তাহমিনা অথৈ। পরিচিতি পান মিস ইউনিভার্স বাংলাদেশ প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়ে। রূপে, গুণে, স্বভাবে অমায়িক এই অভিনেত্রী বেশ প্রচারবিমুখ। সোশ্যাল মিডিয়াতেও খুব একটা সরব নন তিনি। অথৈ কাজের মাধ্যমেই চেনাতে চান নিজেকে। প্রচারের আড়ালে থেকে তিনি গড়ে তুলছেন এক শক্ত ভিত, অভিনয়ে নিপুণতা, আত্মপ্রকাশে পরিণত বোধ। তাহলে কি প্রচারবিমুখ এই সুন্দরী প্রস্তুত হচ্ছেন নতুন কোনো বিস্ময়ের জন্য?
অথৈ পড়াশোনা করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগে। সে কারণে অভিনয় বিষয়টা তিনি ভালো ভাবেই বোঝেন। কম কাজ করলেও খুব বাছাই করে গল্প লুফে নেন তিনি। তবে কাজের আপডেট ছাড়া তার সোশ্যাল মিডিয়ায় তেমন স্বরূপ পদচারণা দেখা যায় না।
এ বিষয়ে কালবেলা প্রতিবেদককে অথৈ বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় অ্যাক্টিভ থাকার সঙ্গে তো নায়িকার কোনো সম্পর্ক নেই। অভিনয়টা আমার প্রফেশন এবং ওটা আমার প্রোফাইল। প্রোফাইল মানে একটা মানুষের ব্যক্তিসত্তা চেনার উপায়। সেটা এত পাবলিসিটি করার কিছুই নেই। কারণ আমার যা কাজ আসছে সেটা তো মানুষ জানছেই। আমি নিজের পারসোনাল জীবনের চেয়ে কাজটাকে বেশি প্রাধান্য দিই।
প্রথম অভিনয়ের অভিজ্ঞতা নিয়ে এই সুন্দরী বলেন, আমার প্রথম অভিনয় শুরু হয় নির্মাতা সাইদুল আনাম টুটুলের পরিচালনায় নির্মিত সিনেমা কালবেলা দিয়ে। তখন আমি ক্যামেরা ভালো জানতাম না, কোন অ্যাঙ্গেল থেকে ভালো লাগবে সেটা জানতাম না। মানে নতুন হিসেবে টোটাল ইউনিটটা তখন বুঝতাম না। ফ্রেশার হিসেবে প্রথম অভিনয় করার অনুভূতিটা একেবারেই অন্যরকম ছিল।
অভিনেত্রীর এ পর্যন্ত করা সেরা কাজগুলো সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেরা কাজ কোনগুলো, সেটা আসলে আলাদা করে বলা যাবে না। কারণ আমার প্রতিটি কাজেই ভালো লাগার বিষয়টি আছে। ভালো না লাগলে তো কাজই করা হতো না।
নাটক, সিনেমা, ওটিটি সব মাধ্যমেই সমানতালে কাজ করেছেন তাহমিনা অথৈ। তবে কোন মাধ্যমে কাজ করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন—এ বিষয়ে জানতে চাইলে অথৈ বলেন, সিনেমা ও ওটিটিতে কাজ করতে বেশি ভালো লাগে আমার। কারণ সিনেমা ও ওটিটিতে অ্যারেঞ্জমেন্ট অনেক বড় থাকে, ছবির গল্পে অভিনয় করে অনেক মজা পাওয়া যায়। এ ছাড়া বড় পর্দায় যখন কাজ করি তখন নিজের না পারা বিষয়গুলো চোখে পড়ে। আর যখন নিজের কাজগুলো ফের দেখি, তখন ওই চরিত্রগুলোর ভুল থেকে শিক্ষা নিই।
এদিকে চলতি বছরে মুক্তি পায় তাহমিনা অথৈ অভিনীত ওয়েব সিরিজ ফেউ। এ সিরিজের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘অভিজ্ঞতা একেবারেই অন্যরকম। আমার অন্য চরিত্রগুলো থেকে এই চরিত্রটা একেবারেই ভিন্ন। দীর্ঘ সময় ধরে প্রস্তুতি নিতে হয়েছে। ওজন বাড়াতে হয়েছে, রোদে পুড়তে হয়েছে। আমি সুনীতা চরিত্রে অভিনয় করেছি, এই চরিত্রের জার্নিটা এত সহজ ছিল না। চরিত্রের অনেক ছায়া ছিল। পরিচালক ন্যাচারাল অভিনয় চেয়েছেন। আমি চেষ্টা করেছি। গত বছর শীতে আমরা শুটিংয়ে ছিলাম। শুটিং হয়েছে সুন্দরবন। আমরা লঞ্চে থাকতাম। কুমিরের ভয়, বাঘের ভয় সবমিলিয়ে এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা হয়েছে।
এ সিরিজটি পরিচালনা করেছেন সুকর্ণ শাহেদ ধীমান। তাহমিনা অথৈ ছাড়াও চঞ্চল চৌধুরী, তারিক আনাম খান, মোস্তাফিজুর নূর ইমরান, তানভীর অপূর্ব, হোসেন জীবন, রিজভি রিজু, ফাদার জোয়া, বাবলু বোস ও একে আজাদ সেতু অভিনয় করেছেন এ সিরিজে।
বর্তমানে অথৈ একটি ওয়েব ফিল্মে অভিনয় নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন এবং বেশ কয়েকটি প্রজেক্ট নিয়ে নির্মাতাদের সঙ্গে কথা বলছেন। তবে আসন্ন ওয়েব ফিল্ম নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি এই অভিনেত্রী।
এদিকে ভবিষ্যৎ কাজের পরিকল্পনা প্রসঙ্গে অথৈ বলেন, ‘যদি ভালো চরিত্র, গল্প পেয়ে যাই, তাহলে আবার ফিরে আসব নতুন কোনো চরিত্র হয়ে, কারও জীবনের কথা বলতে। কঠোর পরিশ্রম দিয়ে নিজেকে আন্তর্জাতিক পর্যায় নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে আছে।’ আমি কেবল করে গেলাম, কোনো প্রতিক্রিয়া পেলাম না, এ ধরনের কাজের কোনো সার্থকতা আমার কাছে নেই, যা-ই করি, সেখানে নিজের ছাপ রাখতে চাই। অভিনয় দিয়ে নিজেকে আলাদাভাবে প্রমাণ করতে চাই। বিষয়টা যদিও সহজ নয়, কিন্তু আমার মতো করে চেষ্টা করে যাচ্ছি।’