Homeদেশের গণমাধ্যমে১০ টাকার পানেই মা বেশ খুশি হয়ে যান

১০ টাকার পানেই মা বেশ খুশি হয়ে যান


বড় আপু মিতুল ছিলেন আম্মুর আশার বাতি। আব্বু ২০০৭ সালে মারা গেলেন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে। তারপর বড় আপু ও আম্মু আমাদের তিন বোনকে আগলে নিলেন।

২০১০ সালের ৮ ডিসেম্বর বাসায় আপুর লাশ এসেছে রাত ১০টায়। দাফন শেষে সবাই যখন ক্লান্তিতে ঘুমাচ্ছে, তখন ঠিক রাত ৩টার দিকে আম্মু মিতুল মিতুল বলে চিৎকার করে বলছিলেন, “আমার মিতুল একা ঘুমাতে ভয় পায়, ও কবরে একা কিভাবে আছে? আমাকে মিতুলের কাছে নিয়ে চলো।” সেদিন প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, বড় আপুর স্বপ্ন পূরণ করে আম্মুকে ভালো রাখব। 

নিজের পিছনে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ আমি নিজেই করেছি, শুধু আমার মায়ের জন্য। ২০১৬ সালে হুট করে আম্মুর জরায়ুর মধ্যে ক্যান্সারের জীবাণু পাওয়া গেছে- এমন একটি রিপোর্ট দেখে আমরা দিশেহারা।

আম্মু পিতাহারা সন্তানদের মুখের দিকে তাকিয়ে নির্বাক। সেদিন ভাত খেতে বসে আম্মু আর আমি দুজনেই কান্না করছিলাম। আমাদের চোখের পানিতে ভাত ভিজে যাচ্ছে, তবে কেউ কাউকে কিছু বলছি না।

সে যাত্রায় আম্মু রক্ষা পেলেন। আমি ২০২১ সালে প্রথম একটা ছোট্ট চাকরিতে যোগ দেই। বেতন খারাপ না, এটা মধ্যবিত্তদের জন্য সোনায় সোহাগা ধরা যায়।

আমার নতুন ব্যাগভর্তি কচকচে ২০টা ৫০০ টাকার নোট এনে আম্মুকে দিলাম। আম্মুর ছোট্ট মেয়েটা বড় হচ্ছে ভেবে আম্মু খুশি। আমিও খুশি, কারন আজ আম্মুর পায়ের স্যান্ডেলটা বদলে দিয়েছি। দীর্ঘদিন একই স্যান্ডেল জোড়া দিয়ে টেনে যাচ্ছিলেন নিজেকে, সে যাত্রা শেষ হয়েছে এবার।

আম্মুর হাসির জন্য হাজার টাকা খরচ করতে হয় না। মাঝেমধ্যে ১০ টাকার পান নিয়ে যাই, তাতেই বেশ খুশি হয়ে যান। প্রফেশনাল পানখোর না তিনি, তবে মাঝেমধ্যে ছোট বোনের সঙ্গে পান খান আর আমরা গল্প করি।

আমার চোখের মাঝে একটা লাল চিহ্ন আছে, আয়নায় যখন তাকাই তখন সেই চিহ্নের ফলে আমি নিজের মধ্যে মিতুল আপুকেই দেখি। সেদিন এক্সিডেন্টে আপু মারা না গেলে আজ আমার জায়গায় মিতুল আপু থাকত, আর আমি নীল হতে পারতাম দিশেহারা এক কবি। যে জীবনের স্বপ্ন আমি দেখি, সেই জীবন আমি যাপন করতে পারতাম, বোহেমিয়ান হতাম।

(লেখক: শিক্ষার্থী, চতুর্থ বর্ষ, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, নোয়াখালী সরকারি কলেজ)

 





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত