Homeঅর্থনীতিবড়দিনের রপ্তানির অর্ডার ধরতে মার্কিন শুল্ক নিয়ে দ্রুত কাজ করতে হবে

বড়দিনের রপ্তানির অর্ডার ধরতে মার্কিন শুল্ক নিয়ে দ্রুত কাজ করতে হবে


মার্কিন পাল্টা শুল্ক আরোপ স্থগিত থাকার ৯০ দিন সময়কে যথাযথভাবে কাজে লাগানোর উপর জোর দিয়েছেন দেশের ব্যবসায়ী নেতারা। তাঁরা বলেছেন, বড়দিন সামনে রেখে তৈরি পোশাকসহ প্রধান প্রধান রপ্তানি পণ্যের অর্ডার পেতে দ্রুত ও সুনির্দিষ্ট প্রস্তুতি নিতে হবে। তা না হলে ক্রয়াদেশ হারানোর শঙ্কা আছে। পাশাপাশি এই প্রক্রিয়ায় দেশের বেসরকারি খাতকে যুক্ত করার পরামর্শ দেন তাঁরা।

আজ রোববার রাজধানীর বনানীর একটি হোটেলে আয়োজিত সভায় ব্যবসায়ীরা এসব কথা বলেন। যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত শুল্কের বিষয়ে উদ্বেগ ও প্রস্তাব তুলে ধরতে এই সভার আয়োজন করে আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশ (অ্যামচেম)।

স্বাগত বক্তব্যে অ্যামচেম সভাপতি সৈয়দ এরশাদ আহমেদ বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাল্টা শুল্ক বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, আমাদের দেশে শুল্ক বাধার চেয়ে অশুল্ক বাধাই বেশি। আমরা এসব বিষয় নিয়ে তাদের (যুক্তরাষ্ট্র) সঙ্গে আলোচনায় বসতে পারি এবং একটি ভারসাম্যপূর্ণ সমঝোতা প্রস্তাব দিতে পারি। মোদ্দা কথা হলো, সমস্যার সমাধান করতে হবে।’

২ এপ্রিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় সব দেশের পণ্যে পাল্টা শুল্ক আরোপ করেন। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যে ৩৭ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করা হয়। এরপর এই শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত করার অনুরোধ করে ট্রাম্পকে চিঠি দেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস। চিঠিতে প্রধান উপদেষ্টা যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য বাংলাদেশের বাজারে প্রবেশে শুল্ক-সুবিধা দেওয়ার কথাও বলেন। এছাড়া গ্যাস টারবাইন, সেমিকন্ডাক্টর, চিকিৎসাসামগ্রীর মতো বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান রপ্তানি পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক কমানোর কথা বলেন তিনি। পরে ৯ এপ্রিল চীন ছাড়া সব দেশের জন্য ৯০ দিন এই শুল্ক স্থগিত করেন। তবে এই সময়ে সবাইকে ১০ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে।

দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী ও এপেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র যে ৯০ দিনের জন্য পাল্টা শুল্ক স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা যেন আত্মতুষ্টির কারণ না হয়। দ্রুততম সময়ের মধ্যে আমাদের স্পষ্টভাবে জানাতে হবে যে বাংলাদেশ কী করতে যাচ্ছে। এক দিনও দেরি করা চলবে না।’

সভায় মূল বক্তব্যে নাসিম মঞ্জুর বলেন, ‘আমাদের রপ্তানির বেশিরভাগ পণ্য মৌসুমভিত্তিক। এই ৯০ দিনের সময়সীমা শেষ হবে, যখন বছরের সবচেয়ে বড় অর্ডার নেওয়ার সময় (বড়দিন ঘিরে)। যদি তার আগেই বাংলাদেশি পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করা না হয়, তাহলে পুরো মৌসুমের অর্ডার হারানোর ঝুঁকিতে পড়তে হবে। এতে অনেক কারখানা দেউলিয়া হয়ে যেতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই আমদানি শুল্ক পদ্ধতি (কাস্টমস ডিউটি) ঠিক করতে হবে। লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানিযোগ্য প্রধান প্রধান পণ্যের বেশিরভাগেরই শুল্ক শূন্য বা প্রায় শূন্য, যদিও সম্পূরক শুল্ক (এসডি) অনেক বেশি। বিষয়টি হলো, কোনো সরকার সম্পূরক শুল্কের ওপর নির্ভর করে চলতে পারে না। এই রীতি থেকে বের হয়ে আসা খুব জরুরি। সে জন্য অবিলম্বে স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি রূপরেখা প্রণয়ন করতে হবে।’

বাণিজ্যে অশুল্ক বাধাও বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন নাসিম মঞ্জুর। তিনি বলেন, ‘অশুল্ক বাধা নিয়ে অনেক দিন ধরেই কথা হচ্ছে। সম্ভবত আমরাই বিশ্বের একমাত্র দেশ, যেখানে এখনো খাদ্যপণ্য আমদানির ক্ষেত্রে রেডিয়েশন বা বিকিরণ পরীক্ষা বাধ্যতামূলক রয়েছে। এমন আরও অনেক বিষয় আছে। এসব পরীক্ষা করতে গিয়ে সময় ও অর্থের অপচয় হয়, যার দায় শেষমেশ ভোক্তাদের ঘাড়েই পড়ে।’

সভায় বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের কমার্শিয়াল কাউন্সেলর জন ফে বলেন, শুল্কের বিষয়ে সাধারণ যেসব জিজ্ঞাসা রয়েছে, সে বিষয়ে তাঁর কাছেও পরিষ্কার উত্তর নেই। যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি পুরোপুরি পরিষ্কার হওয়া সম্ভব।

জন ফে বলেন, কিছু ক্ষেত্রে শুল্কের পরিমাণ অনেক বেশি। শুধু আমদানি শুল্কই নয়; সম্পূরক শুল্কও অনেক বেশি। প্রযুক্তিপণ্য, কোল্ডচেইনসহ বিভিন্ন পণ্যে এ ধরনের উচ্চশুল্ক রয়েছে। অন্যদিকে অশুল্ক বাধাও আছে অনেক। এগুলো সার্বিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোর জন্য বাণিজ্য কঠিন করে তুলেছে।

তিনি আরো বলেন, ‘আমার মনে হয়, এখন সবচেয়ে জরুরি হচ্ছে, বিষয়টিতে যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করা। ৯০ দিন বেশি সময় নয়। শুধু আলোচনা করলেই হবে না, এ সময়ের মধ্যে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিতে হবে। অবশ্যই বেসরকারি খাতের সঙ্গে সমন্বয় করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।’

অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য আমদানিকারক দুটি প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ নির্বাহীরা বলেন, পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে নানা ধরনের পরীক্ষা (ল্যাব টেস্ট) করতে হয়। কিন্তু পরীক্ষাগারের সংখ্যা কম থাকায় সাধারণ প্রতিবেদন পেতে তিন থেকে চার দিন লেগে যায়; সরকারি ছুটির সময় ৮-১০ দিনও লেগে যায়। এসব কারণে আমদানির সময় ও ব্যয় বেড়ে যায়।

সভায় অনন্ত গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শরিফ জহির বলেন, ‘৩ মাস স্থগিতের মধ্যেও এখন ১০ শতাংশ বাড়তি শুল্ক আছে, বেশিরভাগ ক্রেতা প্রতিষ্ঠান এই বাড়তি করের (১০ শতাংশ) বোঝা আমাদের ভাগ করে নিতে বলেছে। ৩৭ শতাংশ শুল্ক আবার ফিরে এলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।’

শরিফ জহির আরও বলেন, ‘আমাদের কারখানাগুলো এমনভাবে পরিচালিত হচ্ছে যে তিন মাস বা ছয় মাস রপ্তানি বন্ধ থাকলে বা কারখানা চালু না থাকলে আমরা টিকতে পারব না। ফলে এই ৯০ দিনের সময়সীমার প্রতিটি দিন আমাদের পুরোপুরি কাজে লাগাতে হবে। বেসরকারি খাতকে যেন সিদ্ধান্ত গ্রহণপ্রক্রিয়ায় যুক্ত রাখা হয়।’

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) পরিচালক আবু মোখলেস আলমগীর হোসেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি বাড়ানো ছাড়া উপায় নেই। বাংলাদেশে মার্কিন পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দেওয়া দরকার।

নিট পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি ফজলুল হক বলেন, ‘মান ভালো হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের তুলা আমরা সব সময়ই ব্যবহার করতে চাই। তবে প্রতিযোগী দেশের তুলনায় এ তুলার দাম বেশি এবং পরিবহন ব্যয়ও অনেক বেশি। ফলে আমাদের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বিনষ্ট হয়। যুক্তরাষ্ট্র হয়তো আমাদের শুল্কমুক্ত সুবিধা দেবে না। এ ক্ষেত্রে সরকার দর–কষাকষি করতে পারে।’

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ভ্যাট বিভাগের সদস্য বেলাল হোসাইন চৌধুরী বলেন, ‘আমরা যুক্তরাষ্ট্র থেকে আর কোন কোন পণ্য আমদানি করতে পারি, তা নিয়ে কাজ হচ্ছে। আরেকটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন। অন্যান্য দেশে কার্যক্রম পরিচালনা করা যুক্তরাষ্ট্রের মালিকানাধীন অনেক কোম্পানির পণ্য বাংলাদেশে আমদানি করা হয়। এসব পণ্য যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি তালিকায় নেই। এ ক্ষেত্রে উৎস দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ইনভয়েস দেওয়া হলে আমাদের আমদানির পরিমাণ বাড়বে।’





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত