Homeবিনোদনজন্মের পরই কানে বেজেছিল বাবার তবলার তাল, খ্যাতিতে বাবাকেও ছাড়িয়ে গেছেন জাকির

জন্মের পরই কানে বেজেছিল বাবার তবলার তাল, খ্যাতিতে বাবাকেও ছাড়িয়ে গেছেন জাকির

[ad_1]

প্রয়াত হয়েছেন প্রখ্যাত তবলাবাদক জাকির হোসেন। যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকোর একটি হাসপাতালে মারা যান তিনি। তাঁর পরিবার আজ সোমবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। জাকির হোসেন ভারতের পাশাপাশি বিশ্ব দরবারেও অন্যতম শ্রদ্ধেয় সংগীতশিল্পী। তাঁর অসাধারণ দক্ষতা এবং সংগীতে অবদান তাঁকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে খ্যাতি এনে দিয়েছে।

জাকির হোসেনের বাবা প্রখ্যাত তবলাবাদক ওস্তাদ আল্লা রাখা। বাবার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে জাকির হোসেন বলেছিলেন, তাঁর জন্মের পর তাঁর বাবা তাঁর কানে প্রার্থনা না শুনিয়ে তবলার তাল শুনিয়েছিলেন। সেই যে যাত্রা শুরু, তার পর আর তাঁকে পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। একের পর এক দারুণ কাজ করে নিজে তুলে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়।

জাকির হোসেন ১৯৫১ সালের ৯ মার্চ মুম্বাইয়ে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ওস্তাদ আল্লা রাখার জন্ম ছিল জম্মুতে। জাকির হোসেন মুম্বাইয়ের মাহিমের সেন্ট মাইকেলস স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে এবং সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। উস্তাদ জাকির হোসেন ১৯৮৮ সালে পদ্মশ্রী, ২০০২ সালে পদ্মভূষণ এবং ২০২৩ সালে পদ্মবিভূষণ সম্মান পান।

জাকির হোসেনের সংগীতজীবন কয়েক দশক বিস্তৃত এবং তাঁর প্রভাব ভারতের ঐতিহ্যবাহী তবলা সংগীতের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। তাল-ছন্দের নিপুণ শিল্পী হিসেবে তিনি নিজের প্রতিভা প্রদর্শন করেছেন এবং বিভিন্ন ঘরানায় তাঁর অসাধারণ সহযোগিতার জন্য প্রশংসিত হয়েছেন।

জাকির হোসেনের জন্ম ভারতের এক ঐতিহাসিক সংগীত পরিবারে। শৈশব থেকেই তিনি তাঁর পিতা বিখ্যাত তবলাবাদক ওস্তাদ আল্লা রাখার অধীনে প্রশিক্ষণ শুরু করেন। তাঁর সংগীতযাত্রা শুরু হয় ১৯৭০—এর দশকে। এই সময় থেকেই তাঁর কাজের পরিধি ভারত ছেড়ে বিশ্ব মঞ্চেও পৌঁছে যায়।

জাকির হোসেনের ডিস্কোগ্রাফি ছন্দ ও সুরের এক অনন্য মিশ্রণ। এই বিষয়টি মূলত একজন শিল্পী হিসেবে তাঁর প্রতিভার বহুমুখিতাকেই তুলে ধরে। ১৯৭০—এর দশকেই তাঁর প্রথম অ্যালবামগুলো প্রকাশিত হয়। এই সময়ে গিটার শিল্পী ব্রিজভূষণ কাবরার সঙ্গে ‘পারফেক্ট পার্টনারশিপ—গিটার অ্যান্ড তবলা (১৯৭৮) ’ এবং বসন্ত রাইয়ের সঙ্গে ‘ইভিনিং রাগাস (১৯৭৯) ’ তাঁর উল্লেখযোগ্য কাজ।

ওস্তাদ জাকির হোসেন ও তাঁর বাবা ওস্তাদ আল্লা রাখা। ছবি: সংগৃহীত

ওস্তাদ জাকির হোসেন ও তাঁর বাবা ওস্তাদ আল্লা রাখা। ছবি: সংগৃহীত

১৯৮০—এর দশকে জাকির হোসেন ‘ফুটপ্রিন্টস ইন দ্য স্কাই (১৯৮১) ’, ব্রিজভূষণ কাবরার সঙ্গে ‘দ্য ম্যাজিক অব মিউজিক (১৯৮২) ’, সারেঙ্গি শিল্পী সুলতান খানের সঙ্গে ‘সুর তাল (১৯৯১) ’ অ্যালবামগুলো প্রকাশ করেন। এগুলোতে তবলার জটিল তাল ভারতীয় বাদ্যযন্ত্রের ধ্বনির সঙ্গে মিশে এক অনন্য শৈলী তৈরি করে।

২০০৭ সালে প্রকাশিত হয় ‘গ্লোবাল ড্রাম প্রজেক্ট’। এটি জাকির হোসেন মার্কিন পারকাশনিস্ট মিকি হার্টের সঙ্গে মিলে তৈরি করেন। এটি তাঁর সংগীতের বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রদর্শন করে। এই অ্যালবামটি গ্র্যামি পুরস্কারও জেতে এবং বিশ্ব সংগীতে তাঁর অগ্রণী ভাবনার স্বীকৃতি পায়। পরে ২০০৯ সালে প্রকাশিত ‘দ্য মেলোডি অব রিদম’ এবং ২০১৯ সালে এবং ২০১৯ সালে ‘গুড হোপের’ মতো অ্যালবামগুলো তাঁর নিজের শিকড়ে থেকেও সংগীতে বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গির নতুন সীমানা অনুসন্ধানের প্রতিফলন।

জাকির হোসেন হরিপ্রসাদ চৌরাশিয়া, রবিশঙ্কর এবং পণ্ডিত জসরাজের মতো বিখ্যাত ভারতীয় সংগীতশিল্পীদের সঙ্গেও কাজ করেছেন। উল্লেখযোগ্য প্রকাশনাগুলোর মধ্যে রয়েছে—রাগ আহির ভৈরব (২০২০) এবং দ্য রিদম এক্সপেরিয়েন্স (১৯৯২)। প্রতিটি রচনায় তিনি তবলার প্রাচীন ঐতিহ্যকে ধারণ করলেও জ্যাজ, বিশ্বসংগীত এবং চলচ্চিত্রের সাউন্ডট্র্যাকের মতো নতুন প্রভাবও গ্রহণ করেছেন।

জাকির হোসেনের অবদান চলচ্চিত্র সংগীতেও উল্লেখযোগ্য। তবলার জটিল তাল চলচ্চিত্রের সুরে নিপুণভাবে যুক্ত করার তাঁর দক্ষতা তাঁকে একজন খ্যাতিমান সংগীতশিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে। তিনি ‘ইন কাস্টডি (১৯৯৩) ’ এবং ‘দ্য মিস্টিক ম্যাসিউর (২০০২) ’—এর মতো সিনেমার সাউন্ডট্র্যাক তৈরি করেছেন। এই সাউন্ডট্র্যাকগুলো কাহিনির আবেগময় গভীরতাকে আরও সমৃদ্ধ করেছে। ২০১৪ সালে ‘হাজির—২’ অ্যালবামের মাধ্যমে জাকির হোসেন ঐতিহ্যবাহী ভারতীয় তালকে নতুনভাবে উপস্থাপন করেন। তাঁর চলচ্চিত্রের কাজ প্রমাণ করে যে সংগীতের মাধ্যমে আবেগকে ফুটিয়ে তোলা তাঁর এক বিরল গুণ।



[ad_2]

Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত