Homeসাহিত্যমিতিয়ার ভালোবাসা ।। অধ্যায়ー১

মিতিয়ার ভালোবাসা ।। অধ্যায়ー১

[ad_1]

ইভান আলেক্সিভিচ বুনিন রাশিয়ান কবি ও ঔপন‌্যাসিক, যিনি রুশ সাহিত্যে প্রথম নোবেল পুরস্কার পান ১৯৩৩ সালে। ম‌্যাক্সিম গোর্কি বুনিনকে রাশিয়ার জীবিত লেখকদের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম বলে বিবেচনা করেছিলেন। রোমান্টিক গতিময়তায় লেখা তার ‘মিতিয়াস লাভ’ উপন্যাসটি যৌবনের প্রেমবোধ ও অনুভব নিয়ে সরল, নিরীহ ও বিয়োগান্ত এক মনোগ্রাহী লেখা। সাধারণকে অসাধারণে পরিণত করার গোপন রহস্য ও নিপুণ গদ‌্যময়তা ইভান বুনিনের লেখার অন‌্যতম বৈশিষ্ট‌্য। ‘মিতিয়াস লাভ’ ফরাসি থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন, ম‌্যাডেলিন বয়েড এবং বইটির ভূমিকা লিখেছেন আর্নেস্ট বয়েড। 

অতীতের দিকে তাকিয়ে মিতিয়ার মনে হলো ৯ মার্চ ছিল মস্কোতে তার সর্বশেষ সুখের দিন, যদিও এই ভাবনাটা তার মনে এসেছিল অনেক পরে।

কাতিয়ার সঙ্গে সে টিভারস্কয়রের প্রশস্ত রাস্তা ধরে হাঁটছিল। তখন মধ‌্যদুপুর, শীত যেন নিজেকে সমর্পিত করছিল বসন্তের কাছে, সূর্যের তাপে রীতিমতো তপ্ত ছিল চারপাশ, আর সাদা সাদা ধ‌্যানী বকেরা ফিরে এসেছিল তাদের উষ্ণতা, আলো আর আনন্দ নিয়ে। সবকিছু ছিল স‌্যাঁতস‌্যাঁতে, বরফগুলো ছাদ থেকে গলে পড়ছিল টপটপ করে, রক্ষণাবেক্ষণকারীরা পথের উপর পড়ে থাকা বরফের টুকরোগুলোকে ভেঙে দিচ্ছিল, এবং ছাদের উপর থেকে ভেজা বরফগুলোকে শাবল দিয়ে সরাচ্ছিল।

সর্বত্রই ছিল মানুষের জনসমাগম। এমনকি মেঘগুলিও যেন গলে গলে সাদা পাতলা ধোঁয়া হয়ে মিলিয়ে যাচ্ছিল আকাশের নীলের সঙ্গে। পুরো প্রশস্ত রাস্তা জুড়ে মানুষের কালো কালো মাথায় দূর থেকে রাস্তাটিকে মনে হচ্ছিল কালো। পুশকিনের ভদ্র ও চিন্তামগ্ন বিশাল মূর্তিটি যেন ভেসে উঠেছিল দূর থেকে, আর তার কাছে ভালোবাসার বিহারের ছাদটা যেন উজ্জ্বল হয়ে জ্বলজ্বল করছিল। তবে সবচেয়ে যেটা উল্লেখ্য, কাটিয়াকে অপূর্ব লেগেছিল সেদিন। সে মিতিয়ার খুব অন্তরঙ্গ হয়ে হাঁটছিল, কখনও কখনও শিশুদের মতো উচ্ছ্বাসে তার হাত ধরে রাখছিল, তাকাচ্ছিল তার দিকে। অন‌্যদিকে মিতিয়া খুবই সুখীবোধ করছিল, কিন্তু ততটা দেখাচ্ছিল না, মফস্বলের ছেলেদের মতো এত দ্রুত হাঁটছিল যে কাতিয়ার তাল মেলাতে খুব কষ্টই হচ্ছিল।

পুশকিনের স্মৃতিস্তম্ভের কাছে এসে সে ফেটে পড়ে বলল, তোমার এত বড় মুখটা দেখতে কেমন লাগে যখন তুমি হাসো! কেমন কেবলাকান্ত ভাব! রাগ করো না। তোমার হাসির জন‌্যই তোমাকে এত ভালো লাগে—আর তোমার এত বড় বড় চোখের মণি!

কাতিয়ার এসব নানা ধরনের কথায়, মিতিয়ার আনন্দ, বিরক্তি ও হাসি পাচ্ছিল, কিন্তু এইসব অভিব‌্যক্তি সে চেপে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছিল। সামনে ভেসে ওঠা স্ট‌্যাচুর দিকে তাকিয়ে, সে নরম স্বরে বলল, ‘যেহেতু তুমি ছেলেমানুষীর কথা বলছ, আমার মনে হয় তুমিও আমার মতোই ছেলেমানুষ যদিও তুমি আঠারো বছরের। আর আমি যদি দেখতে বাইজেনটাইনদের মতো হয়ে থাকি, তাহলে তুমিও চীনা সম্রাজ্ঞীদের মতো। এই যে বাইজেনটাইনদের নন্দনতত্ত্ব, তাদের জীবন-যাপনের ধরন সব তোমার মাথার মধ্যেই কাজ করছে। তোমার মা-কে আসলে আমি বুঝতে পারছি না।’ (এখানে মায়ের দেয়া শিক্ষার দিকে ইঙ্গিত করা হচ্ছে)

আমার মনে হয়, ‘আমার মায়ের জায়গায় তুমি থাকলে আমাকে কনভেন্টে (নানরা যেখানে থাকে) আটকে রাখতে।’

‘না, আমি তোমাকে কনভেন্টে আটকে রাখতাম না।’ খুব শান্ত ও গম্ভীর স্বরে সে বলল, ‘আমি তোমাকে বোহেমিয়া থেকে দূরে রাখতাম, তথাকথিত শিল্পীদের কাছ থেকে, ওই সব স্টুডিও থেকে যেখানে ভবিষ‌্যতের শিল্পীরা, যাদুকরেরা রয়েছে, আর থিয়েটার স্কুল থেকে।

তুমি নিজেই বলেছিলে বুকোভস্কি তোমাকে স্টেলনাতে নৈশ ভোজের নিমন্ত্রণ করেছে, এগরভ তার ভাস্কর্যে মৃত মানুষের মডেল হওয়ার জন‌্য তোমাকে বলেছে, এবং স্বাভাবিকভাবে এসব সম্মান পেয়ে তুমি একেবারে বখে গেছ।’

‘আমি এসব কথাকে মোটেই তোয়াক্কা করি না। শিল্পকে আমি কখনোই পরিত‌্যাগ করব না, এমনকি তোমার জন‌্যও না। তুমি যদি বারণ কর, তারপরেও পরিত‌্যাগ করব না। হতে পারে, তুমি যতটা খারাপ আমাকে ভাবো, আমি ততটাই খারাপ’—যদিও মিতিয়া কখনোই তা বলেনি—‘আমি বখে যেতে পারি, কিন্তু আমি যেমন তোমাকে তেমনই গ্রহণ করতে হবে। দয়া করে, ঈশ্বরের শপথ করে বলছি, এখন ঝগড়া করো না, ঈর্ষান্বিত হয়ো না, অন্তত আজকের জন‌্য যখন আজকের দিনটা এত সুন্দর! তুমি কী জানো না! সব কিছু সত্ত্বেও তুমিই একমাত্র যাকে আমি ভালোবাসি! একমাত্র তোমাকেই!’ সে খুব নিচু স্বরে দৃঢ়তার সঙ্গে কথাগুলি বলেছিল, তারপর তার দিকে সরাসরি তাকিয়ে, চোখ মেলে ধরে, ধীরে ধীরে চিন্তামগ্ন হয়ে কৃত্রিমতার সাথে ভান করে বলছিল—

আমাদের মধ্যে রহস‌্য আছে
আমাদের হৃদয় দুটো এক হয়ে আছে

কথাগুলি মিতিয়াকে খুবই বিরক্ত করল। তবে সব মিলিয়ে সেই দিনটি যেমন সুন্দর ছিল, তেমনি দুঃখে ভরা অপ্রীতিকরও ছিল। কাতিয়া যে ওর ছেলেমানুষি নিয়ে প্রথমবারের মতো মজা করল তা কিন্তু নয়, সে মজাটা করেছিল ইচ্ছাকৃতভাবে। প্রায়ই কাতিয়া ভাব দেখায় যে সে মিতিয়ার থেকে বয়সে বড়, এবং অনিচ্ছাকৃতভাবে ও স্বাভাবিকভাবে তার এই বড়ত্ব মিতিয়াকে কষ্ট দেয়, তার মনে হতে থাকে এটি কাতিয়ার নিজেকে মিতিয়ার থেকে বড় করে দেখানোর একটি গোপন বিকৃতি। এই যে ‘সব কিছু সত্ত্বেও’ ‘সব সত্ত্বেও তুমিই সেরা’ সে যে নিচু স্বরে এত ভালোভাবে ভান করে তাকে বলল, সেভাবে না বলে সরাসরি বলা যেত। মিতিয়ার ভাবনায়, এটাই ছিল সবচেয়ে বিরক্তিকর যা ভান। মস্কোতে তাদের শেষতম সুখের দিনটির বিষয়ে সে যখন পরে ভাবছিল, তার মনে পরছিল সেই ৯ মার্চের সুন্দর চমৎকার দিনটিতে, কাতিয়া যেভাবে লাইনগুলি আবৃত্তি করেছিল তা মিতিয়ার স্মৃতিতে এমন ব‌্যথাময় এক অনুভব দিলো যা কাতিয়ার প্রতি তার ঘৃণা ও ঈর্ষাকে জন্ম দিয়ে বাড়িয়ে তুলছিল।

সেই দিনই তারা যখন কুজনেটজকি ব্রিজ হয়ে ফিরে আসছিল, যেখানে কাতিয়া জিমারমেনের দোকান থেকে রাশিয়ার বিখ‌্যাত পিয়ানোবাদক স্ক্রিয়াবিনের কয়েকটি মিউজিক রেকর্ড কিনল, এবং কথা বলতে বলতে সে হঠাৎ করে একসময় বলল, ‘তোমার মা-র কথা ভাবলে আমার কেমন ভয় করে, তা নিয়ে তোমার কোনো ধারণাই নাই।’

তাদের এতদিনের প্রেমের দিনগুলিতে প্রেমের পরিণতির দিকে কোনো ইঙ্গিতই ছিল না। কিন্তু এখন এই খোলা আকাশের নিচে কাতিয়া তার মায়ের সম্পর্কে যে সব কথাবার্তা বলছে তা খুব সাধারণভাবে নয়, যেন ক‌াতিয়া জেনে-বুঝইে মিতিয়ার মা-কে তার শাশুড়ি হিসাবে ভাবছে। চলবে



[ad_2]

Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত