বিদ্যমান সংবিধান জনগণের গণতান্ত্রিক সংবিধান না। এটা একটা অবৈধ সংবিধান বলে মন্তব্য করে বর্তমান সংবিধান বাতিলের দাবি জানিয়েছেন জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সম্পাদক ফয়জুল হাকিম। তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে নিয়ে এসে এবং ফ্যাসিবাদের দোসরদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তার সরকারি বাসভবন যমুনায় সংলাপ শেষে শনিবার (১৯ অক্টোবর) সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
ফয়জুল হাকিম বলেন, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল ও জাতীয় গণফ্রন্টের পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টার আমন্ত্রণে তার সঙ্গে আমরা সংলাপে বসেছিলাম। আমরা সুস্পষ্টভাবে সরকারকে বলেছি— ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে ভারত থেকে নিয়ে এসে ফ্যাসিবাদের দোসরদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা পরিষ্কারভাবে বলেছি, প্রশ্ন তুলেছি যে, কীভাবে এরা পালিয়ে গেলো? আমরা প্রশ্ন তুলেছি, যারা এই ছাত্র-শ্রমিকের গণঅভ্যুত্থানে শহীদ হয়েছেন, আহত হয়েছেন, পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন— তাদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা করতে হবে এবং আবাসন চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
ফয়জুল হাকিম বলেন, জনগণের হাতে ক্ষমতা আনার জন্য জনগণের সরকার এবং সংবিধান প্রতিষ্ঠার জন্য এখানে সংবিধান সভার একটা নির্বাচন করতে হবে। কারণ আমরা মনে করি, বিদ্যমান সংবিধান জনগণের গণতান্ত্রিক সংবিধান না। এটা একটা অবৈধ সংবিধান।
তিনি বলেন, আমরা বলেছি আজকে বাজারি শোসনে জনগণের জীবন দিশেহারা। সুতরাং, সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে হবে এবং বাজারের দর নিয়ন্ত্রণের জন্য পূর্ণ রেশনিং চালু করতে হবে। প্রয়োজনীয় বাজেট থেকে টাকা কেটে এখানে নিয়ে আসতে হবে। যাতে দরিদ্র ও সাধারণ মানুষকে আজকে রেশনিংয়ের মাধ্যমে বাজারকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। আমরা পরিষ্কারভাবে বলেছি, ছাত্র শ্রমিক জনতার এই গণঅভ্যুত্থানকে ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না।
ফয়জুল হাকিম বলেন, আপনারা জানেন ভারতে বসে শেখ হাসিনা ষড়যন্ত্র করছে চক্রান্ত করছে। এটা বন্ধ কররতে হবে। বিদেশে বাংলাদেশের মিশনগুলো এই অপপ্রচারের ঊর্ধ্বে যেনো। তারা কাজ করে সেখানে।
তিনি বলেন, আমরা দাবি তুলেছি বন্ধকৃত ২৫টি চিনিকল খুলে দিতে হবে। গার্মেন্টস শ্রমিকদের উপযুক্ত মজুরি দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এখানে শিক্ষা সংস্কার কমিশন করতে হবে, ভূমি সংস্কার কমিশন করতে হবে, শিক্ষা কমিশন গঠনের দাবি তুলেছি।
ফয়জুল হাকিম বলেন, বাংলাদেশের সব ধরনের জাতির জন্য জাতিসত্ত্বা কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছি। সাম্প্রতিক কালে খাগড়াছড়ি পার্বত্য চট্টগ্রামের দিঘিনালায় যে ঘটনা ঘটেছে, তার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার করতে হবে। এই দাবিগুলো আমরা সেখানে তুলেছি। এই দেশে জনগণের হাতে ক্ষমতা আনার যে প্রশ্ন রয়েছে, সেই প্রশ্নকে কেন্দ্র করে যত কালা কানুন আছে, সেই কালা কানুনগুলো বাতিল করতে হবে।
এদিন ধারাবাহিক সংলাপের অংশ হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস কয়েকটি রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে সংলাপ করেন। এ দফায় গণফোরাম, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, জাতীয় পার্টি-বিজেপি (পার্থ), লেবার পার্টিসহ আরও কয়েকটি দলকে সংলাপে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বলে জানা গেছে।
গত ৫ অক্টোবর বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, গণতন্ত্র মঞ্চ, হেফাজতে ইসলাম, বাম গণতান্ত্রিক জোট, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, এবি পার্টি, গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে সংলাপ করেন প্রধান উপদেষ্টা।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে গত ৫ আগস্ট। ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তার সরকার এরইমধ্যে দুই দফা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করেছে।
তবে ‘ফ্যাসিবাদী শাসন’ ও ‘গণহত্যায়’ অভিযুক্ত আওয়ামী লীগকে সংলাপে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। জাতীয় পার্টিকে প্রথম দফায় সংলাপে ডাকা হলেও পরে আর আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।