Homeমতামতছাত্রলীগের কাদের গ্রেপ্তার করা উচিত?

ছাত্রলীগের কাদের গ্রেপ্তার করা উচিত?

মহান স্বাধীনতা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী সবচেয়ে প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগ। এই ছাত্রলীগকে বর্তমানের অরাজনৈতিক, অসাংবিধানিক ও অবৈধ সরকার নিষিদ্ধ করেছে। নিজের বৈধতা না থাকলেও ড. ইউনূসের সরকার ছাত্র সংগঠনটিকে অবৈধ ঘোষণা করেছে। অথচ অবলীলায় রাজনীতি করার অধিকার দেওয়া হচ্ছে স্বাধীনতাবিরোধী জামাতের ছাত্র সংগঠন শিবিরকে।

নিষিদ্ধ করার পরই ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামনুসন্নাহার হলের সভাপতি উর্মি এবং সূর্যসেন হলের সাংগঠনিক সম্পাদককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রাজশাহীতে এক ছাত্রলীগ নেত্রীকে মারধর করে পুলিশে দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া দেশের বিভিন্ন জেলায় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। ছাত্রলীগের যারা অন্যায় করেছে বা অন্যায় কাজের সঙ্গে যুক্ত এবং সহযোগিতা করেছে তাদের গ্রেপ্তারে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু বৈষম্যবিরোধী সমাজে এখানেও বৈষম্য করা হচ্ছে। এসব ছাত্রলীগ নেতা গ্রেপ্তার হলেও সমন্বয়ক সারজিস আলম এবং ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় শিবিরের সেক্রেটারি এস এম ফরহাদের কথা মুখেও আনছে না কেউ। অথচ তারাও ছাত্রলীগের সহযোগী। তারা ছাত্রলীগের ‘ফ্যাসিবাদী’ (তাদের ভাষায়) কর্মকান্ডে সহায়তা করেছে। এবার তাদের পরিচয় সম্পর্কে জানা যাক।

কোটা আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলমের সঙ্গে আগে থেকেই সখ্য ছিল ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের। তাদের দুজনের বাড়িই পঞ্চগড় জেলায়। বিগত ডাকসু নির্বাচনের সময় সারজিসকে অমর একুশে হল সংসদে ছাত্রলীগের প্যানেলে সদস্য পদ দিয়েছিলেন সাদ্দাম। এছাড়া সারজিসকে পঞ্চগড় জেলা ছাত্রকল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক পদে বসাতেও ভ‚মিকা ছিল ছাত্রলীগ সভাপতির। কোটা আন্দোলনের শুরু থেকেই সাদ্দাম হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করেছে অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম।

এমনকি তাকে নানা দিকনির্দেশনাও দিয়েছেন সাদ্দাম। এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ৫৮ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে সাদ্দাম ও সারজিস দুজনেই হাত ধরে হাসিমুখে কথা বলে। সেখানে সাদ্দাম বলেন, ‘আন্দোলনে জনদুর্ভোগ কমাতে হবে। তোমরা কর্মসূচি করো, ক্যাম্পাসে কর্মসূচি করো।’ সারজিসও তখন সাদ্দামের কথায় সায় দিচ্ছিল। দৈনিক কালবেলার এই প্রতিবেদন থেকে এটা স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায় যে সারজিস ছাত্রলীগের একজন সক্রিয় কর্মী। যদিও পরে তার বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগ পাওয়া যায়।

ছাত্রলীগ নিয়ে তার বিরুদ্ধে বিতর্কের সময় তার বক্তব্য ছিল এরকম : ২০১৯ সালে ডাকসু ইলেকশনে আমি ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে হল সংসদে ইলেকশন করি। ছাত্রলীগের প্যানেলের ১৩ জনের মধ্যে ৭ জন নির্বাচিত হয়েছিলো। ৬ জন স্বতন্ত্র থেকে ছিল। স্টুডেন্টদের কাছে যাদের গ্রহনযোগ্যতা ছিল তারাই নির্বাচিত হয়েছিলো। সদস্যদের মধ্যে আমি সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছিলাম। ইভেন ভিপি জিএসের চেয়েও বেশি ভোট পেয়েছিলাম।

একুশে হল আর এফএইচ হলে যে সবচেয়ে সুন্দর ও স্বচ্ছ ভোট হয়েছিলো সেটা তখনকার কাউকে জিজ্ঞেস করলেই জানতে পারবেন। সে লিখেছে, ফেসবুকে ২টা ছবি দেখছি। একটা ২০১৯ সালে হল ছাত্রলীগের কোনো প্রোগ্রামের। হলের টিভি রুমে ডায়েসের সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলার ভঙ্গিতে তোলা। তখনকার সময় অনুযায়ী জুনিয়র হিসেবে এসব শখ করে তোলা। সবাই তোলে। অন্য ছবিটি ক্রিকেট টুর্ণামেন্টের ম্যান অব দ্যা সিরিজ ট্রফি নেওয়ার সময়। ঢাবি-পঞ্চগড় এসোসিয়েশন আয়োজিত ওই প্রতিযোগিতায় সাদ্দাম ভাই অতিথি ছিল। যেহেতু তার বাড়ি পঞ্চগড়ে এবং তখন তিনি ডাকসুর এজিএস ও ঢাবির সেক্রেটারি। ২০২২ সালের এপ্রিলে আমি ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে সরে আসি। আমার বাবা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত।

ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সেক্রেটারি জেনারেলের পরিচয় জানা যায় গত সেপ্টেম্বরে। এস এম ফরহাদ নামের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের এই শিক্ষার্থী থাকতো বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি জসীমউদ্দীন হলে। সে ছাত্রলীগেরও পদধারী ছিল। সে ২০২২ সালের নভেম্বরে ঘোষিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। কবি জসীমউদ্দীন হল ডিবেটিং ক্লাবের একটি ইফতার অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কারিগরি শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক এস এম রাকিব সিরাজীর সঙ্গে ফরহাদের একটি ছবি এবং তানভীর হাসানকে ফরহাদের ফুল দেওয়ার আরেকটি ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। ফরহাদ পরে অস্বীকার করে যে সে ছাত্রলীগ করতো। সে জানতো না যে তাকে পদ দেওয়া হয়েছে। অথচ ছাত্রলীগ নেতাদের সাথে তার ছবিই প্রমাণ যে সে সংগঠনটির কর্মী। যদিও পরে সেও বেইমানির খাতায় নাম লিখিয়েছে।

ছাত্রলীগের পদে শিবির নেতারা থাকলে ছাত্রলীগের অপকর্মের দায় জামাত কেন নেবে না?- এমন প্রশ্ন রেখেছেন জনপ্রিয় উপস্থাপক খালেদ মুহিউদ্দিন। বাস্তবে তো সেটাই হওয়া উচিত। এরই মধ্যে নজর কেড়েছে সমন্বয়ক সারজিস আলমের একটি স্ট্যাটাস। সে বলেছে, ছাত্রলীগের অনেকেই কোটাবিরোধী আন্দোলনে ছিল। তাদের সবাইকে গণহারে গ্রেপ্তার করা উচিত হবে না। আমি এটা সমর্থন করি না। সংক্ষিপ্ত আকারেই মোদ্দা কথা বললাম। কিন্তু সারজিস হঠাৎ কেন ছাত্রলীগের পক্ষে সাফাই গাইলেন।

যে সারজিসকে ছাত্রলীগ তথা দেশের সচেতন মানুষ মীর জাফর বলে আখ্যা দিচ্ছে, তারপরও সারজিস কেন ছাত্রলীগের কিছু মানুষকে বাঁচাতে চাইছে তা বোধগম্য নয়। না কী সারজিসের এমন গোপন কোনো তথ্য আছে যা ফাঁস হওয়ার ভয় করছে সে। আইন সবার জন্য সমান হলেও ছাত্রলীগের অন্য নেতাদের মতো সারজিস এবং ফরহাদের মতো আরো যারা আছে তাদেরকেও গ্রেপ্তার করা উচিত।

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত