[ad_1]
পুরুষ
প্রতিটি পুরুষে থাকে একটি গুমোট শূন্য ঘর
গুহাচিত্রে ঠাসা, ঝাঁজালো আদিম গন্ধ করিডোরে
পেশিতে বন্যতা, নখে লাল রক্ত, স্বভাব তৃষ্ণার্ত
ঊরুসন্ধি জুড়ে থাকে পেন্ডুলাম গলন্ত ঘড়ির
প্রিয় খাদ্য বনমোরগের মাংস, দুধেল জ্যোৎস্না
পা-দুটো আজন্ম যাযাবর, পিঠে তূণ আর তীর
ভাল্লাগে নরম মাটি আর অদ্ভুত হলকর্ষণ
যেকোনো যমুনা যদি খুলে দেয় জলের তিমির
যদিও ঘরটি বুকে তবু সে চির বোহেমিয়ান
তীব্র শিস দিয়ে ডাকে হাওয়া অরণ্যে, চিলেকোঠায়
অস্থির বন্দর, বুকে দুলে ওঠে বিকট জাহাজ
জাহাজডুবির আগে ভালোবাসে ঘর ও সন্তান
মর্গের টেবিল পাতা ঘর, মর্গে কি বারান্দা থাকে?
নারী তবু খোঁজে মৃত্যুচিতা; সুদূর পুরুষটিকে।
যাদুঘর
পুরুষ পরিব্রাজক, নারীরা রহস্য জাদুঘর
রুদ্ধ স্বর্ণদ্বার খুলে যাবে শুধু প্রণয় টিকেট
শোনাবে গজল তার দেহবন্দি নদী, ভেজাস্বর
মুছে দেবে ঝুলকালি। শর্তহীন আসবে নিকটে
যাদুঘরে ঢুকবার জাদু, তার পরিখা খনন
পুরুষ মুখস্থ জানে। জানে প্রত্নতত্ত্ব, চিত্তলিপি
রহস্যতার মোড়ক খোলে। ছুটে আসে তীব্র মন
যেভাবে ফোয়ারা ছোটে, পানপাত্রে খুলে গেলে ছিপি
যেন নারী প্রাচীন হরপ্পা অথবা মহেঞ্জোদারো
খুঁড়ে তোল ইতিহাস, পুরাকীর্তির স্মারকে ভরা
উন্মাদক খাঁজ, তাতে টেরাকোটা আর পেতে পারো
চন্দনচর্চিত সিঁড়ি। অভিপ্রেত নেশার তহুরা
খেজুরের রসে ভরা যেন এক খাজুরাহো নারী
তুমিও পরিব্রাজক। জাদুঘর ঘিরে আছে শাড়ি।
হাওড়
একটা ছাব্বিশ বছরের হাওড় ক্ষুধার্ত রাত্রির নিচে
বুক খুলে দাঁড়াল, গোপন খলবলে মৎস্যদের নিয়ে
বাতাসে আঁশটে গন্ধ, জলভর্তি হাতছানি আর বর্ষা ঋতু
একটা পাতাল রেলে চুম্বকের মতো টেনে নিল আমাকে
ভয়ংকর ভ্রমণের দিকে
হাওড়ের বোতাম পেরিয়ে তার গভীর প্রদেশে
রেলজংশনের রহস্যে সামান্য বিরতি নিয়ে
আমার বহুদিনের পালিত তৃষ্ণারা
ছড়িয়ে পড়ল
হাওড়ের শিরা-উপশিরায়!
এ শীতে
ও জন্তু আমার, এ শীতে আমাকে কিছু সঙ্গ দিস
নতুন লেপের নিচে কাঁপছে একাকী শীত, আর
হাড়ের ভেতর নৈঃসঙ্গ্যের উলে চরকা কাটছে শীতপেত্নী
হিমের করাল দাঁত টুকরো টুকরো করে ফেলে গেছে,
তোর তীব্র ঔষধিপূর্ণ লালায় ভরে দিস জখম আমার
শৈত্যপ্রবাহরা জমে পাহাড় হয়েছে শীতের কামিজে
কুয়াশায় ভেজা একাকিনী দেশলাই, কীভাবে বা জ্বলি!
নিদ্রাহীন বেতার তরঙ্গভরা হাওয়ায় গুঙিয়ে উঠছে
ঘুমপাড়ানো রক্তের ঝুমঝুমি, শরীর হাতড়ে দেখি
কাঁপিতেছে একা বরফের টুপি পরা অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদগুলো
জন্তু, তোর গরম নিশ্বাস ফুঁকে দিস তুষার টানেলে
আমার দরিদ্র, বস্ত্রহীন মাংসের তন্তুকে গ্রাস কর
বিশাল হা-এর মধ্যে, বারোমাস যেখানে জ্বলছে ক্ষুধাঋতু
পশমের আচ্ছাদনে শীতার্ত আত্মার টুটি চেপে ধর,
গরম থাবার মধ্যে এ নিঃস্ব শরীর লুকিয়ে রাখ
শীতে কুণ্ডলী পাকিয়ে যেন সে না কাঁদে আর,
যেন সে আত্মহত্যা ভালোবাসে, তোর উষ্ণ, হিংস্র আত্মার ভেতর!
প্রস্থান
পুরুষ প্রস্থান করে ষোলকলা পূর্ণ হলে প্রেমের শরীরে
দাহ্যকাঠ শেষ হয়, জ্বলনে, অঙ্গারে
যতিহীন যাত্রা ভেবে একা গিয়েছ শত্রুছায়ায়
অন্ধ জলযানে, অশ্রুফেনায় ভেসে সীমার অসীমে, মোহমায়ায়
পারদের ওঠানামা, মুগ্ধতার রসায়নে নীল লিটমাস লাল
আড়ালে বাড়ায় জল তস্করের মন্ত্র পেয়ে জলধি বিশাল
হিমাদ্রির তরল আগুন রক্তের ভেতরে জমা
অগ্নিমণ্ডিত তুষারে ঢেকে গেছে পথ, তুমি বিপদসীমায়
আপাদমস্তক কদমের রেণু, ‘ভুলো না আমাকে’
ঘুরে গেছে চাকা আর মন, ছেঁড়া চিঠি পড়েছে বিপাকে
বীর্যব্যাংক
কেউ একজন তোর গর্ভমুণ্ডে ঢেলে গেছে বিষ
ফুলে-ফেঁপে উঠছিস, ঋতুবন্ধ আনাড়ি কিশোরী
তোর গর্ভে ঢুকে গেছে ফুসলিয়ে একটা শিরীষ
তার ডালপালা নিয়ে ফুঁসে ওঠে বাহকশরীর
গর্ভপাত, জ্বর, ফের বর্জ্য, ধাতু সবুজ জঙ্ঘায়
বহুবল্লভের বল্লমে ফুটপাতে বধির ঈশ্বরী
মালবাহী যান, বীর্যপাত্র ভেঙে কোথায় ছড়াবি?
ঘর নেই তোর, তুই শুধু রন্ধ্র, আনন্দ-গহ্বর
নিশিকন্যা, দিনে প্রস্তর নিক্ষেপ, রাত্রিতে আবির
ক্লেদ ও কলুষ জমে, পুরুষের বিষে স্ফীতোদর
তোর গর্ভকান্না শুনবে না কেউ, তুই ভ্রাম্যমাণ বীর্যব্যাংক
তোর দিকে তাক করা সামাজিক অস্ত্র, ধর্মযন্ত্র
পাদ্রি ও পুরুত আর ধর্ষকামী পুরুষের অগ্নিবাহী ট্যাংক
প্রেমিক ছিল না কেউ
প্রেমিক ছিল না কেউ, অগ্রে ও অন্তিমে
ছিল প্রেমিকের নামে মাটির মুখোশ
যারা ছটফট করে অনিদ্র নৌকোয়
মাংসভুক সেইসব হিংস্র ছায়া লেগে
পচে যায় একা একা লালাভ ডালিম
শূন্য ঘটিগুলো ভেসে যায় শূন্যগর্ভ রাত্রে
কোথাও কিছুই নেই, তোমার সন্দেহ ছাড়া
কুড়াই হাওয়াকান্না, হু হু পথ একা পেয়ে
পুরুষরূপে আমাকে ধাওয়া করে আর
পালিয়ে ফেরত আসি, নিজেরই কাছে
আমাকে দু’বাহু মেলে টেনে নেয় আমার বিছানা!
আমার যেখানে সাধ, কখনও যেতে কি পারি?
ধুরন্ধর দেহগুলো, তাতে তেতে আছে তরবারি!
মোহর
এইসব ঘৃণার মোহর ভালোবাসি বলে তোকে দিই
না হলে সম্ভব ছিল একটা পুরুষদেহে এত ক্লেদ মাখা?
ঘৃণার বল্লমে গেঁথে তোর দিকেই ছুঁড়ে দেওয়া
বিবমিষা জানি না পেরেছে কিনা ছুঁতে
নিষিদ্ধ হয়েছে আজ শুধুই আমার জন্য তোর যে এলাকা
ভালোবাসি বলেই ঘৃণা ও কান্নার পর শাড়িভর্তি
জ্বলে ওঠে রঙধনুগুলো
জখমের মধ্য থেকে থকথকে রক্ত ছিটকে বেরোয়
আর তাতে লাল হয়ে ওঠে কবন্ধ ভূগোল
তার থেকে ঘৃণাকণাগুচ্ছ অঞ্জলিতে তুলে নিই
এইসব ঘৃণার মোহর প্রেম ছিল বলে আজ তোকে দিই।
ঘৃণাপাত
তুমি ঢেলে দিলে ধাতুফুল, তুলতুলে নদীর ভেতরে
ছটফট করছিল তার বিন্দু, সিন্ধুর পরিধি ছুঁয়ে
বোবা এক বিদ্যুৎতাড়নায় রাত্রির কৌপীন খুলে
কাপালিক খেলেছিল গুহাগুল্মে ত্রিপাল খসিয়ে
থরো থরো জড়ো হলো প্রেম, হৃদয়ের কালশিটে
মুছে গিয়ে বুকে পিঠে দেখি তার নানাবর্ণ উল্কি
নদীর গর্ভিণী জল, ফুলে-ফেঁপে উঠল ন’মাসে
দিনরাত্রি জ্বলে মনে সেইসব রঙিন ফুলকি
মায়াশেকলের মধ্যে তাকে আর পায় না বালিকা
উড়ে গেছে পাখি, নদীতে তাহার ছায়া মৌন ও মৃদু
নিজের যোনিতে নিষ্ঠুর ছুরিতে ঘটে গেছে গর্ভপাত
উগরে দিয়েছে ঘৃণা, অবসাদ আর শরীরের ধুধু!
বিদায় বলো
আমাকে বিদায় বলো, যখন অনীহা এসে ঘিরে ফেলে
তাঁবু, যদি শিবিরে খাবার তেতো লাগে
বিবমিষা জেগে থাকে চাঁদের দু’বৃন্তে, যদি গলে
শেষ হয় শীতল ইস্পাত খাঁড়িতে, লবণজলে
স্তনকারাগারে বন্দি ধারাগুলো যদি
তোমার চৈত্রের ভাঁপে বাষ্প হয়ে আকাশে মিলায়
আমাকে বিদায় বলো, না বলে যেয়ো না
যদি অন্ধ হয় দেখার আয়না, ঘৃণা এসে মিলে
দেহমিলনের পর প্রেমধ্বস্তনীলিমায়!
[ad_2]
Source link