Homeসাহিত্যফ্যাক্টচেক /পাকিস্তানে ভারতীয় ড্রোন ভূপাতিত করার দাবিতে ভাইরাল ভিডিওটি থাইল্যান্ডের

ফ্যাক্টচেক /পাকিস্তানে ভারতীয় ড্রোন ভূপাতিত করার দাবিতে ভাইরাল ভিডিওটি থাইল্যান্ডের


পেহেলগাম হামলার প্রতিশোধ নিতে গত মঙ্গলবার (৬ মে) দিবাগত মধ্যরাতে পাকিস্তানের অন্তত ৯টি স্থানে হামলা চালায় ভারত। এই হামলার সাংকেতিক নাম দেওয়া হয় ‘অপারেশন সিন্দুর’। বিপরীতে পাঁচটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার দাবি জানায় পাকিস্তান। এরপর দুই দেশের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার তথ্য সংবাদমাধ্যমে এসেছে।

পাকিস্তান ইসরায়েলের তৈরি ভারতীয় ড্রোন ভূপাতিত করেছে—এমন দাবিতে একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ানো হয়েছে। ভিডিওটির প্রথম ১৬ সেকেন্ডে একটি খোলা মাঠে ধোঁয়ার কুণ্ডলী নিয়ে একটি গোলাকার বস্তু আকাশ থেকে পড়তে দেখা যায়। সেটি আবার ঘুরতে ঘুরতে ছড়িয়ে যেতে দেখা যায়।

জাতীয় দৈনিক আমার দেশের ফেসবুক পেজে গতকাল শুক্রবার (৯ মে) রাত ৮টা ৩২ মিনিটে পোস্ট করা ভিডিওটি সবচেয়ে বেশি ছড়িয়েছে। ভিডিওর ক্যাপশনে লেখা, ‘ইসরায়েলের তৈরি ভারতের আরেকটি ড্রোন ভূপাতিত করলো পাকিস্তান! সৌজন্য হামিদ মীর।’ (বানান অপরিবর্তিত)

আজ শনিবার বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ভিডিওটি ৩ লাখ ৮৩ হাজার বার দেখা হয়েছে ও ২১ হাজার রিঅ্যাকশন পড়েছে। এতে ৩৯৩টি কমেন্ট পড়েছে এবং শেয়ার হয়েছে ১ হাজার ২০০।

পাকিস্তানের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক হামিদ মীর তাঁর এক্স অ্যাকাউন্টে গতকাল (শুক্রবার) বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে একই দাবিতে পোস্ট করা ভিডিওটিও বেশ ছড়িয়েছে। একই সময় পর্যন্ত ভিডিওটি ১৮ লাখ বার দেখা হয়েছে ও এতে ১৭ হাজার রিয়েকশন পড়েছে। এতে ৯৪৭টি কমেন্ট পড়েছে এবং রিপোস্ট (শেয়ার) হয়েছে ৩ হাজার ৩০০।

World Jamiat-ওয়ার্ল্ড জমিয়ত নামে ফেসবুক পেজ ও Khan Saddam নামে অ্যাকাউন্ট থেকে প্রায় একই ক্যাপশনে ভিডিওটি পোস্ট করা হয়েছে।

ভিডিওটির কিছু কি-ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চ করে บ่าวรุ่ง নামে একটি ফেসবুক পেজে প্রকাশিত একটি ভিডিওতে একই দৃশ্য দেখা যায়। এটি গত ৬ মে প্রকাশিত। এর সঙ্গে সম্প্রতি ছড়িয়ে পড়া ভিডিওর খোলা মাঠ, ধোঁয়া, গোলাকার বস্তুর দৃশ্যের মিল রয়েছে।

পাকিস্তান ইসরায়েলের তৈরি ভারতীয় ড্রোন ভূপাতিত করার দাবিতে ছড়ানো ভিডিওর সঙ্গে บ่าวรุ่ง নামে ফেসবুক পেজের ভিডিওর সাদৃশ্য। ছবি: স্ক্রিনশট

পাকিস্তান ইসরায়েলের তৈরি ভারতীয় ড্রোন ভূপাতিত করার দাবিতে ছড়ানো ভিডিওর সঙ্গে บ่าวรุ่ง নামে ফেসবুক পেজের ভিডিওর সাদৃশ্য। ছবি: স্ক্রিনশট

บ่าวรุ่ง নামে ফেসবুক পেজের ভিডিওটির ক্যাপশন বিদেশি ভাষায় লেখা। ক্যাপশনটি গুগলের ভাষা শনাক্তকারী টুলে কপি-পেস্ট করে দেখা যায় এটি থাই ভাষা। এটিকে ইংরেজিতে ভাষান্তর করলে এর অর্থ দাঁড়ায়, ‘তুমি আবার কোথায় যাচ্ছ? #তালাই।’ (বাংলায় অনূদিত)

บ่าวรุ่ง নামে ফেসবুক পেজটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, থাইল্যান্ডের একজন কন্টেন্ট ক্রিয়েটর এটি পরিচালনা করেন। গত ৩ মে তারিখে একই স্থানের আরেকটি ভিডিও পাওয়া যায়। এই ভিডিওতেও গোলাকার বস্তুকে একই রকম মাঠে ধোঁয়া ছেড়ে উড়তে দেখা যায়। এই ভিডিওর ক্যাপশনটিও থাই ভাষায় লেখা। এটি ফেসবুকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাংলায় ভাষান্তর করলে অর্থ দাঁড়ায়, ‘পিনহুইলের শক্তি ফুরিয়ে যাচ্ছে। #পিনহুইল।’

บ่าวรุ่ง নামে ফেসবুক পেজের ভিডিও। ছবি: স্ক্রিনশট

บ่าวรุ่ง নামে ফেসবুক পেজের ভিডিও। ছবি: স্ক্রিনশট

একই ফেসবুক পেজে গত ৬ মে একটি ভ্লগ ভিডিও পাওয়া যায়। যেখানে একটি গোলাকার বস্তু দেখা যায়। যাতে পরবর্তীতে আগুন লাগিয়ে আকাশে ওড়াতে দেখা যায়। এর একটি ফুটেজে দেখা যায়, এই গোলাকার বস্তুটি বাঁশ দিয়ে তৈরি। এর মাঝখানে স্টিলের গোলাকার বস্তু দিয়ে আটকানো। এটি মোটেও ড্রোন সদৃশ নয়।

บ่าวรุ่ง নামে ফেসবুক পেজের ভিডিও। ছবি: স্ক্রিনশট

บ่าวรุ่ง নামে ফেসবুক পেজের ভিডিও। ছবি: স্ক্রিনশট

บ่าวรุ่ง নামে ফেসবুক পেজটির একই জায়গায় ধারণ করা একাধিক ভিডিও পাওয়া যায়। এসব পোস্টের ক্যাপশনে স্থানের নাম হিসেবে থাইল্যান্ডের উথুমফনপিসাই প্রদেশের থুংচাই জেলার শ্রীসেকেট এলাকার নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এসব ভিডিওর সবগুলোতেই ধোঁয়া ছেড়ে এমন গোলাকার বস্তু আকাশে উড়তে দেখা যায়।

বিষয়টি নিয়ে অধিকতর জানতে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগের পক্ষ থেকে บ่าวรุ่ง নামে ফেসবুক পেজটিতে থাকা হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে যোগাযোগ করা হয়। অপরপ্রান্ত থেকে বাওরাং (Baoroong) নামে এক যুবক কথা বলেন। এই ভিডিওটির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, ভিডিওটি তিনি ধারণ করেছেন। এটি থাইল্যান্ডের রকেট উৎসবের আতশবাজির দৃশ্য।

রকেট ফেস্টিভ্যাল থাইল্যান্ড কি-ওয়ার্ডগুলো লিখে গুগলে সার্চ করে জানা যায়, এটি থাইল্যান্ডে বান ব্যাং ফাই রকেট ফেস্টিভ্যাল নামে পরিচিত এবং বিভিন্ন সময়ে দেশটির বিভিন্ন জায়গায় অনুষ্ঠিত হয়।

সুতরাং, পাকিস্তান ইসরায়েলের তৈরি ভারতীয় ড্রোন ভূপাতিত করেছে দাবিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ানো ভিডিওটি চলমান ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের ঘটনার নয়। প্রকৃতপক্ষে, এটি থাইল্যান্ডের রকেট উৎসবের আতশবাজির দৃশ্য।





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত