[ad_1]
১০ বছরের এক ছেলেকে গণপিটুনি দিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে— এই দাবিতে একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওটি বিভিন্ন ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ও পেজ থেকে প্রায় একই ক্যাপশনে ছড়ানো হয়েছে। হালকা ঝাপসা ভিডিওতে দেখা যায়, রাতের বেলায় লাল রঙের হাফপ্যান্ট পরা একজনকে বেশ কয়েকজন মিলে লাঠিসোটা দিয়ে পেটাচ্ছে।
ভারতের আশ্রয়ে থাকা লেখিকা তসলিমা নাসরিনের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে গতকাল রোববার দিবাগত রাত ১২টা ৫৩ মিনিটে পোস্ট করা ভিডিওটি সবচেয়ে বেশি ছড়িয়েছে। এটির ক্যাপশনে লেখা, ‘এই ছবিটা দেখে রাখুন তাড়াতাড়ি, কারণ ফেসবুক এই ছবি ডিলিট করে দেবে। দেখুন বাংলাদেশের মানুষ একটা ১০ বছরের বাচ্চা ছেলেকে পিটিয়ে মেরে ফেলছে। এই নৃশংস বর্বর জাতির কাছ থেকে ভাল কিছু কি আশা করেন? আমি অন্তত করি না।’ (বানান অপরিবর্তিত)
আজ বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ভিডিওটি ২ লাখ ৮১ হাজার বার দেখা হয়েছে এবং পোস্টটিতে ১২ হাজার রিঅ্যাকশন পড়েছে, ৯২টি কমেন্ট পড়েছে এবং শেয়ার হয়েছে ৪ হাজার ৮০০ বার। কমেন্টে এই ভিডিও নিয়ে অনেকে অনেকে মন্তব্য করেছেন। Raja Chatterjee নামের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে লেখা হয়েছে, ‘ইস! ভয়ঙ্কর পাশবিক নির্যাতন। ধিক্কার জানাই। ‘Ajita Mitra লিখেছে, ‘কী ভয়ংকর! কোথায় যাবে মানুষ!’
Ahtha Shahamul Sagor, Golam Rabbani নামে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ও Badal Halder 1 নামে ফেসবুক পেজ থেকে একই ক্যাপশনে ভিডিওটি ছড়ানো হয়।
ভিডিওটির কিছু কি–ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চ করা হলে Yasin’s Duet Show নামের একটি ফেসবুক পেজে প্রকাশিত এক ভিডিওতে (আর্কাইভ) ছড়িয়ে পড়া ভিডিওর ব্যক্তিকে দেখতে পাওয়া যায়। ভিডিওটি গত ১৯ মার্চ প্রকাশিত হয়। এর সঙ্গে ছড়িয়ে পড়া ভাইরাল ভিডিওতে মারধরের শিকার ব্যক্তির শরীরের গড়ন, লাল হাফপ্যান্ট, আশেপাশে থাকা মানুষজনের অবস্থানের সাদৃশ্য পাওয়া যায়।

ভিডিওর ক্যাপশন থেকে জানা যায়, গত ১৮ মার্চ ঢাকার খিলক্ষেতে ৫ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে ১৬/১৭ বছর বয়সী এক কিশোরকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। তাকে থানায় নিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশের গাড়ি থেকে ছিনিয়ে নিয়ে গণপিটুনি দেয় উত্তেজিত জনতা। তবে গণপিটুনিতে তাঁর মৃত্যু হয় বলে এই পোস্টে উল্লেখ করা হয়।
এসব তথ্যসূত্র গুগলে সার্চ করে আজকের পত্রিকায় গত ১৯ মার্চ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) খিলক্ষেতের মধ্যপাড়া এলাকায় পাঁচ বছরের একটি শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে রবিউল (১৬) নামে এক কিশোরকে স্থানীয়রা মারধর করছিল। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে থানায় নেওয়ার চেষ্টা করে। তবে খিলক্ষেত বাজার এলাকায় পৌঁছালে কয়েকশত স্থানীয় বাসিন্দা পুলিশের ওপর হামলাসহ পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করে এবং অভিযুক্ত কিশোরকে মারধর করে।
গত মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) দিবাগত রাত রাত ২টার দিকে গুলশান বিভাগে অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (এডিসি) মো. আল আমিন হোসাইন আজকের পত্রিকাকে বলেন, হামলার শিকার কিশোরটি এখনো বেঁচে আছে। তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপালে নিয়ে যাওয়া হয়।
আজকের পত্রিকায় গত ১৯ মার্চ প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, খিলক্ষেতে পাঁচ বছরের শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে গণপিটুনির শিকার কিশোরের (১৬) শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল থেকে বুধবার ভোরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
একই তথ্য প্রথম আলো ও বাংলা ট্রিবিউনে গত ১৯ মার্চ প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকেও জানা যায়।
এছাড়া অন্যান্য সংবাদমাধ্যম সূত্রেও অভিযুক্ত কিশোরের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া যায়নি।
খিলক্ষেতে পাঁচ বছরের শিশুকে ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত কিশোরের শারীরিক অবস্থা জানতে আজকের পত্রিকা ফ্যাক্টচেক বিভাগের পক্ষ থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের আজকের পত্রিকার প্রতিনিধির বরাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ক্যাজুয়েলটি বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. শিশির কুমার ঘোষের সঙ্গে যোগাযোগ হয়।
তিনি বলেন, ‘খিলক্ষেতে গণধোলাইয়ের শিকার কিশোর ভালো আছে। তাঁর শারিরীক অবস্থা আগের চেয়ে অনেক ভাল। তবে সম্পূর্ণ সুস্থ হতে সময় লাগবে। যখন সে হাসপাতালে ভর্তি হয়, তাঁর শরীরের বিভিন্ন স্থানে থেতলানো জখম ছিল, মাথায়ও আঘাত ছিল। তবে মাথার ভেতরে কোনো রক্তক্ষরণ হয়নি।’
সুতরাং, ১০ বছরের বাচ্চা ছেলেকে পিটিয়ে মেরে ফেলার দাবিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে থাকা ব্যক্তি শিশু নন, কিশোর। তাছাড়া ওই কিশোর মারা যায়নি, এখনও বেঁচে আছে।
[ad_2]
Source link