উৎমাছড়া সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার উত্তর রণিখাই ইউনিয়নে অবস্থিত। এর পাশে ভারতের মেঘালয় সীমান্ত। কালো পাথরের মধ্য দিয়ে মেঘালয়ের পাহাড় ঘেঁষে আসা ঠান্ডা পানি দেখতে এবং সেখানে গা ভেজাতে বসে পর্যটকদের মেলা। তবে যোগাযোগব্যবস্থা ভালো না থাকায় স্থানটি পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে তেমন পরিচিতি পায়নি। মূলত উৎমা একটি পাথর কোয়ারি এলাকা ছিল। এই ছড়া দিয়ে ভারত থেকে পাথর আসত। তা কুড়িয়ে বিক্রি করে স্থানীয় বাসিন্দারা জীবিকা নির্বাহ করত। কয়েক বছর ধরে পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকায় সেখানে পাথর জমে দৃষ্টিনন্দন দৃশ্যের অবতারণা হয়। ফলে পর্যটকদের আনাগোনা বাড়তে থাকে।
ঈদুল আজহার আগের দিন গত শুক্রবার ওই এলাকার ‘তৌহিদি জনতা’ বসে বৈঠক করে ফেসবুকে উৎমাছড়া ও কুলিছড়ায় (তুরুং) পর্যটকদের যাতায়াত সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধের ঘোষণা করে। তাঁরা ঈদ উপলক্ষে উৎমাছড়া ও কুলিছড়ায় (তুরুং) কোনো ধরনের পর্যটকের না আসার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানায়। কিন্তু ঈদুল আজহার দিন গত শনিবার থেকে পর্যটকেরা ছোটেন উৎমা ও তুরুংছড়ায়। এর পরদিন রোববার বিকেলে স্থানীয় কিছু বাসিন্দা উৎমাছড়া থেকে পর্যটকদের উঠে আসার জন্য বলেন। ছড়ায় আর কাউকে না যাওয়ার জন্যও অনুরোধ করেন। এসব কর্মকাণ্ডের একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে শুরু হয় নেতিবাচক আলোচনা-সমালোচনা।
আজ বুধবার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আজিজুন্নাহার ‘আজকের পত্রিকা’কে বলেন, ‘আমরা পর্যটকদের উৎমাছড়ায় এসে সৌন্দর্য উপভোগ করতে উৎসাহিত করছি। ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ ওই ঘটনার পর থেকে এখন পর্যন্ত আর কোনো অভিযোগ আসেনি। গতকাল এবং আজকে বিপুল সংখ্যক পর্যটক এসেছেন।’
আজিজুন্নাহার জানান, ‘আমাদের কাছে বলেছেন, তাঁরা নেহাত ধর্মপ্রচার করতেই সেখানে গিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁদের এটা আসলে যেভাবে উপস্থাপন হয়েছে, সেটা তারা ওইভাবে করতে চান নাই। যদিও তাদের বক্তব্যের সঙ্গে প্রকাশিত ভিডিওর সত্যতা নাই। তবে তাঁরা নিজেদের দোষ স্বীকার করেছেন। ভবিষ্যতে এ রকম কিছু হবে না বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তাঁরা। যদি এ রকম কিছু হয় তাহলে আমরা আইনি পদক্ষেপ নেব। পর্যটকের নিরাপত্তার ব্যাপারে আমরা সতর্ক রয়েছি। তা ছাড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান-মেম্বার এবং স্থানীয়রা এসব বিষয়ে সচেতন থাকবেন বলে আমাদের আশ্বস্ত করেছেন।’
একই সময়ে কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উজায়ের আল মাহমুদ আদনান ‘আজকের পত্রিকা’কে বলেন, ‘যারা এই কাজ করছিল তাঁদের সঙ্গে গতকাল (মঙ্গলবার) আমাদের বৈঠক হয়েছে। তাঁরা দুঃখপ্রকাশ করেছেন। পর্যটকদের বাধা দেওয়া তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল না। তাঁদের কথা ছিল, এখানে পর্যটকেরা অনেক সময় বাইকের বহর নিয়ে আসে, উচ্চশব্দে হর্ন বাজায় এবং মাঝেমধ্যে শালীনতা ভঙ্গ হয় এমন দৃশ্যের অবতারণার সৃষ্টি করে। মাঝেমধ্যে দু’একজন পর্যটক মাদকও সেবন করে এবং সীমানা পার হয়ে চলে যায়। এসব বিষয়ে তাঁরা ‘ইসলামের বার্তা’ দিতে গিয়েছিলেন। বাধা দেওয়া উদ্দেশ্য ছিল না। হয়তোবা ভুল শব্দচয়নের মাধ্যমে এমনটা হয়ে গেছে। সে জন্য তাঁরা দুঃখ প্রকাশ করেছেন।’
ওসি জানান, ‘এখন আমাদের পক্ষ থেকে বলতে চাই, উৎমাছড়ায় পর্যটকদের জন্য অনুকূল পরিবেশ রয়েছে। এখানে কোনো বাধা বা হুমকি নেই। অনেক পর্যটক এখন উৎমাছড়ায় আছেনও। আমরা পর্যটকদের সব ধরণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করব।’
পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘উচ্চশব্দে হর্ন বাজানো, অশালীনতা, মাদক সেবন ও সীমানা পার হয়ে ওপারে চলে যাওয়ার বিষয়টি আমাদের নজরে পড়েনি। কেউ অভিযোগ করেনি, জানায়নি। তাদের সঙ্গে বৈঠকের জন্য সেখানে গিয়েও আমরা এমন কিছু দেখিনি। তবুও এ রকম বেআইনি কিছু হলে আমরা অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
পর্যটকদের নিষেধ করার সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা এলাকার বাসিন্দা ও যুব জমিয়তের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মুফতি রুহুল আমিন সিরাজী মঙ্গলবার বলেন, ‘আমরা এখানে কাউকে আসতে নিষেধ করিনি। আমরা শুধু বলেছি যে এখানে এসে কেউ যেন মাদক সেবন না করেন এবং অশ্লীলতা না করেন। আর এই ছড়ায় আসতে সরাসরি কোনো রাস্তা নেই।’
ভিডিওতে একজনকে পর্যটকদের আসতে নিষেধ করতে শোনা গেছে, বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে রুহুল আমিন সিরাজী বলেন, ‘ভিডিওতে আমাদের এখানকার একজন বলে ফেলেছেন যে এখানে আর আসবেন না। এ কারণে মূলত সমস্যাটা হয়েছে। আমরা ইউএনও মহোদয়ের সঙ্গে বসে এটার সমাধান করেছি।’