[ad_1]
বাংলাদেশের প্রখ্যাত বর্ষীয়ান অভিনেত্রী দিলারা জামান। জীবনের বিরাশি বসন্ত পার করেছেন, তবুও এখনো হার মানেননি বয়সের কাছে। যেন বয়স তার কাছে নিতান্ত একটি সংখ্যা মাত্র। একুশে পদকপ্রাপ্ত এ অভিনেত্রী এখনো বাছাইকৃত নাটক-সিনেমায় নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছেন। সম্প্রতি কাজ করেছেন রুমান রুনি পরিচালিত ‘সবুজ গ্রাম পাথরের শহর’ নামক একটি নাটকে। নাটকটির সেট থেকে বর্ণাঢ্য জীবন ও কাজ নিয়ে কালবেলার সঙ্গে কথা হয় এ কিংবদন্তি অভিনেত্রীর।
অভিনয়ের সেকাল-একাল নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার বয়স এখন ৮২ বছর। এ দীর্ঘ জীবনে অনেক কিছুই দেখেছি। আমি যখন অভিনয় শুরু করি তখন মুসলিম মেয়েরা কাজ করতে পারত না। সেসব বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে যুদ্ধ করতে করতে এতদূর এসেছি। কিছু পাওয়ার জন্য নয় বরং ভালোবাসা থেকে কাজ করেছি। আমরা যখন কাজ করেছি তখন অভিনয়কে কেউ জীবিকা হিসেবে নেওয়ার কথা স্বপ্নেও চিন্তা করেনি। এখন অভিনয়ের ওপর পড়াশোনা হয়, সমাজে সম্মানিত হয়। সত্যিই অনেকদূর এগিয়ে গেছি।’
আগের মতো নাটক না হওয়ার কারণ সম্পর্কে এ অভিনেত্রী বলেন, ‘আসলে সারা পৃথিবী এখন বদলে গেছে। আমাদের রুচিও এখন বদলে গেছে। আগে আমরা যেভাবে কাজ করেছি, জীবন যেমন সহজ ছিল, এখন তো তা নয়। সবাই বলে, নাটকের মান কমে গেছে, আগের মতো নাটক হয় না। আমি তখন হাসি। আগের মতো হওয়ার কোনো কারণ তো আমি দেখি না। কেননা আগে একটি টেলিভিশন ছিল, বিনোদনের একমাত্র মাধ্যম। এবং সেই মাধ্যম নিয়েই সবাই সন্তুষ্ট থাকত। কিন্তু বিনোদন এখন আমাদের নিজেদের পছন্দের মতো করে হাতের মুঠোয়। জানালা খুলে দেওয়া, সারা পৃথিবীর সবকিছু আমাদের সামনে। সুতরাং তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করেই আমাদের এগোতে হয়। পাশ্চাত্যের ভালো দিকগুলো আমরা গ্রহণ করব এবং যা আমাদের সংস্কৃতি ও জীবন পরিপন্থি তা বর্জন করব।’
কী ধরনের কাজ হওয়া উচিত জানতে চাইলে দিলারা জামান বলেন, ‘জীবন এখন অনেক কঠিন। রুদ্ধশ্বাস গতিতে সবাই ছুটে চলেছে। পরিবার ভেঙে যাচ্ছে। বাবা-মায়ের সঙ্গে সন্তানের দেখা হয় না। এ কঠিন অবস্থার মধ্যে আমি মনে করি আমাদের সংস্কৃতি এবং সংস্কৃতির বিরাট ভূমিকা পালনকারী নাটকের মাধ্যমে এ প্রজন্মের যারা ভিন্ন জীবনযাপনে উদগ্রীব হয়ে আছে, তাদের আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি, পরিবার, সমাজে একটু একটু করে ফিরিয়ে আনতে হবে। শুধু হইহুল্লোড় আর সুড়সুড়ি দিয়ে হাসানোর মতো কাজ আমি চাই না। আমি চাই রুচিসম্মত বিনোদন থাকবে, তাতে জীবনের কথা, মানুষের কথা থাকবে। মোবাইল ফোনের ব্যস্ততায় আমাদের চারপাশের মানুষদের দেখার সুযোগ নেই। সেখান থেকে ফেরাতে শুধু শিল্পী নয়, সমাজের সবারই ভূমিকা আছে। একটি অপ্রিয় কথা হলো, এখন যে নাটক খুব অল্প সংখ্যক মানুষের কথা চিন্তা করেই নাটকগুলো হয়। কিন্তু নাটকে তো বিস্তৃত প্রতিবাদের ভাষার কথা। পাশ্চাত্যের প্রভাবে আমরা সমাজব্যবস্থা, জীবনবোধকে হারিয়ে ফেলছি। সুতরাং আমাদের নিজস্ব ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনতে হলে নাটকে পরিবার ফিরিয়ে আনতে হবে।’
অভিনয় শিল্পীদের দায়িত্বশীলতা নিয়ে এ কিংবদন্তি অভিনেত্রী বলেন, ‘আমরা যা করব, নতুন প্রজন্ম তা শিখবে। শুধু নীতিকথা নয়, কাজ করতে হবে আর কাজের প্রতি সৎ থাকতে হবে। আসলাম, কাজ করলাম, টাকা নিয়ে চলে গেলাম, একদিন না একদিন বিবেকের কাছে প্রশ্ন রাখতে হবে যে আমি কী করেছি, কী দিয়েছি সমাজকে! আমাকে যা বলা হবে তাই আমি করব কি না, সে রুচিবোধ তৈরি করতে হবে। প্রতিবাদের ভাষাটা থাকতে হবে। আমার তো আর সময়ও নেই, শক্তিও নেই।’
বর্তমানে কী কাজ করছেন জানতে চাইলে অভিনেত্রী জানান, “বর্তমান প্রজন্মের বাবা-মা, পরিবার, গুরুজনদের প্রতি শ্রদ্ধা-ভক্তি কমে আসছে। সে বিষয় নিয়ে একটি নাটক ‘সবুজ গ্রাম পাথরের শহর’ এ কাজ করছি। এটি বৈশাখী টেলিভিশনে প্রচার হবে। যদিও গ্রাম, সবুজ সব আমরা হারিয়ে ফেলছি পাথরের গ্রাম করে ফেলছি। জীবনের বাস্তবতায় গ্রামের মানুষও আর সহজ-সরল নেই। এ কঠিন জীবনের মধ্যেও একটু হাসি, ঠাট্টা, মায়া, মমতা, প্রেমের মধ্যে জীবনকে পাই। আমি মনে করি, দর্শক নাটকটিকে উপভোগ করবেন। নাটকের সবাই আপ্রাণ চেষ্টা করেছে নিজ নিজ চরিত্রকে রূপায়ণ করতে। পরিচালকও ধীরেসুস্থে কাজটা করছেন। আমি এই নাটকে ‘মোমেনা’ নামে একটি চরিত্র, তিনি একটি পরিবারের বটবৃক্ষের মতো পরামর্শ দেন, শাসন করেন, প্রতিবাদ করেন আবার স্নেহ-মায়া ছড়িয়ে দেন।”
নিজের জীবনে প্রাপ্তি নিয়ে অভিনেত্রী বলেন, “আমার প্রাপ্তি হলো দর্শকের ভালোবাসা। শুধু দেশ নয়, বিদেশেও যখন কেউ দেখে এগিয়ে আসে—সেটাই আনন্দ। কবির কথায় শুধু শেষ কথা বলব, ‘সেই হোক মোর পরিচয়, আমি তোমাদেরই লোক’। আমি সবার ভালোবাসা নিয়ে বাঁচতে চাই, আর কিছুই চাই না। এটাই আমার শেষ প্রাপ্তি।”
[ad_2]
Source link