Homeসাহিত্যবই পড়ার স্মৃতি : হান কাং

বই পড়ার স্মৃতি : হান কাং

[ad_1]

নোবেলজয়ী হান কাং বলেছেন তাদের পারিবারিক লাইব্রেরি কথা, শৈশব-কৈশোরের পাঠ, লেখক হতে চাওয়া এবং খ্যাতিমান লেখকদের কী কী বই তার উপর প্রভাব ফেলেছে, বদলে দিয়েছে নিজের চেতনাবিশ্ব। যা ২০২৩ সালের ২৮ এপ্রিল ‘দ্য গার্ডিয়ান’-এ প্রকাশিত হয়েছে।  

আমার প্রথম দিকের বই পড়ার স্মৃতি

আমি যখন ছোট ছিলাম, তখন দেখেছি আমার বাবা, একজন তরুণ এবং দরিদ্র ঔপন্যাসিক, আমাদের আসবাববিহীন বাড়িটি বই দিয়ে ভরিয়ে রাখতেন। তাক থেকে যেন একধরনের অভিভূত ধারা গড়িয়ে পড়ত এবং মেঝে ঢেকে দিত, সেকেন্ডহ্যান্ড বইয়ের দোকানের মতো বিশৃঙ্খল স্তূপ তৈরি করত, যেখানে চিরদিনের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল গুছিয়ে পরিপাটি করে রাখার নিয়ম। বই আমার কাছে অর্ধজীবী প্রাণী, যা ক্রমাগত তাদের পরিসীমা বহুগুণে বৃদ্ধি ও প্রসারিত করে। সেসব বই ঘন ঘন এদিক-ওদিক সরিয়ে রাখার পরেও আমি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতে পারতাম। কেননা সেলফের সমস্ত বই আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছে। অচেনা পাড়ায় বন্ধু বানানোর আগে প্রতিদিন বিকেলে আমার সঙ্গে বই থাকত।

বেড়ে ওঠার সময় আমার প্রিয় বই

ছোটবেলায় আমি কোরিয়ান লেখকদের, যেমন কাং সো-চিওন কিংবা মা হে-সং, লেখা ছোটদের বই পড়েছি। আমার মনে আছে, একটি ফটো স্টুডিওর গল্প পড়ে আমি বিমোহিত হয়েছিলাম। গল্পটিতে মানুষের স্বপ্নের ছবি ছেপেছিল এবং রাতে গাছের ঘুমের জন্য দুঃখ অনুভব করা একটি শিশুর ছবি দাঁড়িয়ে গাইছে : ‘ওরে গাছ, ওরে গাছ, শুয়ে পড়ো এবং ঘুমাও।’ তবে একটি বিশেষ অবিস্মরণীয় অনূদিত শিশুতোষ বই ছিল অ্যাস্ট্রিড লিন্ডগ্রেনের `দ্য ব্রাদার্স লায়নহার্ট’।

কৈশোরের শেষ দিকে আমি রুশ সাহিত্য পড়ায় মগ্ন ছিলাম, বিশেষ করে দস্তয়েভস্কির দীর্ঘ ও সাবলীল ভাষায় রচিত উপন্যাসগুলো। এছাড়া পাস্তেরনাকের `ডেথ অব অ্যা পোয়েট’ ছিল আমার অন্যতম প্রিয় বই, যা আমি অনেকবার পড়েছি।

কৈশোরে যে বই আমাকে বদলে দিয়েছে

চৌদ্দ বছর বয়সে আমি লিম চুল-উ’-র ছোটগল্প `স্যাপইয়ং স্টেশন’ পড়ি। গল্পটি কোনো এক তুষারময় ঘুটঘুটে রাতের এক গ্রামীণ ট্রেন স্টেশনের পটভূমিতে রচিত। গল্পে কোনো অধিবক্তা নেই; শেষ ট্রেনের জন্য অপেক্ষারত যাত্রীদের আভ্যন্তরীণ স্বগোক্তিগুলো জগাখিচুড়ির মতো একত্রিত করেছে। একজন যখন কাশছে, তখন আরেকজন কথাবার্তা শুরু করার চেষ্টা করছে, আবার কেউ চুলায় কাঠের গুড়া ছুঁড়ে ফেলছে এবং আগুনের লেলিহান শিখার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি এই প্রাণবন্ত গল্পটি পড়ে মুগ্ধ হয়েছি এবং তখনই লেখক হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

যে লেখক আমার মন পাল্টে দিয়েছেন

প্রায় দশ বছর আগে আমি ডব্লিউ জি সেবাল্ডের অস্টারলিটজ পড়েছি। সমস্ত স্মৃতিগুলো একসঙ্গে স্থাপন করার জন্য তিনি যেভাবে অন্তর্জগতে প্রবেশ করেছিলেন, আমি ঠিক সেভাবেই নিজেকে স্থাপন করতে চেয়েছি। তারপর থেকে আমি তার বেশিরভাগ বই পড়েছি; ‘দ্য এমিগ্র্যান্টস’ই একমাত্র গ্রন্থ, যা আমি এখনো আমার হৃদয়ে লালন করি।

যে লেখকের কাছে ফিরে এসেছি

আমার জীবনে এমন একটা সময় ছিল, যখন আমি উপন্যাস লিখতে বা পড়তে পারতাম না। আমি কেবল ডকুমেন্টারি দেখতে পারতাম, কারণ কল্পকাহিনির সব চলচ্চিত্রই ছিল অসহনীয়। সেই সময় আমি অ্যাস্ট্রোফিজিক্সের বেশির ভাগ বই পড়ে সময় কাটিয়েছি। কিন্তু হোর্হে লুইস বোর্হেস ছিলেন ব্যতিক্রম। আমার বয়স যখন কুড়ির দশকে, তখন আমি তার লেখা বারবার পড়েছি, যেমন ‘দ্য বুক অব স্যান্ড’। এছাড়া একাধিকবার পড়েছি ‘শেক্সপিয়ারের স্মৃতি’। এসব গ্রন্থ থেকে আমি সাহিত্যের রস নিংড়ে নিয়েছি।

পরবর্তী জীবনে যেসব বই আবিষ্কার করেছি

প্রিমো লেভির ‘দ্য পিরিয়ডিক টেবল্’, ইতালো ক্যালভিনোর ‘ইনভিজিবল্ সিটিজ’, জেমস জয়েসের ‘ডাবলিনার্স’, অরুন্ধতী রায়ের ‘দ্য গড অব স্মল থিংস’ এবং অ্যান কারসনের ‘নক্স’।

বর্তমানে যে বইগুলো পড়ছি

থেরেসা হাক কিউং চা-র ‘ডিকটি’ এবং জেনি এরপেনবেকের ‘দ্য এন্ড অব ডেজ’।

যেসব বই পড়ে স্বস্তি বোধ করি

বিছানায় যাওয়ার আগে আমি বেশিরভাগ বই পড়ি গাছপালা সম্পর্কিত, যেমন জেন গুডালের ‘সিডস অব হোপ’ বা পিটার ওহলেবেনের ‘দ্য হিডেন লাইফ অব ট্রিজ’। আমার যখন একাকিত্ব এবং মৌনতা প্রয়োজন, তখন আমি যে বইটি পড়ি তা হলো মিশেল স্নাইডারের ‘গ্লেন গোল্ড পিয়ানো সলো’।

টীকা : মূল লেখায় নেই, তবে সময়কাল বোঝার জন্য দেওয়া হলো।
বর্তমান বলতে লেখক ২৮ এপ্রিল ২০২৩ সালের আগে বুঝিয়েছেন। কেননা তার এই আলোচনাটি সেদিনই প্রকাশিত হয়েছে। 



[ad_2]

Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত