Homeদেশের গণমাধ্যমেস্মরণীয় মুসলিম মনীষী | কালবেলা

স্মরণীয় মুসলিম মনীষী | কালবেলা

[ad_1]

ইমাম আবু আবদুল্লাহ মুহাম্মাদ ইবনে ইদরিস আশ-শাফেয়ি (রহ.) ছিলেন ইসলামী ফিকহ ও হাদিসশাস্ত্রের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ইমাম। তিনি আহলুস সুন্নাহর চার ইমামের অন্যতম এবং শাফেয়ি মাজহাবের প্রতিষ্ঠাতা। তার জন্ম হিজরি ১৫০ সনে গাজা নগরীতে (বর্তমান ফিলিস্তিন) এবং তার মৃত্যুও হয় হিজরি ২০৪ সনে মিশরের কায়রো শহরে। আশ্চর্যজনকভাবে, ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-এর ওফাতও একই বছরই হয়েছিল, যেটা ছিল হিজরি ১৫০।

ইমাম শাফেয়ি কোরাইশ বংশের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন এবং তার বংশানুক্রমিক সম্পর্ক ছিল রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে। তার পিতা ইদরিস ইবনে আব্বাস ছিলেন একজন ধার্মিক ব্যক্তি, কিন্তু ইমাম শাফেয়ি খুব ছোট অবস্থায়ই পিতৃহারা হন। এরপর তার মা তাকে নিয়ে মক্কায় চলে আসেন। সেখানেই তার প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয়। তিনি খুব অল্প বয়সেই কোরআন হিফজ সম্পন্ন করেন এবং আরবি ভাষা ও কাব্যচর্চায় পারদর্শী হয়ে ওঠেন।

শৈশব থেকেই ইমাম শাফেয়ির জ্ঞানচর্চার প্রতি প্রবল আগ্রহ ছিল। তিনি তৎকালীন সময়ের বড় বড় আলেমের সংস্পর্শে আসেন এবং তাদের কাছ থেকে ইলম হাসিল করেন। তিনি মক্কায় মালিকি মাজহাব অধ্যয়ন করেন এবং এরপর মদিনায় গিয়ে ইমাম মালিক ইবনে আনাস (রহ.)-এর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। ইমাম মালিক তার প্রতি এতটাই স্নেহ ও আস্থা রাখতেন যে, তিনি ইমাম শাফেয়িকে ‘মুত্তাকি যুবক’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন এবং নিজের বিখ্যাত কিতাব মাওয়াত্তা মুখস্থ করিয়ে দেন।

ইমাম শাফেয়ি শুধু হাদিস ও ফিকহ-বিদ্যায় দক্ষ ছিলেন না, বরং তিনি একজন দক্ষ ভাষাবিদ ও কবিও ছিলেন। তার আরবি ভাষার জ্ঞান ছিল অত্যন্ত গভীর ও সুবিন্যস্ত। তিনি নানা ভাষাবিজ্ঞানী ও বেদুইন কবিদের সঙ্গে সময় কাটিয়ে ভাষার মর্ম বোঝেন।

তার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময় তিনি ইয়েমেন, বাগদাদ ও পরে মিশরে অতিবাহিত করেন। বাগদাদে তিনি ইমাম মুহাম্মদ ইবনে হাসান শায়বানি (রহ.)-এর সান্নিধ্যে আসেন, যিনি ছিলেন হানাফি মাজহাবের প্রধান প্রবক্তা ও ইমাম আবু হানিফার শিষ্য। সেখান থেকে তিনি হানাফি ফিকহের সঙ্গে পরিচিত হন এবং পরবর্তীকালে নিজের মতাদর্শ গঠনে উভয় মাজহাবের গুণাবলিকে বিবেচনায় নেন।

ইমাম শাফেয়ি (রহ.)-এর ফিকহ চিন্তাধারা ছিল যুক্তিনির্ভর এবং কোরআন-সুন্নাহভিত্তিক। তিনি ‘উসুলুল ফিকহ’ নামে একটি নতুন শাস্ত্রের ভিত্তি স্থাপন করেন, যা ইসলামী আইন ব্যাখ্যার মূলনীতি নির্ধারণ করে। তার সবচেয়ে বিখ্যাত গ্রন্থ ‘আর-রিসালা’ ও ‘আল-উম্ম’, যেখানে তিনি তার ফিকহি মতাদর্শ, যুক্তির প্রয়োগ ও হাদিস বিশ্লেষণ পদ্ধতি তুলে ধরেছেন।

ইমাম শাফেয়ি এমন এক যুগে বেঁচে ছিলেন, যখন মুসলিম সমাজে বিভিন্ন চিন্তাধারার সংঘর্ষ চলছিল। কিন্তু তিনি তার গভীর জ্ঞান, সহনশীলতা ও পরিশীলিত বিতর্কের মাধ্যমে সম্মান অর্জন করেন। তার মৌলিকত্বের জন্য তাকে ‘নাসিরুস সুন্নাহ’ (সুন্নাহর সহায়ক) উপাধিতে ভূষিত করা হয়।

হিজরি ২০৪ সনে ৫৪ বছর বয়সে তিনি কায়রোতে ইন্তেকাল করেন। তাকে মিশরের ফুশাত নামক স্থানে দাফন করা হয়। পরবর্তীকালে সেখানে তার স্মরণে একটি বড় মাজার নির্মিত হয়, যা আজও মুসলিমবিশ্বে শ্রদ্ধার প্রতীক।

ইমাম শাফেয়ি (রহ.) শুধু একজন ফকিহ নন, বরং তিনি মুসলিম চিন্তাজগতে এক যুগান্তকারী ব্যক্তিত্ব। তার সাধনা, নিরলস অধ্যয়ন ও যুক্তিনির্ভরতা পরবর্তী প্রজন্মের আলেমদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে আছে।



[ad_2]

Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত