নিত্যনতুন আইডিয়া, বুদ্ধিদীপ্ত নির্মাণ আর প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় হলিউড প্রতিনিয়ত চমকে দেয় সিনেমাপ্রেমীদের। ভিউজ্যুয়াল ইফেক্ট ছাড়া শুধু চর্বিত চর্বণে এখন আর দর্শকের মন ভরানো যায় না। বিশ্বের সবচেয়ে বড় সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি হলিউডে কোটি কোটি ডলার ব্যয়ে নির্মিত সিনেমাগুলো বিশ্বব্যাপী মুক্তির পর বক্স অফিসে তোলপাড় করে। এখন পর্যন্ত সাতটি সিনেমা ২ বিলিয়ন ডলারের কোটা ছাড়িয়ে গেছে। টাকার অঙ্কে যা ২৫ হাজার কোটির বেশি। এর মধ্যে শীর্ষে থাকা ‘অ্যাভাটর’-এর আয় ৩ বিলিয়নের কাছাকাছি। ভাবা যায়! সর্বকালের সবচেয়ে ব্যবসা সফল সিনেমার তালিকায় দেখা যায় ডিসি ও মার্ভেলের সুপারহিরোদের রাজত্ব। তবে সম্প্রতি হলিউড রাজত্বে ভাগ বসিয়েছে চীনা রূপকথার অ্যানিমেটেড ফিল্ম ‘নে ঝা ২’। হলিউডের সর্বকালের সেরা বক্স অফিস কাঁপানো ২ বিলিয়ন ডলার আয় করা সিনেমা নিয়েই এ আয়োজন। লিখেছেন মাজেদ হোসেন টুটুল
১. অ্যাভাটার (২.৯৩ বিলিয়ন)
জেমস ক্যামেরনের অনবদ্য সৃষ্টি বিজ্ঞানভিত্তিক কল্পকাহিনির ‘অ্যাভাটার’ মুক্তি পায় ২০০৯ সালে। অত্যাধুনিক ভিউজ্যুয়াল ইফেক্টের ব্যবহার মুভিপ্রেমীদের মুগ্ধ করে। সিনে দুনিয়ার সব রেকর্ড তছনছ করে সর্বকালের সেরা হিসেবে উঠে আসে। একদল লোভী মানুষ আর নিরীহ প্যানডোরাবাসীর মধ্যে এক অসম যুদ্ধ নিয়ে নির্মিত ‘অ্যাভাটার’ ২.৯৩ বিলিয়ন ডলার আয় করে। টাকার হিসাবে প্রায় ৩৫ হাজার কোটির মতো। ‘অ্যাভাটারে’ মূল চরিত্রে অভিনয় করেন স্যাম ওর্থিংটন, জোয়ি সালডানা, স্টিফেন ল্যাং ও মিচেলে রড্রিগেজ।
২. অ্যাভেঞ্জার্স: এন্ড গেম (২.৮১ বিলিয়ন)
বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা ও আয়ের শীর্ষে থাকা সিনেমার তালিকায় মারভেলের সুপারহিরোদের রাজত্ব। ‘অ্যাভেঞ্জার্স’ সিরিজের এই সিনেমা ২০১৯ সালে মুক্তি পাওয়ার পর দুনিয়া কাঁপিয়ে দেয়। দ্রুতই সেরা ব্যবসা সফল সিনেমার তালিকায় জায়গা করে নেয়। ‘অ্যাভেঞ্জারস: এন্ড গেম’ ২.৮১ বিলিয়ন ডলার আয় করে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে। সিনেমায় দেখা যায়, মহাবিশ্বের অর্ধেক জীবনকে বিচ্ছিন্ন করার থানোসের ষড়যন্ত্র রুখে দিতে ফের ঐক্যবদ্ধ হয় সুপারহিরো অ্যাভেঞ্জারস গ্রুপ।
৩. অ্যাভাটার: দ্য ওয়ে অব ওয়াটার (২.৩২ বিলিয়ন)
একটি সাধারণ গল্পে অসাধারণ ভিজ্যুয়াল প্রদর্শনী ‘অ্যাভাটার: দ্য ওয়ে অব ওয়াটার’। ২.৩২ বিলিয়ন ডলার আয় করা জেমস ক্যামেরনের এই মুভির ভিজ্যুয়ালি এফেক্ট হলিউডে এর আগে দেখা যায়নি। ভিজ্যুয়ালের ক্ষেত্রে নতুন মানদণ্ড তৈরি করেছেন পরিচালক। ২০২২ সালে বিশ্বব্যাপী মুক্তি পাওয়ার পর সিনেদর্শক বিমোহিত হয়ে পড়ে প্যানডোরা গ্রহের বাসিন্দাদের জীবনসংগ্রাম কাহিনির নতুনত্ব দেখে। নেইতিরি ও নাভি আর্মিকে নিয়ে জ্যাক তার পরিবার ও সম্প্রদায়কে রক্ষা করার সংগ্রামে নামে। প্যানডোরার অসাধারণ দুনিয়ায় প্রবেশ করা মাত্র চোখ ধাঁধিয়ে যেতে বাধ্য দর্শকের।
৭. অ্যাভেঞ্জার্স: ইনফিনিটি ওয়ার (২.০৫ বিলিয়ন)
সুপারহিরোদের প্রতি আকর্ষণ বরাবরই প্রবল। সুপারহিরোর দল অ্যাভেঞ্জার্সের ওপর ভিত্তি করে নির্মিত এই সিনেমা মারভেল স্টুডিওজ দ্বারা প্রযোজিত এবং ওয়াল্ট ডিজনি মোশন পিকচার্স দ্বারা পরিবেশিত। ২০১৮ সালে মুক্তি পেয়ে দুনিয়াজুড়ে সিনেমাটি আয় করে ২.০৪৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আয়রনম্যান, থর, হাল্কসহ বাকি অ্যাভেঞ্জার্স তাদের প্রবল পরাক্রমশালী শত্রু থানোসের সঙ্গে লড়াই করার জন্য একত্রিত হয়।
৪. টাইটানিক (২.২৬ বিলিয়ন)
‘টাইটানিক’ নামটি শুনলেই অনেকে নস্টালজিক হয়ে পড়েন, চোখের সামনে ভেসে ওঠে রোজ-জ্যাকের গভীর প্রেমের বিয়োগাত্মক পরিণতি। ১৯৯৭ সালে মুক্তি পেয়েছিল রোমান্টিক প্রেমের অমর এই সিনেমা। ওই সময় সিনেমাটি ২.১৮৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করে। ২ বিলিয়নের ঘরে প্রবেশ করা প্রথম সিনেমা এটি। বিখ্যাত পরিচালক জেমস ক্যামেরনের এই সিনেমায় মূল চরিত্রে অভিনয় করেন লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিও ও কেট উইন্সলেট। আয়ের হিসেবে চতুর্থ সেরা সিনেমা হিসেবে রাজত্ব করছে প্রেম, ভালোবাসা আর আবেগের এই মহাআখ্যান।
৫. নে ঝা ২ (২.২০ বিলিয়ন)
চীনা অ্যানিমেটেড ব্লকবাস্টার ‘নে ঝা ২’ নিয়ে এ মুহূর্তে তোলপাড় সিনেপাড়া। মুক্তির আগে আলোচনায় না থাকলেও বিশ্বের সর্বকালের সেরা আয় করা সিনেমার তালিকায় স্থান করে নেয় এটি। এখন পর্যন্ত ২.১৯৯ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে। অ্যানিমেটেড এই সিনেমায় উঠে এসেছে চায়নিজ রূপকথার গল্প। ১৬ শতকের চীনা উপন্যাস ‘দ্য ইনভেস্টিচার অফ দ্য গডস’ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নির্মিত হয় ‘নে ঝা ২’। ইউরোপ ও জাপানে মুক্তি পেলে এটি বিশ্বের সেরা আয় করা সিনেমা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
৬. স্টার ওয়ারস-৭: দ্য ফোর্স অ্যাওয়াকনেস (২.০৭ বিলিয়ন)
মহাকাব্যিক কল্প-বৈজ্ঞানিক চলচ্চিত্র ‘স্টার ওয়ারস ৭: দ্য ফোর্স অ্যাওয়ারনেস’ ২০১৫ সালে মুক্তি পায়। এটির পরিচালনা, চিত্রনাট্য রচনা এবং সহ-প্রযোজনায় ছিলেন জে জে অ্যাব্রামস। ফ্র্যাঞ্চাইজির সপ্তম সিনেমাটি বিশ্বব্যাপী তুমুল দর্শকনন্দিত হয়ে ২.০৭ বিলিয়ন ডলার ঘরে তুলে নেয়। এতে অভিনয় করেন হ্যারিসন ফোর্ড, মার্ক হামিল, ক্যারি ফিশার, অ্যাডাম ড্রাইভার, ডেইজি রিডলি প্রমুখ। সিনেমায় গ্যালাকটিক সাম্রাজ্যের উত্তরসুরি ফার্স্ট অর্ডার এবং এর নেতা কাইলো রেনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে দেখা যায়।
মুভির নাম সাল বাজেট (ডলারে) গ্রোস আয় (ডলারে)
১. অ্যাভাটার ২০০৯ ২৩৭ মিলিয়ন ২.৯৩২ বিলিয়ন
২. অ্যাভেঞ্জার্স: এন্ড গেম ২০১৯ ৩৫৬ মিলিয়ন ২.৮০১ বিলিয়ন
৩. অ্যাভাটার: দ্য ওয়ে অব ওয়াটার ২০২২ ৪৬০ মিলিয়ন ২.৩২২ বিলিয়ন
৪. টাইটানিক ১৯৯৭ ২০০ মিলিয়ন ২.২৫৭ বিলিয়ন
৫. নে ঝা ২ ২০২৫ ৮০ মিলিয়ন ২.১৯৯ বিলিয়ন
৬. স্টার ওয়ারস-৭: দ্য ফোর্স অ্যাওয়াকনেস ২০১৫ ৪৪৭ মিলিয়ন ২.০৭১ বিলিয়ন
৭. অ্যাভেঞ্জার্স: ইনফিনিটি ওয়ার ২০১৮ ৩১৬ মিলিয়ন ২.০৪৮ বিলিয়ন