Homeজাতীয়আত্মশৃঙ্খলার ১০ নিয়ম যা ধনীকে করে আরও ধনী এবং দরিদ্রকে করে সংগ্রামী

আত্মশৃঙ্খলার ১০ নিয়ম যা ধনীকে করে আরও ধনী এবং দরিদ্রকে করে সংগ্রামী


এমন কেন হয় যে ধনীরা আরও ধনী হয় কিন্তু দরিদ্ররা নিত্যদিন অতিবাহিত করতে সংগ্রাম করে? আপনি কি কখনো ভেবে দেখেছেন? সম্পদের এই অসমতার পিছনে বিভিন্ন কারণ থাকলেও ঘুরেফিরে কিছু আত্মশৃঙ্খলার অভ্যাসকেই চিহ্নিত করতে হয়। সুখবর হলো আত্মশৃঙ্খলার এই নিয়মগুলো গোপন কোন বিষয় নয়। যেকোন ব্যক্তি এই নিয়মগুলোর অনুশীলন এবং আত্মস্থ করতে পারে। 

 

এই নিবন্ধে আত্মশৃঙ্খলার ১০টি নিয়ম নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে যা ধনীরা কঠোরভাবে অনুসরণ করে। এই নিয়মগুলো বোঝা কেবল অন্যদের অভ্যাসের প্রশংসা করা নয় বরং নিজের আর্থিক ভবিষ্যতে এই নিয়মগুলো কিভাবে কাজে লাগানো যায় তা অনুধাবন করা। 

 

১. কৌশলগত সময় ব্যবস্থাপনা

ধনীরা যানে সময় তাদের সবথেকে মূল্যবান সম্পদ। সময় নষ্ট করে এমন কাজকর্ম তারা কঠোরভাবে বর্জন করে। আপনি খুব কম সফল মানুষকে দেখবেন যারা সিনেমা, টিভি শো, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে। এই সময়গুলো তারা ‘ডিপ ওয়ার্ক’ সেশনের মাধ্যমে আত্মোন্নয়ন এবং কিভাবে আয়ের উৎস বাড়ানো যায় সেই ধ্যানে মগ্ন থাকে। 

 

অন্যদিকে যারা আর্থিক সংকটের মধ্য দিয়ে যায় তারা নিজেদেরকে প্রতিক্রিয়াশীল সময়ের মধ্যে আবদ্ধ করে ফেলে। জীবিকা টিকিয়ে রাখতে তারা একাধিক কাজের মধ্যে নিজেদের জড়িয়ে ফেলে এবং সময়ের কৌশলগত ব্যবহার করতে পারে না। 

 

সফল ব্যক্তিরা ‘না’ বলতে জানে। তারা জানে কোন কাজে সময় দিলে ভালো ফলাফল আসবে কোন কাজে আসবে না। কিন্তু যে ব্যক্তি আর্থিক সংকটে আছে সে কোন কাজের সন্ধ্যান পেলে না করতে পারে না। 

 

২. বিলম্বিত সন্তুষ্টি 

সফল ব্যক্তিরা তাৎক্ষণিক ফলাফলের থেকে ভবিষ্যতের দীর্ঘমেয়াদি ফলাফলে বিশ্বাস করে। তারা উপলব্ধি করতে পারে আজ ৫০০ ডলার খরচ না করে বিনিয়োগ করলে তা ভবিষ্যতে বৃদ্ধি পাবে। আয়ের তুলনায় কম ব্যয় করা, অপ্রয়োজনীয় খরচের পরিবর্তে বিনিয়োগ করার মাধ্যমে তারা ভবিষ্যতে স্বচ্ছল থাকে।  

 

অন্যদিকে যারা দৈনিক খরচ মেটাতে হিমশিম খায় তাদের জন্য বিলম্বিত সন্তুষ্টির অনুশীলন করা প্রায় অসম্ভব হয়ে যায়। বাইরে থেকে যেটা মনে হতে পারে দুর্বল আর্থিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ, হতে পারে এর পিছনে দীর্ঘস্থায়ী সংকট এবং হতাশা কজ করছে যা সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণকে ব্যহত করে।

 

৩. ধারাবাহিক বিনিয়োগ অভ্যাস  

ধনীরা বিনিয়োগকে এমনভাবে প্রচলিত রাখে যেখানে আপোসের কোন সুযোগ থাকে না। তারা বিনিয়োগের জন্য টাকা রেখে নিজেদের দৈনন্দিন খরচ করে। বাজার দামের ওঠানামা তাদের বিচলিত করে না। তারা ধৈর্য ধরে বিনিয়োগ করতে থাকে যা তাদেরকে চক্রবৃদ্ধি হারে লাভ এনে দেয়। 

 

অন্যদিকে যে ব্যক্তি আর্থিক সংকটে আছে তাকে জরুরি প্রয়োজনে টাকা খরচ করতে হয়। সেক্ষেত্রে তাদের বিনিয়োগের পরিকল্পনা আর্থিক জরুরি অবস্থার সাথে পেরে ওঠে না।

 

৪. আজীবন শেখার মানসিকতা 

ধনীরা শিক্ষাকে আজীবন চলমান একটি প্রক্রিয়া হিসাবে দেখে। তাদের মতে শিক্ষা এমন কোন বিষয় নয় যেটা স্কুলজীবনের সাথে শেষ হবে বরং তারা নিজেদেরকে বই, পডকাস্ট, বিভিন্ন শিক্ষামূলক প্রোগ্রামের সাথে নিয়োজিত রাখে। যাদেরকে তারা জীবনের রোল মডেল মনে করে তাদের কাছ থেকে পরামর্শ নেয়। সফল ব্যক্তিরা মাসে অন্তত একটি বই পড়ে থাকে যাতে তাদের জ্ঞান এবং দক্ষতা ক্রমান্বয়ে ব্রদ্ধি পায়। 

 

অন্যদিকে যারা একাধিক কর্মে নিয়োজিত থাকে তাদের জন্য বাড়তি জ্ঞানার্জন করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। এছাড়া কোর্স এবং কোচিং প্রোগ্রামের খরচ বহন করাও তাদের জন্য কষ্টসাধ্য। এসবকিছু ব্যতি রেখে সঠিক জ্ঞান এবং পরামর্শের অভাবে যে ফ্রি সময় এবং উৎস থাকে তা থেকে জ্ঞানার্জন করতে ব্যাহত হয়।  

 

৫. কৌশলগত যোগাযোগ তৈরি

ধনী ব্যাক্তরা তাদের চারপাশে এমন ব্যাক্তিবর্গদের রাখে যাদের সহচর্যে তাদের চিন্তাচেতনা বিকশিত হয়। সফল ব্যাক্তিরা বিভিন্ন সংস্থার সাথে যুক্ত থাকে, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রগণ করে এবং তার থেকে সফল ব্যাক্তিদের সাথে যোগাযোগ তৈরি করে। যেমন কথায় বলে ‘তোমার যোগাযোগের পরিধি বলে দেয় তুমি কতোটুকু মূল্যবান’। 

 

অন্যদিকে যারা আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল থাকে তাদের জন্য সামাজিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রের সীমাবদ্ধতার কারণে তাদের ওই যোগাযোগটা তৈরি করা হয়ে ওঠে না। তাছাড়া সামাজিক শ্রেণিভেদে একেকজন একেকরকম যোগাযোগের স্টাইল তৈরি করে।   

 

৬. হিসাব করে ঝুঁকি নেওয়া

ধনীরা এটা অনুধাবন করে যে কোন সফলতা ঝুঁকি ছাড়া আসে না। কিন্তু তারা অন্ধভাবে কোন ঝুঁকি নেয় না বরং তারা সবকিছু ভেবেচিন্তে ঝুঁকি গ্রহণ করে। কোন বিনিয়োগ করার পূর্বে, ব্যবসা বড়ানোর সিদ্ধান্তে বা ক্যারিয়ার পরিবর্তনের ক্ষেত্রে তারা সবকিছুর এপিঠ ওপিঠ দেখেশুনে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। 

 

কিন্তু যারা আর্থিক সুরক্ষা ছাড়া বেঁচে থাকে তাদের জন্য ছোট রিস্কও বড়ধরনের রিস্ক হয়ে যায় যা তদের জন্য ভয়ঙ্কর হতে পারে। এজন্য আপাত দৃষ্টিতে তারা ঝুঁকি গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকে। 

 

৭. শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষা

ধনীরা তাদের স্বাস্থ্য, শারীরিক ব্যায়াম, পুষ্টি এবং মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে সচেতন থাকে। এতে করে তারা দীর্ঘমেয়াদে সুস্থ ও উৎপাদনশীল থাকে।  

 

কিন্তু যাদের পর্যাপ্ত আয় নেই তারা নিয়মিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে পারে না। খারাপ খাদ্যাভ্যাস, মানসিক চাপ সব মিলিয়ে তারা আরও পিছিয়ে পড়ে। 

 

৮. খরচে নিয়ন্ত্রণ

ধনীরা জানে কোন খরচে সম্পদ বাড়ে এবং কোনটাতে কেবল অর্থ অপচয় হয় এবং তারা সেভাবেই তাদের অর্থ খরচ করে। অন্যদেরকে দেখাতে খরচ না করে যে কাজে প্রয়োজন তারা সে কাজেই অর্থ খরচ করে। 

 

কিন্তু বাজার সবসময় আবেগ, অনুভূতিকে লক্ষ্য করে তাদের পণ্য  বিক্রি করে। আবেগের বশবর্তী হয়ে এবং আর্থিক চাপে থাকা মানুষ ভুল খরচ করে ফেলে। 

 

৯. স্পষ্ট আর্থিক লক্ষ্য

যারা সফল তারা সবসময় একটি নির্দিষ্ট আর্থিক লক্ষ্য স্থাপন করে। শুধু ধনী হওয়ার ইচ্ছাপোষণ করা নয় বরং প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়া ‘৪৫ বছরের মধ্যে আমি লাখপতি হব’ এবং সেভাবে কাজ করতে হবে। 

 

কিন্তু যারা মাসের খরচ ঠিকমতো চালাতে পারে না তারা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করতে ভয় পায় এবং তাদের আর্থিক অবস্থার কারণে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা কঠিন হয়ে যায়। 

 

১০. একাধিক আয় উৎস তৈরি

ধনীরা কখনো একমাত্র আয়ের উপর নির্ভর করে থাকে না। চাকরি, ব্যবসা, বিনিয়োগ, রিয়েল এস্টেট একাধিক দিকে তারা তাদের আয়ের উৎস বণ্টন করে দেয়। একাধিক আয়ের উৎস তাদের আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখে। 

 

অন্যদিকে বাড়তি আয়ের উৎস তৈরি করতে দক্ষতা এবং সময়ের দরকার যা আর্থিক চাপে থাকা মানুষের জন্য জোগাড় করা কঠিন। 

 

কেস স্টাডি: লেসলির গল্প

লেসলি বড় হয়েছে দারিদ্র্য পরিবারে যেখানে সবসময় আর্থিক সংকট বিদ্যমান ছিল। দৈনন্দিন খরচ মেটাতে গিয়ে সঞ্চয়ের কোন ব্যবস্থা ছিলো না। শৈশবে দারিদ্র্যের এই চক্র দেখে দেখে স্বল্প আর্থিক জ্ঞান নিয়ে লেসলি কৈশরে জীবনে পদার্পণ করে।  

 

লেসলির জীবন ঘুরে দাঁড়ায় যখন এক চরম আর্থিক সংকটের অবস্থায় তার গাড়ি নষ্ট হয়ে যায়। লেসলি দারিদ্র্যের এই চক্র ভাঙতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে ধনীদের জীবন জীবিকা নিয়ে গবেষণা শুরু করে। যদিও আত্মশৃঙ্খলার নিয়ম মেনে চলা প্রায় অসম্ভব ছিলো, লেসলি শুরু করলো সময় ব্যবস্থাপনা দিয়ে। টিভি এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সময় কমিয়ে লেসলি সপ্তাহে দুই ঘণ্টা বের করলো এবং পড়াশোনা করলো দক্ষতা কিভাবে বাড়ানো যায়। এরপর ধীরে ধীরে ভালো চাকরি পেলো, লক্ষ্য নির্ধারণ করলো, খরচে নিয়ন্ত্রণ আনলো এবং ছোট ব্যবসা শুরু করলো। 

তিন বছরের মধ্যে লেসলি সঞ্চয়, রিটায়ারমেন্ট ফান্ড এবং দুইটি আয়ের উৎস তৈরি করে ফেললো। ধনী না হলেও এখন সে সুদৃঢ় ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে। 

 

মূল কথা

  • আপনার সবথেকে বড় সম্পদ হলো সময়। এটাকে রক্ষা করুন এবং সঠিকভাবে কাজে লাগান।

  • ছোট ছোট বিনিয়োগও ধারাবাহিকভাবে করলে বড় ফল দেয়।

  • শিক্ষাকে আজীবনের জন্য চলমান একটি প্রক্রিয়া হিসাবে তৈরি করুন।

  • আপনার থেকে সফল ব্যাক্তিদের সাথে যোগাযোগ বৃদ্ধি করুন।

  • ঝুঁকি বর্জন না করে ভালোভাবে বিচার বিবেচনা করে ঝুঁকি গ্রহণ করুন।

  • খরচের আগে ভাবুন। এটি সম্পত্তি নাকি দায়?

  • সুনির্দিষ্ট আর্থিক লক্ষ্য স্থাপন করুন।

  • ধীরে ধীরে একাধিক আয়ের উৎস তৈরি করুন।

 

এই আত্মশৃঙ্খলার নিয়মগুলো কেবল ধনী দরিদ্র্যের পার্থক্য করা ছাড়াও আপনার অভ্যাসকে প্রতিনিধিত্ব করে। আপনার যতটুকু সুযোগ সুবিধা আছে তা দিয়ে আপনি নিয়মগুলোকে কিভাবে কাজে লাগাচ্ছেন তা নির্ধারণ করে। ধীরে ধীরে এগিয়ে যান। ছোট ছোট পদক্ষেপই ভবিষ্যতের বড় সাফল্য তৈরি করে। 





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত