Homeলাইফস্টাইলক্যাম্প ফায়ার কীভাবে এল

ক্যাম্প ফায়ার কীভাবে এল

[ad_1]

আধুনিক জীবনধারায় ক্যাম্প ফায়ার এক দারুণ বিনোদন। কোনো কোনো দেশের মানুষ তো রীতিমতো উৎসব করে এর আয়োজন করে থাকে। এটি যেন শুধুই এক আগুন জ্বালানোর বিষয় নয়। এটি মানুষের সামাজিক জীবন ও সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। কেবল উষ্ণতা ও নিরাপত্তার জন্য এর শুরু হয়নি। বরং সেই প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে এর পাশে গড়ে উঠেছে গল্প, সংগীত, খাদ্যের এক দারুণ যাপন। এর বিবর্তন সত্যিই চমকপ্রদ।

pexels-vladbagacian-1368382

pexels-vladbagacian-1368382

হোমো স্যাপিয়েন্সের পূর্বপুরুষ হোমো ইরেক্টাসরা প্রথম আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে শিখেছিল বলে মনে করা হয়। তবে আগুন জ্বালানোর কৌশল রপ্ত করতে মানুষের আরও কয়েক লাখ বছর লেগে যায়। যখন মানুষ আগুন জ্বালানোর পদ্ধতি আয়ত্তে আনে, তখন থেকেই ক্যাম্প ফায়ারের ধারণা জন্ম নেয়। প্রথমদিকে এটি ছিল শুধুই উষ্ণতা ও খাদ্য প্রস্তুতির জন্য ব্যবহৃত এক মাধ্যম। তবে শিকারি-সংগ্রাহক সমাজে রাতের আঁধারে নিজেদের রক্ষা করার জন্যও ক্যাম্প ফায়ার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

worldhistory org
worldhistory org

আদিবাসী জনগোষ্ঠী ও ক্যাম্প ফায়ার

দীর্ঘ দীর্ঘ সময় পরও যেসব জনগোষ্ঠী নিজেদের আদিম সংস্কৃতি টিকিয়ে রাখতে পেরেছিল, এখন আমরা যাদের ‘আদিবাসী’ বলে জানি, তাদের কাছে ক্যাম্প ফায়ার বা আগুনের কুণ্ডলী বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। জনগোষ্ঠীগুলো তত দিনে নিজেদের ভাষা, সংগীতসহ বিভিন্ন মানবিক অনুষঙ্গ তৈরি করে নিয়েছে। রাতের অবসরে নিজেদের পরম্পরাগত সেসব জ্ঞান ছড়িয়ে দেওয়ার গুরুত্বপূর্ণ জায়গা হয়ে ওঠে এই ক্যাম্প ফায়ারগুলো। উত্তর আমেরিকার নেটিভ আমেরিকানরা রাতে শিকারের গল্প বলার জন্য আগুনের চারপাশে বসত। আফ্রিকান উপজাতিগুলো তাদের ঐতিহ্যগত গান ও নাচের মাধ্যমে সমাজের বিভিন্ন শিক্ষা ও মূল্যবোধ প্রজন্মান্তরে ছড়িয়ে দিত। প্রাচীন গ্রিক ও রোমান সভ্যতাতেও ক্যাম্প ফায়ারের সংস্কৃতি ছিল। যুদ্ধকালে সৈন্যরা রাতের বেলায় নিজেদের উষ্ণ রাখার পাশাপাশি যুদ্ধ পরিকল্পনা করত আগুনের পাশে বসে।

pexels-tima-miroshnichenko-6204616
pexels-tima-miroshnichenko-6204616

মধ্যযুগ ও সামরিক ক্যাম্প ফায়ার

মধ্যযুগে নাইট ও সৈন্যরা যুদ্ধের আগে ক্যাম্প ফায়ারের চারপাশে একত্রিত হয়ে কৌশল নির্ধারণ করত এবং সাহস বাড়ানোর গল্প শোনাত। বিশেষ করে ইউরোপীয় সেনাবাহিনীর মধ্যে এটি বেশ সাধারণ চর্চা হয়ে দাঁড়ায়। এ ছাড়া, অভিযাত্রী ও যাযাবর গোষ্ঠীগুলো তাদের যাত্রাপথে ক্যাম্প ফায়ার ব্যবহার করত রান্না ও নিরাপত্তার জন্য।

robertbadenpowell
robertbadenpowell

আধুনিক ক্যাম্প ফায়ার ও বিনোদন

স্কাউট আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা লর্ড ব্যাডেন পাওয়েল আফ্রিকার ম্যাফেকিং শহরে ২১৭ দিন বন্দী ছিলেন। সে সময় তিনি দেখতেন বোয়ার আদিবাসীরা সারা দিন যুদ্ধ করে এসে রাতের বেলা অগ্নি শিখার সামনে জড়ো হয়ে নাচ-গান করতেন। এটি দেখে লর্ড ব্যাডেন পাওয়েল অনেক প্রভাবিত হন। তারপরেই তিনি আধুনিক ক্যাম্প ফায়ারের ধারণা তৈরি করেন। পরবর্তীতে ক্যাম্প ফায়ার স্কাউটিংয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হয়ে ওঠে। স্কাউটিং কার্যক্রমে দলীয় বন্ধন দৃঢ় করার জন্য গল্প বলা, গান গাওয়া এবং প্রকৃতির সঙ্গে সংযোগ তৈরির জন্য ক্যাম্প ফায়ার করা হয়।

pexels-atiabii-29684537

pexels-atiabii-29684537

একুশ শতকে ক্যাম্পিং জনপ্রিয় হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে ক্যাম্প ফায়ারও বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম হয়ে দাঁড়ায়। এখনকার দিনে পরিবার, বন্ধু-বান্ধব বা পর্যটকেরা ক্যাম্পিং করতে গেলে রাতে ক্যাম্প ফায়ারের চারপাশে বসে আনন্দ উপভোগ করে।

ক্যাম্প ফায়ারের পরিবেশগত প্রভাব ও বিকল্প

ক্যাম্প ফায়ার প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সংযোগ তৈরির এক চমৎকার উপায়। তবে এটি কিছু পরিবেশগত সমস্যার কারণ হতে পারে। বনাঞ্চলে অনিয়ন্ত্রিত আগুন দাবানলের কারণ হতে পারে। এটি পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর, সেটা আমরা জানি। তাই বর্তমানে অনেক জায়গায় ইকো-ফ্রেন্ডলি বিকল্প, যেমন পোর্টেবল ফায়ার পিট এবং পরিবেশবান্ধব কাঠের ব্যবহার জনপ্রিয় হচ্ছে।

ক্যাম্প ফায়ার কেবল আগুন জ্বালানো নয়, এটি ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং মানুষের মিলনের প্রতীক। যুগে যুগে এটি মানুষের জীবনধারার সঙ্গে মিশে গেছে এবং এখনো ক্যাম্পিং ও সামাজিক মিলনক্ষেত্রের একটি অপরিহার্য অংশ। পরিবর্তিত সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এর ব্যবহার ও প্রযুক্তি বদলালেও, ক্যাম্প ফায়ারের আবেদন কখনোই ফুরাবে না।



[ad_2]

Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত