামের দ্বিতীয় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ হিসেবে গণ্য করা হয়, কেবল কোরআনের পরেই। তিনি প্রায় ছয় লাখ হাদিস সংগ্রহ করেছিলেন, যার মধ্য থেকে কঠিন যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে মাত্র ৭ হাজার ২৭৫টি হাদিস বেছে নেন (পুনরাবৃত্তিসহ) এবং এগুলোকে ‘সহিহ’ বা বিশুদ্ধ হিসেবে লিপিবদ্ধ করেন।
সহিহ বোখারিতে হাদিস নির্বাচন কেবল বর্ণনাকারীর শুদ্ধতা বা স্মরণশক্তির ওপর নির্ভর করে নয়, বরং তার সনদের ধারাবাহিকতা, কথার মিল এবং অন্যান্য সহিহ সূত্রের সঙ্গে সামঞ্জস্যের ওপরও নির্ভর করত। ইমাম বোখারির এ কঠোরতা ও সতর্কতা তাকে হাদিস শাস্ত্রে ‘আমিরুল মুমিনীন ফিল হাদিস’ বা ‘হাদিসে মুমিনদের নেতা’ উপাধি এনে দেয়। তার অন্যান্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে, ‘আদাবুল মুফরাদ’, ‘আত-তারিখুল কাবির’, ‘আস-সহিহুস সগির’ এবং আরও অনেক মূল্যবান কিতাব। তিনি কেবল হাদিস বিশারদই ছিলেন না, বরং ছিলেন একজন সাধক, মুত্তাকি ও দুনিয়াবিমুখ আলেম।
তার জীবনের শেষ সময়ে তিনি অনেক কষ্ট ও জুলুমের সম্মুখীন হন। কিছু হিংসুক আলেম ও রাজনীতিকের কারণে তাকে বোখারা থেকে বের করে দেওয়া হয় এবং তিনি নেশাপুর ও সামরকন্দের আশপাশে ঘুরে বেড়াতে থাকেন। অবশেষে তিনি খর্তাং নামক এক ছোট্ট গ্রামে অবস্থান করেন এবং সেখানেই ২৫৬ হিজরি (৮৭০ খ্রিষ্টাব্দ) ইন্তেকাল করেন।
ইমাম বোখারির অবদান কেবল ইসলামী জ্ঞানের জগতে নয়, বরং মানব ইতিহাসে এক বিরল মেধা, সততা ও কর্মনিষ্ঠার অনন্য উদাহরণ। তার রচনাবলি আজও কোটি কোটি মুসলমানের ইমান ও আমলের ভিত্তি হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে।
[ad_2]
Source link