Homeলাইফস্টাইলডিমের খোসা ছাড়ানোর সর্বোত্তম উপায় জানালেন বিজ্ঞানীরা

ডিমের খোসা ছাড়ানোর সর্বোত্তম উপায় জানালেন বিজ্ঞানীরা


সেদ্ধ ডিমের খোসা ছাড়াতে গিয়ে ঝামেলায় পড়েনি, দুনিয়ায় এমন মানুষ বোধ হয় পাওয়া মুশকিলই। মানুষের খাদ্যের তালিকায় ডিম অতি পুরোনো একটি উপাদান হলেও সবাইকেই কমবেশি এটির খোসা ছাড়ানোর ক্ষেত্রে ঝামেলায় পড়তে হয়েছে।

সেদ্ধ ডিমের খোসা ছাড়ানোর ক্ষেত্রে দুই সমস্যা খুবই সাধারণ। একটি হলো—খোসার সঙ্গে ডিমের সাদা অংশ লেগে থাকা এবং আরেকটি হলো, খোসা ছাড়ানোর পরও ডিমের ওপর পাতলা আবরণ লেগে থাকা। ইন্টারনেটে এসব সমস্যা সমাধানের নানা ‘হ্যাক’ বা কৌশল পাওয়া যায়। ডিমের খোসা ছাড়ানো কঠিন হওয়ার পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে। এর বৈজ্ঞানিক কারণও রয়েছে এবং এর থেকে বাঁচার উপায়ও আছে।

ডিমের খোসা শক্ত ও ছিদ্রযুক্ত। এর ভেতরে থাকে একটি ভেতরের ও বাইরের মেমব্রেন বা পাতলা পর্দা। এরপর থাকে ডিমের সাদা অংশ (অ্যালবুমিন)। একেবারে কেন্দ্রে থাকে মেমব্রেনে মোড়া কুসুম। বাইরের খোসা ও ভেতরের মেমব্রেনের মাঝে একটি বায়ু কোষ থাকে।

ডিম সেদ্ধ করার পর খোসা ছাড়ানো কতটা সহজ হবে, তা নিয়ে ১৯৬০-১৯৭০ এর দশকে অনেক গবেষণা হয়েছে। এর একটি কারণ হলো ডিমের সাদা অংশের পিএইচ (pH) মান বা ডিমে অ্যাসিড বা ক্ষারের পরিমাণ। ১৯৬০ এর দশকের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ডিমের সাদা অংশের পিএইচ ৮ দশমিক ৭ থেকে ৮ দশমিক ৯ হলে খোসা ছাড়ানো সহজ হয়। এটি বেশ ক্ষারীয় মান।

ডিম কীভাবে সংরক্ষণ করা হচ্ছে, তার ওপরও এটি নির্ভর করে। ১৯৬৩ সালের এক গবেষণায় দেখা যায়, ২২ ডিগ্রি সেলসিয়াস (৭২ ডিগ্রি ফারেনহাইট) তাপমাত্রায় ডিম রাখলে খোসা ছাড়ানো সহজ হয়। ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ফ্রিজের ৩-৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রাখলে তেমন সুবিধা হয় না। তবে বেশি তাপমাত্রায় ডিম রাখলে নষ্ট হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।

গবেষণায় দেখা গেছে, ডিম সেদ্ধ করার আগে যত বেশি সময় ধরে রাখা হয়, অর্থাৎ ডিম যত পুরোনো হয়, খোসা ছাড়ানো তত সহজ হয়। টাটকা ডিমের খোসা ছাড়ানো কঠিন—এটা অনেকেই জানেন। প্রথমত, টাটকা ডিমে বায়ু কোষ ছোট থাকে। ডিম পুরোনো হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ছিদ্রযুক্ত খোসা দিয়ে খুব ধীরে ধীরে জলীয় অংশ বেরিয়ে যায়। এতে বায়ু কোষ বড় হয় এবং ডিমের বাকি অংশ কিছুটা সংকুচিত হয়। বায়ু কোষ বড় হলে খোসা ছাড়ানো শুরু করা সহজ হয়।

দ্বিতীয়ত, ডিমের সাদা অংশ এমনিতেই কিছুটা ক্ষারীয় হয়। তবে ডিম পুরোনো হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এর pH মান বাড়ে। এতেও খোসা ছাড়ানো সহজ হয়।

কিছু অভিজ্ঞ রাঁধুনি মনে করেন, প্রথমে ফুটন্ত পানিতে ডিম দিয়ে আঁচ কমিয়ে অল্প আঁচে সেদ্ধ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। তবে ডিম ফাটানো এড়াতে ঘরের স্বাভাবিক তাপমাত্রায় থাকা ডিম ব্যবহার করা উচিত। হঠাৎ তাপমাত্রার পরিবর্তনে ডিম ফেটে যেতে পারে। এই পদ্ধতির কারণ হলো—শুরু থেকেই বেশি তাপমাত্রায় থাকলে ডিমের মেমব্রেন খোসা ও সাদা অংশ থেকে সহজে আলাদা হয়ে যায়।

এ ছাড়া, দ্রুত বেশি তাপমাত্রায় রান্না করলে ডিমের সাদা অংশের প্রোটিনগুলো সহজে বিকৃত হয়ে (গঠন পরিবর্তিত হয়ে) নিজেদের মধ্যে বন্ধন তৈরি করে। মেমব্রেনের সঙ্গে তাদের বন্ধন কম হয়। ডিম সেদ্ধ করার পর (নরম কুসুমের জন্য ৩-৫ মিনিট, জেলি কুসুমের জন্য ৬-৭ মিনিট এবং শক্ত কুসুমের জন্য ১২-১৫ মিনিট), বরফ পানিতে ডুবিয়ে ঠান্ডা করে নিতে পারেন। এতে ডিমের সাদা অংশ খোসা থেকে কিছুটা সংকুচিত হয়, ফলে খোসা ছাড়ানো সহজ হয়।

খোসা ছাড়ানো সহজ করার জন্য সেদ্ধ করার পানিতে লবণ দেওয়ার পরামর্শও দেওয়া হয়। তবে এর ফলাফল সব সময় একরকম হয় না। এক গবেষণায় দেখা গেছে, এই পদ্ধতিতে খোসা ছাড়ানো সহজ হয়। তবে ডিম বেশি দিন সংরক্ষণ করা হলে এই প্রভাব কমে যায়।

অ্যাসিড ও ক্ষারও ডিমের খোসা সরাতে বা ছাড়াতে সাহায্য করে। এই সংক্রান্ত একটি পেটেন্টে খোসা গলিয়ে দেওয়ার জন্য বেশ কিছু তীব্র রাসায়নিক ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। তবে এই ধারণার ওপর ভিত্তি করে জলে বেকিং সোডা বা ভিনেগার দিয়ে দেখতে পারেন। ভিনেগার ডিমের খোসার ক্যালসিয়াম কার্বোনেটকে আক্রমণ করে খোসা সরাতে সাহায্য করে বলে মনে করা হয়। বেকিং সোডা ক্ষারীয় হওয়ায় এটি মেমব্রেনকে খোসা থেকে আলাদা করতে সাহায্য করতে পারে।

ডিম সেদ্ধ করার আরও কিছু পদ্ধতি রয়েছে, যেমন প্রেশার স্টিমিং, এয়ার ফ্রাইং এবং মাইক্রোওয়েভিং। ডিম স্টিমিং করার ক্ষেত্রে কেউ কেউ মনে করেন, জলীয় বাষ্প ডিমের খোসার ভেতর প্রবেশ করে। এতে মেমব্রেন ডিমের সাদা অংশ থেকে আলগা হয়ে যায়। ফলে ডিমের খোসা ছাড়ানো অনেক সহজ হয়।

সম্প্রতি অন্যান্য খাবার এয়ার ফ্রাই করা নিয়ে গবেষণা হলেও, এই পদ্ধতিতে ডিম রান্না করলে খোসা ছাড়ানোর ওপর এর প্রভাব কতটা, তা নিয়ে আরও গবেষণার সুযোগ রয়েছে।

সবশেষে, ডিমের খোসা ছাড়ানোর পর সেগুলো ফেলে দেবেন না। এর অনেক ব্যবহার রয়েছে। যেমন কম্পোস্ট তৈরি, বাগানে শামুক ও শম্বুক তাড়ানো, বীজতলা তৈরির জন্য ছোট জৈব পাত্র হিসেবে ব্যবহার করা। এমনকি ক্যানসার গবেষণার মতো উন্নত ক্ষেত্রেও এটি ব্যবহৃত হয়।

দ্য কনভারসেশনে লিখেছেন ইউনিভার্সিটি অব সাদার্ন কুইন্সল্যান্ডের খাদ্য বিজ্ঞানের অধ্যাপক পৌলমি বৌরি।





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত