গত ২৭ এপ্রিল (রোববার) রাঙ্গামাটিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভিত্তিক আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) ও মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যবাসীরা স্থানীয় বাঙালিদের ওপর হামলা চালিয়েছে—এমন দাবিতে একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ানো হয়েছে। ভিডিওটি বিভিন্ন ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে একই ক্যাপশনে ছড়ানো হচ্ছে।
ভিডিওতে অসংখ্য মানুষকে বেশকিছু নৌকাযোগে পাহাড়ি নদীর পাড়ে ভিড়তে দেখা যায়। উঁচু পাড়ে সারি করে কাঠের গুঁড়ি রাখা। পাড়ে পৌঁছাতেই নৌকা থেকে কয়েকজন যুবককে খুব দ্রুত নেমে যেতে দেখা যায়। নেমে গিয়ে পাড়ে থাকা কিছু যুবকের সঙ্গে লাঠিসোঁটা নিয়ে সংঘর্ষে জড়াতে দেখা যায়। একটি ফুটেজে লাঠিসোঁটা দিয়ে এক পক্ষ আরেক পক্ষকে ধাওয়া করতে দেখা যায়। এছাড়া ভিডিওটির ওপরে ডানদিকে কোনায় ইংরেজিতে ‘পাহাড় টুয়েন্টিফোর ডিজিটাল’ নামে একটি লোগো দেখা যায়।
‘Mission Impossible’ নামে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে গত রোববার (২৭ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৭টা ৭ মিনিটে পোস্ট করা ভিডিওটি সবচেয়ে বেশি ছড়িয়েছে। ক্যাপশনে লেখা, ‘আজ রাঙ্গামাটিতে ইউপিডিএফ ও আরাকান বাসী বাঙালিদের উপর হামলা চালায়, ইউনূসের খেলা শুরু।’ (বানান অপরিবর্তিত)
আজ মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) বিকাল ৩টা পর্যন্ত ভিডিওটি ৬ হাজার বার দেখা হয়েছে ও রিঅ্যাকশন পড়েছে ১৪২ টি। পাশাপাশি ৭টি কমেন্ট পড়েছে এবং শেয়ার হয়েছে ৩০।
Md Hasan Ahmed, Megher Palok এবং Sha Alam Sakib নামে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে গত ২৭ এপ্রিলে প্রায় একই ক্যাপশনে ভিডিওটি পোস্ট করা হয়।
ভিডিওতে থাকা ‘পাহাড় টুয়েন্টিফোর ডিজিটাল’ লেখা লোগোর সূত্র ধরে গুগলে সার্চ করে রাঙামাটি থেকে প্রকাশিত অনলাইন সংবাদ মাধ্যম পাহাড় টুয়েন্টিফোর-এর ফেসবুক পেজে ভিডিও প্রতিবেদনটি পাওয়া যায়। এর সঙ্গে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওর দৃশ্যের মিল পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটি ২০২৪ সালের ৬ আগস্ট প্রকাশিত। এর সঙ্গে সম্প্রতি ছড়িয়ে পড়া ভিডিওর নদী, নৌকা, নৌকায় থাকা মানুষ, সংঘর্ষের সাদৃশ্য রয়েছে।
ভিডিওর ক্যাপশন থেকে জানা যায়, সেদিন পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙামাটি শহরের রাজবাড়ী এলাকায় ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) মধ্যে সংঘর্ষ হয়। পরবর্তীতে নিরাপত্তা বাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।
এসব তথ্যসূত্র গুগলে সার্চ করে জাতীয় দৈনিক যুগান্তরের ওয়েবসাইটে ২০২৪ সালের ৬ আগস্টে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০২৪ সালের ৬ আগস্ট সেই সময় দেশে চলমান অস্থির পরিস্থিতিতে ইউপিডিএফ সব হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবিতে রাঙামাটি শহরের রাজবাড়ী স্টেডিয়াম সংলগ্ন জেলা শিল্পকলা প্রাঙ্গণে মানববন্ধন ও সমাবেশের ডাক দেয়। সমাবেশে যোগ দিতে ইউপিডিএফের নেতা–কর্মীরা শহরে আসতে থাকলে জেএসএসের নেতা–কর্মীরা তাদের বাধা দেয়। এ সময় উভয় সংগঠনের নেতা–কর্মীরা মুখোমুখি অবস্থান নেন এবং একপর্যায়ে ধাওয়া-পালটাধাওয়া হয়। পরবর্তীতে সেনাবাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এই ঘটনায় অন্তত ১০ থেকে ১২ জন আহত হন।
জাতীয় দৈনিক প্রতিদিনের সংবাদ–এর ওয়েবসাইটে ২০২৪ সালের ৭ আগস্ট প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য জানা যায়।
এছাড়া, গত ২৭ এপ্রিল রাঙামাটিতে ইউপিডিএফ ও আরাকান রাজ্যবাসীরা স্থানীয় বাঙালিদের ওপর হামলা করেছে— এমন কোনো তথ্য দেশীয় ও আন্তর্জাতিক কোনো সংবাদমাধ্যমে পাওয়া যায়নি।
তবে গত ২৪ এপ্রিল রাঙামাটির সাপছড়ির যৌথ খামার মইনপাড়া এলাকায় প্রতিপক্ষের গুলিতে ইউপিডিএফের পরিচালক বাইট্টা চাকমা ওরফে লেত্তু চাকমা গুরুতর আহত হওয়ার তথ্য গণমাধ্যমে এসেছে।
সুতরাং, গত ২৭ এপ্রিল (রোববার) রাঙ্গামাটিতে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) ও মায়ানমারের আরাকান রাজ্যবাসীরা স্থানীয় বাঙালিদের ওপর হামলা চালিয়েছে দাবিতে ছড়ানো ভিডিও পুরোনো এবং ভিন্ন ঘটনার।