কফি শুধু একটি পানীয় নয়, এটি একটি আবেগ, একধরনের শিল্পও বটে। আর সেই শিল্পকে আরও নিখুঁত করতে বিজ্ঞানীরা প্রতিনিয়ত গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, পানির ঢালার উচ্চতা ও গতি কফির স্বাদে বড় ধরনের প্রভাব ফেলে!
হিট টিভি সিরিজ ‘ব্রেকিং ব্যাড’-এর একটি দৃশ্যে কেমিস্ট্রি শিক্ষক ওয়াল্টার হোয়াইট তাঁর সহকর্মীর তৈরি কফি চেখে বলেছিলেন—এটাই তাঁর জীবনের সেরা কফি। এ থেকেই বোঝা যায়, এক কাপ নিখুঁত কফি কতটা মুগ্ধকর হতে পারে।
কফি হয়তো মেথ-এর মতো আসক্তিকর নয়, কিন্তু এর স্বাদে যারা অভ্যস্ত, তাদের কাছে নিখুঁত এক কাপ কফির খোঁজ একরকম নেশার মতোই বটে।
সম্প্রতি গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—একটি ভালো কফির জন্য কয়েকটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্যে রয়েছে কফির দানা, রোস্ট, গ্রাইন্ড এবং ব্রিউ পদ্ধতি।
কফির দানার ক্ষেত্রে এর জাত, উৎপত্তিস্থল, এমনকি চাষের বিষয়গুলোও স্বাদে প্রভাব ফেলে। আরাবিকা কফি দানা সুগন্ধি ও জটিল স্বাদের জন্য বিখ্যাত, আর রোবাস্তায় ক্যাফেইন বেশি থাকে এবং এটি অ্যাস্প্রেসোর জন্য উপযুক্ত।
এরপর আসে রোস্ট—হালকা, মাঝারি, ডার্ক ইত্যাদি। হালকা রোস্টে খাঁটি স্বাদ পাওয়া যায়। আর ডার্ক রোস্ট সাধারণত অ্যস্প্রেসোর জন্য ব্যবহৃত হয় এবং বড় পরিসরে স্বাদের সামঞ্জস্য বজায় রাখতে সহায়ক। কফি রোস্ট করা সম্ভব হলেও তা বেশ ঝামেলার এবং রোস্টের পর পাঁচ থেকে দশ দিন ‘ডিগ্যাস’ না করলে কফির স্বাদ ঠিকমতো পাওয়া যায় না।
কিন্তু সবকিছুর মূলে রয়েছে গ্রাইন্ডিং। গ্রাইন্ড যদি অসমান হয়, তবে স্বাদও হবে অনিয়মিত। বিজ্ঞানীরা এর জন্য নিখুঁত গাণিতিক ফর্মুলাও বের করেছেন—একটি সমান ও মাঝারি গ্রাইন্ডই দেয় সবচেয়ে ভারসাম্যপূর্ণ কফি। ভুল গ্রাইন্ড পুরো কফিকে নষ্ট করে দিতে পারে।
ব্রিউ পদ্ধতিও গুরুত্বপূর্ণ। ফ্রেঞ্চ প্রেস, অ্যারোপ্রেস, ড্রিপ বা মোকা পট—যে পদ্ধতিই ব্যবহার করুন, পানি কতটা গরম, কতটা ধীরে ঢালছেন, এমনকি আপনি কখন কফি খাচ্ছেন—এসবই স্বাদে প্রভাব ফেলে।
আপনি স্টারবাকসে গিয়ে ক্যারামেল লাতে অর্ডার দিলেও দোষের কিছু নেই। কারণ, ভালো কফি মানে আসলে আপনি যেটা উপভোগ করেন, সেটাই।
একজন কফিপ্রেমী বলেন, ‘আমি সাধারণত নির্ভর করি স্থানীয় রোস্টারির ব্রাজিলিয়ান সান্তোসের ওপর। কফি মেপে ক্যাফেটিয়ারে দেই, জলে এক মিনিট অপেক্ষা করি, তারপর ঢালি, চার মিনিট বসিয়ে রেখে চাপ দিই।’
আর বেশি ক্যাফেইন চাইলে ব্যবহার করুন মোকা পট, যা চুলায় গরম হয়ে ঝাঁজালো স্বাদে প্রস্তুত হয়।
সবশেষে, দুধ ছাড়া কালো কফির চুমুক দিয়ে আবার কাজে ফিরে যাওয়া—এটাই অনেকের কাছে দিনের নিখুঁত শুরু।