বিশ্বের গতিশীল ফ্যাশন জগতে তাল মিলিয়ে চলতে বর্তমানে জনপ্রিয় ট্রেন্ড থ্রিফটিং অর্থাৎ সেকেন্ড হ্যান্ড পোশাক কেনা। অর্থাৎ কারও এক-দুই বার ব্যবহারের পর বিক্রি করে দেওয়া পোশাক স্বল্প মূল্যে কিনে পরা। এভাবে অনেক দামি বা ব্র্যান্ডেড পোশাক পরার শখও মিটিয়ে থাকেন অনেকে। তবে এই শখ বা চাহিদা মেটানোর উপায়ও কখনো কখনো বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।
এক থ্রিফটিং মার্কেট থেকে পোশাক কেনেন এক টিকটক ব্যবহারকারী। পরে টিকটকে একটি ভিডি শেয়ার করে ওই ব্যবহারকারী দেখান, সেকেন্ড হ্যান্ড পোশাকের বাজার থেকে কেনা পোশাক পরে তাঁর ত্বকে সংক্রমণ হয়েছে। ভিডিও থেকে জানা যায়, ওই সেকেন্ড হ্যান্ড পোশাকটি না ধুয়েই পরেছিলেন তিনি।
তাঁর ওই ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে থ্রিফটেড বা সেকেন্ড হ্যান্ড পোশাক ব্যবহারের ঝুঁকি নিয়ে আলোচনার জন্ম নেয়। নিউ ইয়র্ক পোস্টের এক প্রতিবেদনে ওই টিকটক ব্যবহারকারীর কথা তুলে ধরে সেকেন্ড হ্যান্ড পোশাক ভালোভাবে না ধুয়ে পরার ঝুঁকি নিয়ে সতর্ক করা হয়।
ওই তরুণ এক টিকটক ভিডিওতে বলেন, না ধুয়েই সেকেন্ড-হ্যান্ড পোশাক পরার অভ্যাসের কারণে তিনি ত্বকের সংক্রমণে ভুগছেন। এই পোশাক ব্যবহারের পর মুখে তীব্র চুলকানি শুরু হয়, যা পরে বড় বড় ফোড়ায় পরিণত হয়।
ওই তরুণ আরও জানান, তাঁর ত্বকের সংক্রমণকে চিকিৎসকেরা সংক্রামক ভাইরাসজনিত ত্বকের রোগ ‘মলাস্কাম কন্টাজিওসম’ বলে শনাক্ত করেছেন। এই ত্বকের রোগ সাধারণত ত্বকে কিছুর সংস্পর্শ বা যৌন সংযোগের মাধ্যমে ছড়ায়। এই রোগ সাধারণত ক্ষতিকর নয় এবং চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না।
তবে ওই টিকটকার তাঁর ফুসকুড়ির জন্য অপরিষ্কার থ্রিফটেড বা সেকেন্ড হ্যান্ড পোশাককেই দায়ী করেছেন।
ওই তরুণের ভিডিওর মন্তব্যের ঘরে দেখা যায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া। অনেকে অবাক হয়ে বলছেন, এসব পোশাক কেউ না ধুয়ে পরে কীভাবে!
কেউ কেউ সহানুভূতি প্রকাশ করে লিখেছেন, ‘আশা করি, তুমি দ্রুত সুস্থ হবে এবং আগের মতো সুস্থ জীবন ফিরে পাবে।’
একজন প্রশ্ন তুলেছেন, ‘তুমি কেন প্রথমে পোশাক ধুয়ে নাওনি?’
আরেকজন লিখেছেন, ‘বিষয়টা ভয়ের!’
কেউ আবার অবাক হয়ে বলেছেন, ‘আরও বেশি অবাক হয়েছি এই জেনে, কেউ পোশাক কিনে ধোয়া ছাড়াই পরে ফেলে!’
থ্রিফটিংয়ের জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকায় বিশেষজ্ঞরা ক্রেতাদের সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। যতই স্টাইলিশ হোক না কেন, কোনো পোশাক পরার আগে অবশ্যই ধুয়ে নেওয়া উচিত, নয়তো ত্বকের অবাঞ্ছিত সমস্যার ঝুঁকি থাকে। তাঁদের মতে, নতুন কেনা পোশাক, বিশেষ করে সেকেন্ড-হ্যান্ড দোকান থেকে কেনা পোশাক, ব্যবহার করার আগে অবশ্যই ধুয়ে নেওয়া উচিত।
নিউ ইয়র্কের ত্বক বিশেষজ্ঞ ডা. চার্লস পুজা সতর্ক করে বলেন, ‘যদি আপনি ফাস্ট ফ্যাশন বা ট্রেন্ডি থাকতে পছন্দ করেন, তাহলে অবশ্যই পোশাক ধুয়ে নিন। এই পোশাকগুলোর মধ্যে এমন কিছু থাকতে পারে, যা আপনার ত্বকের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।’
কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইবার সায়েন্স ও অ্যাপারেল ডিজাইনের সিনিয়র লেকচারার ফ্রান্সেস কোজেনের মতে, অনেক সময় পোশাক তৈরির পর ফ্যাব্রিক সফটেনার, দাগ প্রতিরোধক বা জলরোধী প্রলেপ এবং অ্যান্টি-মাইলডিউ উপাদান ব্যবহার করা হয়। এসব রাসায়নিক ত্বকে জ্বালা, লালচে ভাব বা চুলকানি সৃষ্টি করতে পারে।
তবে মনে রাখতে হবে, মলাস্কাম কন্টাজিওসম ছাড়াও না ধোয়া বা নতুন কেনা পোশাকে আরও কিছু ত্বকের রোগের ঝুঁকি থাকে। এমনকি রিংওয়ার্মের মতো ছত্রাকজনিত সংক্রমণও হতে পারে।
মায়ো ক্লিনিকের তথ্যানুযায়ী, রিংওয়ার্ম ত্বকের বাইরের স্তরে আক্রমণ করে। এতে ত্বক চুলকায়, খসখসে হয়ে যায় এবং এটি সংক্রামক। সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘রিংওয়ার্ম সংক্রমিত ব্যক্তির ব্যবহৃত কাপড়, তোয়ালে বা বিছানার চাদর যথাযথভাবে জীবাণুমুক্ত না করলে এটি ছড়াতে পারে।’
ফলে যদি পোশাক কেনার সময় দোকানে ট্রায়াল দেওয়ার অভ্যাস থাকে এবং এর আগে ট্রায়াল দেওয়া কারও যদি রিংওয়ার্মের মতো ত্বকের সংক্রমণজনিত রোগ থাকে, তাহলে সেই একই পোশাক কিনে ধোয়া ছাড়াই পরেন, তাহলে আপনারও সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। অতএব দোকানে কোনো পোশাক ট্রায়াল দেওয়া হলেও বাসায় ফেরার পর যত দ্রুত সম্ভব নিজে পরিস্কার হয়ে নেবেন এবং পোশাক অবশ্যই ধুয়ে পড়বেন।