Homeজাতীয়‘কমিশনগুলোর সুপারিশ বাস্তবায়ন হলে পরিবর্তন সম্ভব’

‘কমিশনগুলোর সুপারিশ বাস্তবায়ন হলে পরিবর্তন সম্ভব’


অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কমিশনগুলোর সুপারিশ বাস্তবায়ন হলে অনেক ক্ষেত্রেই ইতিবাচক পরিবর্তনের সম্ভাবনা আছে। বিশেষ করে উত্তরাধিকার আইনে সম্পত্তিতে সমানাধিকার ও শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবগুলো সময়োপযোগী।

শনিবার  (২৬ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর বিজয়নগরে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) হল রুমে ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ৮ মাস: ভূমিকা ও সংস্কার প্রস্তাব পর্যবেক্ষণ, পর্যালোচনা ও মতবিনিময় সভায়’ এসব কথা বলেন বক্তারা। অনুষ্ঠানের আয়োজন করে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদের সভাপতিত্বে পর্যালোচনা সভায় ৮ মাসে সরকারের সেক্টর ভিত্তিক কাজের মূল্যায়ন ও সুপারিশ তুলে ধরা হয়।

‘কমিশনগুলোর সুপারিশ বাস্তবায়ন হলে পরিবর্তন সম্ভব’ জুলাই আহতদের চিকিৎসা বিষয়ে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ভিশনারি ভয়েজের পক্ষে স্থপতি আরিফুল হক শাওন; সংবিধান ও বিচার বিভাগ বিষয়ে আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া; জননিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিষয়ে রাজনৈতিককর্মী বাকি বিল্লাহ, দ্রব্যমূল্যসহ অর্থনীতি বিষয়ে ঢাবি শিক্ষক মোশাহিদা সুলতানা ঋতু, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত বিষয়ে গবেষক কল্লোল মোস্তফা, শ্রমিক- বাংলাদেশ গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নেতা সত্যজিৎ বিশ্বাস, কৃষকের সংকট ও সরকারের করণীয় বিষয়ে গবেষক মাহা মির্জা, গবেষক সাঈদ ও সাংবাদিক শাহীন; শিক্ষা সংকট ও প্রস্তাবনা বিষয়ে ঢাবি শিক্ষক সামিনা লুৎফা নিত্রা ও গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ছায়েদুল হক নিশান; বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সংকট ও উত্তরণের পথ বিষয়ে ড. হারুন উর রশীদ; পাহাড় ও সমতলের আদিবাসী বিষয়ে মানবাধিকার কর্মী ইলিরা দেওয়ান ও শিক্ষার্থী হেমা চাকমা; নারী ও লৈঙ্গিক বৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠী বিষয়ে মানবাধিকারকর্মী ফেরদৌস আরা রুমী, হরিজন জনগোষ্ঠীর অধিকার বিষয়ে নারী মুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি সীমা দত্ত; সমবায়ের প্রতারণার চিত্র বিষয়ে নাসিরুদ্দিন নাসু।

সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, গত ৮ মাসে অনেকগুলো সংস্কার কমিশন হয়েছে। এগুলো বাস্তবায়ন হলে অনেক ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন সম্ভব। প্রস্তাবিত নারী সংস্কার কমিশনের সুপারিশে উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে সমানাধিকার ও শ্রম সংস্কার কমিশনেও বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়েছে।

‘কমিশনগুলোর সুপারিশ বাস্তবায়ন হলে পরিবর্তন সম্ভব’ তিনি বলেন, ‘আগে নির্বাচন না সংস্কার’ এমন অপ্রয়োজনীয় বিতর্ক হচ্ছে। অথচ কিছু সংস্কার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারই করতে পারে। যেমন জুলাইয়ের আহতদের চিকিৎসা কেন পূর্ণাঙ্গরূপে এখনও হচ্ছে না? কিংবা খুনের মামলা থেকে অভিযুক্তরা মুক্তি পেলেও, মিথ্যা মামলায় আটকা থাকা বম আদিবাসীদের কেন মুক্তি দেওয়া হচ্ছে না? হরিজনদের জামিনের পর্যন্ত শুনানি হচ্ছে না।

ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, রাষ্ট্র ধর্ম বহাল রেখে এবং ধর্মনিরপেক্ষতাকে বাদ দিয়ে বহুত্ববাদের কথা বলা সম্পূর্ণ দ্বিচারিতা।

তিনি সংসদে নারীর সরাসরি প্রতিনিধিত্বমূলক নির্বাচনের মতো শ্রমিক, কৃষক আদিবাসীসহ পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্বমূলক সরাসরি নির্বাচনের সুপারিশ করেন।

ভিশনারি ভয়েজের সংগঠক স্থপতি ফারজানা শারমিন ইমুর জুলাই আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন অভিজ্ঞতা লিখিত বক্তব্য থেকে পাঠ করেন স্থপতি আরিফুল হক শাওন। তিনি জুলাই আহতদের চিকিৎসা ব্যবস্থায় নানা অসঙ্গতি তুলে ধরেন। আহত, নিহত ও নিখোঁজের তালিকার জটিলতা, একাধিকবার কাগজপত্র জমা দেওয়া ও আহতদের হয়রানি, তথ্যপ্রযুক্তি ও প্রচারণার সীমাবদ্ধতা, বিদেশে চিকিৎসার উদ্যোগ ও বাস্তবতা, ওয়ান স্টপ সার্ভিসের অভাব, পুনর্বাসন পরিকল্পনার অনুপস্থিতি এবং স্বেচ্ছাসেবীদের মানসিক চাপ ও অনিশ্চয়তার কথা ব্যক্ত করেন।

তিনি সমাজকল্যাণ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, মুক্তিযুদ্ধ ও অর্থ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থাকে অন্তর্ভুক্ত করে একটি সমন্বিত মাস্টারপ্ল্যান তৈরির সুপারিশ করেন।

স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সংকট ও উত্তরণের পথ প্রসঙ্গে চিকিৎসক অধ্যাপক হারুন-উর-রশীদ ১৬টি করণীয় চিহ্নিত করেন। এর মধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্যকে জনগণের মৌলিক অধিকার হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান, গণমুখী স্বাস্থ্যনীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, ১৯৮২ সালে ঘোষিত ওষুধনীতির মূল কাঠামো ও লক্ষ্য ঠিক রেখে হালনাগাদকরণ ও বাস্তবায়ন, সরকারি হাসপাতালে ইউজার ফি বাতিল, স্বাস্থ্য খাতে বাজেট বৃদ্ধি করে এখনই জাতীয় বাজেটের ৮% ও ক্রমান্বয়ে ১৫% এবং জিডিপির ২% ও ক্রমান্বয়ে ৫%- এ উন্নীতকরণ, উপজেলা পর্যায়ে সরকারি হাসপাতালগুলো ১০০ শয্যা ও জেলা পর্যায়ে ২৫০ শয্যার উন্নীতকরণ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ অনুযায়ী হাসপাতালগুলোতে শয্যা অনুপাতে চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ প্রদান, দেশের জন্য উপযুক্ত রেফারাল পদ্ধতি চালু, মানহীন মেডিক্যাল কলেজ বন্ধ, বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে অভিন্ন চাকরির বিধিমালা ও বেতন কাঠামো প্রণয়ন, গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবা কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রমকে আরও শক্তিশালীকরণ প্রভৃতি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়য়ের শিক্ষক ড. সামিনা লুৎফা নিত্রা এবং গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ছায়েদুল হক নিশান শিক্ষা সংকট ও প্রস্তাবনা বিষয়ে বলেন যে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে দেশজুড়ে সংস্কার আলোচনার তালিকায় সবচেয়ে অনালোচিত বিষয় হলো শিক্ষা।

হল-ক্যাম্পাসে ফ্যাসিবাদী ছাত্রলীগের একচেটিয়া দখলদারিত্ব-সন্ত্রাসের অবসান ঘটলেও গত ৮ মাসের মব ভায়োলেন্স, আন্তঃপ্রতিষ্ঠান সংঘর্ষ, পরিচয়বাদী বিভাজন, জনতুষ্টিবাদী কার্যক্রম ও বিরাজনীতিকরণ ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরির সম্ভাবনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোশাহিদা সুলতানা ঋতু বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকার মধ্যবর্তী পরিকল্পনা বাতিল করেছে। কিন্তু নতুন কোনও পরিকল্পনা গ্রহণ করেনি। পাটকলগুলো আবার চালুর বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি। বরং বেসরকারি উদ্যোগে পাটকল চালু রাখার পথেই চলছে। তিনি প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। সুপারিশ হিসেবে তিনি তুলে ধরেন যে, বাজেটে পরোক্ষ কর কমাতে হবে।

লেখক ও গবেষক কল্লোল মোস্তফার বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি বিষয়ক লেখাটি অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ পাঠ করেন। সেখানে বলা হয়, “সরকার বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০ বাতিল করলেও এই আইনের আওতায় করা চুক্তিগুলোকে বৈধ বলে গণ্য করার কথা বলেছে। এছাড়া এ বছরের ২২ জানুয়ারি বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ট্যারিফ পর্যালোচনায় একটি কমিটি গঠন করেছিল সরকার। আড়াই মাস অতিবাহিত হয়েছে, এ কমিটি থেকে এখনও পর্যন্ত কোনও সুপারিশ পাওয়া যায়নি।

আন্তর্জাতিক চুক্তি নিয়ে তিনি বলেন, “ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া, ইইউ ও জাপানের সাথে স্বাক্ষরিত সকল সামরিক-বেসামরিক চুক্তি প্রকাশ এবং জনস্বার্থবিরোধী চুক্তিগুলো বাতিলের ব্যাপারে কার্যকর কোনও উদ্যোগও গ্রহণ করা হয়নি।

বাংলাদেশ গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সত্যজিৎ বিশ্বাস বলেন, শ্রমিক আন্দোলনকে দেখার ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি ও ভূমিকার আগের চেয়ে পার্থক্য নেই। অথচ আমরা আশা করেছিলাম, অভ্যুত্থানের পর শিল্প এলাকায় এই ভয়ের পরিবেশ দূর করতে সরকার অগ্রাধিকার দেবে।

পাহাড় ও সমতল আদিবাসী নিয়ে মানবাধিকারকর্মী ইলিরা দেওয়ানের লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন শিক্ষার্থী হেমা চাকমা। তিনি বলেন, “জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে দেশ যে এখনও বৈষম্যমুক্ত হয়নি, তার আরেকটি প্রমাণ বান্দরবানের বম জনগোষ্ঠীর ওপর বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার যে নির্মম অত্যাচার, নির্বিচারে গ্রেফতার ও নানা বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল তা আগের মতোই বহাল রয়েছে। ২০২৫ সালের ১৫ জানুয়ারি ঢাকায় আদিবাসী শিক্ষার্থী ও তাদের শুভাকাঙ্ক্ষীদের ওপর এক নৃশংস হামলার ঘটনাটি বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে জঘন্যতম।

গত ৮ মাসের গণতান্ত্রিক অধিকার, জানমালের নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে রাজনৈতিককর্মী বাকি বিল্লাহ যৌথ বাহিনীর বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, মাজারে হামলা, বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী ও নারীর নিপীড়নের ওপর একটি গণমাধ্যম ভিত্তিক প্রতিবেদন তুলে ধরেন। অনেক ক্ষেত্রে অভিযুক্তদের গ্রেফতারের ধীরগতি, তদন্তের অভাব এবং জবাবদিহির ঘাটতি তুলে ধরেন তিনি।

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ, নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত, শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষা, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সংস্কার, রাজনৈতিক সহিষ্ণুতা বৃদ্ধি, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও তথ্যের অবাধ প্রবাহ, দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্ত, জবাবদিহি ও স্বচ্ছতা বৃদ্ধি, বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন ও কার্যকারিতার প্রস্তাব তুলে ধরেন তিনি।

মানবাধিকারকর্মী ফেরদৌস আরা রুমী গত কয়েক মাসে নারী ধর্ষণ, যৌন হয়রানি এবং মব আক্রমণের আশঙ্কাজনক ঘটনাগুলোতে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি অবিলম্বে হিজড়া সুরক্ষা অ্যাক্ট এবং যৌন কর্মীর নাগরিক অধিকার সুরক্ষা ও পুনর্বাসনের প্রক্রিয়া নিয়ে সরকারের স্পষ্ট অবস্থান নেওয়ার দাবি জানান।

নারী মুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি সীমা দত্ত হরিজন সম্প্রদায়ের মানুষের অধিকার নিয়ে জানান, “হরিজনদের ৩১ জনের নামে মামলা হয়েছে। কিন্তু তারা আত্মপক্ষ নিয়ে কিছু বলতে পারবেন না। আলীফ হত্যার বিচার চাই। কিন্তু হরিজনরা বিনা বিচারে দিনের পর দিন জেল খাটবে, নির্যাতনের শিকার হবে এটা কোনভাবে মেনে নেওয়া যায় না।

সমবায়ের প্রতারণার চিত্র নিয়ে নাসিরুদ্দিন নাসু জানান, জামালপুর মাদারগঞ্জে প্রায় ৩৪ হাজার পরিবারের আড়াই হাজার কোটি টাকা সমবায়ের নামে একটি রাজনৈতিক চক্র হাতিয়ে নিয়েছে। এর বিরুদ্ধে মাদারগঞ্জে প্রতারণার শিকার সাধারণ জনগণের পাশে দাঁড়াতে তিনি সবাইকে আহ্বান জানান।





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত