বাংলা সংগীতাঙ্গনের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র নিভে গেল। বরেণ্য সংগীতশিল্পী, গবেষক ও লেখক মুস্তাফা জামান আব্বাসী আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। আজ শনিবার সকালে রাজধানীর বনানীর একটি হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন এই প্রথিতযশা শিল্পী। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর।
তাঁর মেয়ে শারমিনী আব্বাসী গণমাধ্যমকে মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন। পারিবারিক সূত্র জানায়, বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় তিনি দীর্ঘদিন ধরে ভুগছিলেন। গতকাল শুক্রবার শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আজ ভোর সাড়ে ৫টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
বড় মেয়ে সামিরা আব্বাসী ফেসবুকে এক পোস্টে বাবার সঙ্গে তোলা এক ছবি শেয়ার করে এই ক্যাপশন লিখে— ‘আমার সোনার চান পাখী .. আর দেখা হবে না?’
মুস্তাফা জামান আব্বাসী উপমহাদেশের বিখ্যাত সংগীত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা আব্বাসউদ্দীন আহমদ ছিলেন বাংলা পল্লিগীতির কিংবদন্তি শিল্পী, যিনি এই ধারার সংগীতকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত করে তুলেছিলেন। তাঁর চাচা আব্দুল করিম ছিলেন ভাওয়াইয়া ও ভাটিয়ালি ধারার জনপ্রিয় শিল্পী। বড় ভাই মোস্তফা কামাল ছিলেন একজন খ্যাতিমান আইনবিদ এবং ভাতিজি নাশিদ কামাল নিজেও খ্যাতিমান শিল্পী। তাঁর বোন ফেরদৌসী রহমান দেশের সংগীতাঙ্গনে এক বহুমাত্রিক প্রতিভা হিসেবে সুপরিচিত।
১৯৩৬ সালের ৮ ডিসেম্বর ভারতের কোচবিহার জেলার বলরামপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন মুস্তাফা জামান আব্বাসী। শৈশব ও কৈশোরকাল কাটে কলকাতায়। পারিবারিক সূত্রে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল তাদের।
শিক্ষাজীবন শুরু হয় কলকাতায়। পরে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫৯ সালে বিএ (অনার্স) এবং ১৯৬০ সালে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন।
সংগীতে গভীর অনুরাগী এই শিল্পী সংগীতচর্চা, গবেষণা ও সাহিত্য রচনায় নিজস্ব ধারা গড়ে তোলেন। বেতার ও টেলিভিশনে সংগীতবিষয়ক বহু অনুষ্ঠান পরিচালনা করেছেন। একই সঙ্গে তিনি ছিলেন এক সুপ্রতিষ্ঠিত কলাম লেখক, যিনি সংগীত ও সংস্কৃতিবিষয়ক লেখনীর জন্য পাঠকের কাছে নন্দিত।
বাংলা সংগীতের ইতিহাসে মুস্তাফা জামান আব্বাসী একটি অবিচ্ছেদ্য অধ্যায় হয়ে থাকবেন। তার মৃত্যুতে দেশ হারাল এক জ্ঞানী, শিল্পমনস্ক এবং সংস্কৃতিসাধককে।