এক ব্যক্তি ঘরের মধ্যে এক নারীকে ঝাড়ু দিয়ে পেটাচ্ছে—এমন একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওটি একই ক্যাপশনে বিভিন্ন ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ও পেজে পোস্ট করা হয়েছে। এতে দেখা যায়, একটি পাকা ঘরের মধ্যে নারীকে ঝাড়ু দিয়ে সজোরে আঘাত করছেন এক লোক। আর ওই নারী ব্যথার চোটে মেঝেতে বসে পড়েছেন।
‘Atika Binte Hossain’ নামের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে গত বৃহস্পতিবার রাত ৮টা ১২ মিনিটে প্রকাশিত ভিডিওটি সবচেয়ে বেশি ছড়িয়েছে। ভিডিওটির ক্যাপশনে লেখা, ‘#মহাজনের দেশে সংস্কার চলছে, যা ১৬ বছরে দেখি নাই #আপনারা যা ভালো মনে করেন।’ (বানান অপরিবর্তিত)
আজ শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ভিডিওটি ৫১ হাজার বার দেখা হয়েছে এবং রিঅ্যাকশন পড়েছে ৩৬০। পোস্টে ৩৭টি কমেন্ট পড়েছে এবং শেয়ার হয়েছে ২২৯। এসব কমেন্টে ভিডিওটি বাংলাদেশের ঘটনার বলে কেউ কেউ কমেন্ট করেছেন। Mostafa Kamal Melody নামে অ্যাকাউন্ট থেকে লেখা হয়েছে, ‘দেশে তো বর্তমানে আইন নেই কি আর করার মানুষ দুঃখে দুঃখে মরবে বুঝ বাঙালি বুঝ।’ (বানান অপরিবর্তিত) Rashdul Haque Razib লিখেছে, ‘এই ভন্ডরে আইনের আওতায় আনা হোক।’ (বানান অপরিবর্তিত)
গাজীপুর জেলা যুবলীগ শাখা নামের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্ট করে ক্যাপশনে লিখেছে, ‘#সংস্কার_চলছে প্রিয় বাংলাদেশ এখন নতুন বাংলাদেশ।’ (বানান অপরিবর্তিত)
টুঙ্গিপাড়ার মেয়ে সনিয়া নামের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকেও একই দাবিতে ভিডিওটি পোস্ট করেছে।
এই পোস্টগুলোর কোথাও স্থান বা সূত্রের উল্লেখ নেই।
ভিডিওটির কিছু কি–ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চ করা হলে DEBAJIT SARKER নামে একটি এক্স অ্যাকাউন্টে ভিডিওটি পাওয়া যায়। ভিডিওটি এই অ্যাকাউন্টে গত ৩০ এপ্রিল পোস্ট করা হয়। এর সঙ্গে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে থাকা যুবক, নারী, তাঁদের পোশাক, ঘরের আসবাব পত্রের সাদৃশ্য পাওয়া যায়।
ভিডিওর ক্যাপশনে বলা হয়, ভিডিওতে আক্রমণকারী ব্যক্তির নাম ডা. ইয়ার আলী। তিনি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ মেডিকেল কলেজের একজন চিকিৎসক। মারধরের শিকার নারী তাঁর প্রথম স্ত্রী।
রিভার্স ইমেজ সার্চে ভারতের ইংরেজি ভাষার জাতীয় দৈনিক ফ্রি প্রেস জার্নাল–এর ওয়েবসাইটে গত ৩০ এপ্রিলে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি এমপি লকেট চট্টপাধ্যায়ের এক্স হ্যান্ডলে শেয়ার করা ভিডিও ও ক্যাপশনের বরাত দেওয়া হয়েছে। লকেট ক্যাপশনে লিখেছেন, ‘এই বিশেষ সম্প্রদায়ের ব্যক্তি পেশায় মুর্শিদাবাদ মেডিকেল কলেজের চিকিৎসক এবং (আসিফা ট্রাস্ট) একটি কি চ্যারিটেবল ট্রাস্ট এর অধ্যাপক। এই ব্যক্তি প্রকাশ্যে তার প্রথম স্ত্রী কে নির্যাতন করছেন। এবং একটি দ্বিতীয় বিবাহ ও করেছেন সমাজের কাছে এই ব্যক্তির নারীদের প্রতি নির্যাতনের কঠোর নিন্দা জানাই। এদের থেকে সামাজিক দুরত্ব ও সচেতনতা বজায় রাখুন।’
একই প্রতিবেদনে Akshay Mitra নামে একটি এক্স অ্যাকাউন্টে ৩০ এপ্রিল শেয়ার করা পোস্টও জুড়ে দেওয়া হয়েছে। পোস্টে দাবি করা হয়েছে, ওই ঘটনায় আত্মপক্ষ সমর্থন করে ডা. ইয়ার আলী অনলাইনে একটি স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। Akshay Mitra এক্স হ্যান্ডল থেকে ‘Confession by Mr. Doctor’ ক্যাপশনে DrYear Ali নামে ফেসবুক অ্যাকাউন্টের একটি পোস্টের স্ক্রিনশট শেয়ার করা হয়েছে। স্ক্রিনশটে লেখা, ঘটনাটি গত ১২ মার্চের। নারীটি তাঁর স্ত্রী। স্ত্রীকে পেটানোর পক্ষে যুক্তি হিসেবে কোরআনের একটি আয়াতের বাংলা অনুবাদ উল্লেখ করা হয়েছে। যদিও আজ শনিবার DrYear Ali নামে ফেসবুকে কোনো অ্যাকাউন্ট খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তিনটি পোস্টই একই তারিখে বেলা ১২টা ২৫ মিনিট থেকে ১টা ৩১ মিনিটের মধ্যে করা হয়েছে। এ ছাড়া পশ্চিমবঙ্গ থেকে পরিচালিত আরও কয়েকটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এ সম্পর্কিত পোস্ট দেখা গেছে।
সুতরাং, সোশ্যাল মিডিয়াতে ছড়িয়ে পড়া নারীকে ঝাড়ু দিয়ে পেটানোর ভিডিওটিওটি বাংলাদেশের নয়।