বলা হয়, ফ্যাশন উইকগুলোয় র্যাম্পে মডেলরা যেসব পোশাক পরে হেঁটে বেড়ান সেগুলো আদৌ সাধারণ মানুষের আলমারিতে তোলার উপযোগী নয়। তাহলে অত দামি ফেব্রিক গায়ে তোলেন কারা? হ্যাঁ, বলিউডের সোনাম বা আলিয়াদের গায়ে কখনও কখনও রানওয়ে পোশাকের নকশা বা প্রিন্ট দেখা যায়; তবে সেখানেও প্রশ্ন যে উদ্ভট নকশাওয়ালা পোশাকগুলো? সেগুলো কি কেউ পরে? আগেভাগেই বলে রাখি, একটু ঘুরিয়ে ফিরিয়ে তো পরেই। রিয়ান্না, জেনিফার লোপেজ, সেলেনা গোমেজ, কিম কার্দিশিয়ানদের সেই সাহস আছে। সাহস রয়েছে ভারতের উর্ফি জাভেদেরও।
এখানে আবার সাধারণ মানুষের প্রশ্ন, ‘রানওয়েতে যেসব পোশাক দেখা যায় তার কোনোটাই কি বিশ্বমানের ফ্যাশন ডিজাইনাররা আমাদের জন্য তৈরি করেন না? যদি না–ই হয়, তাহলে এসব পোশাক তৈরির উদ্দেশ্য কী?’ ছোট্ট করে বলে রাখি, ‘ধরুন আপনি আপনার নকশা করা একটা পোশাক রানওয়েতে দেখানোর সময় পাবেন মাত্র ১০ মিনিট। তখন কী সাধারণ কোনো পোশাক গায়ে জড়িয়ে যেকোনো ব্যক্তি হেঁটে গেলেই দর্শক দেখবে? মোটেও না। আর এই জায়গাটা থেকেই থিমভিত্তিক ফ্যাশন শোগুলো পরিচালিত হয়। একটা নির্দিষ্ট ফেব্রিক ও ম্যাটেরিয়ালকে এমনভাবেই শোকেজিং করা হয় যা দর্শকের চোখে লেগে থাকবে। এখানে কোনো কোনো ক্ষেত্রে মডেলও গুরুত্বপূর্ণ। জিজি হাদিদ যে পোশাকটি পরবেন তা নিশ্চয়ই তরুণীদের মন কেড়ে নেবে তাই না?
তবে রানওয়ে থেকে নেমে এসেও যদি বলি তাহলে ফ্যাশনবোদ্ধাদের মতে, এই বছরে যেহেতু মঙ্গলগ্রহের প্রভাব রয়েছে সেহেতু ১২ মাসে ঘটবে অভাবনীয় অনেক কিছুই। মানে ফ্যাশনবিশ্বও বাদ যাবে না, ফ্যাশন ও স্টাইলিংয়ে এ বছরটা হবে পুরোদস্তুর নিরীক্ষাধর্মী। বর্তমানে তরুণরা যেহেতু আগের তুলনায় অনেক অনেক বেশি ইন্টারনেটের ওপর নির্ভরশীল; খোলাসা করে বললে, ইউটিউবের বরাতে বহির্বিশ্বের ফ্যাশনের প্রতি এখনকার তরুণরা ব্যাপক আগ্রহী।
গত বছর বা তার আগের বছরের রেশ টানতে গেলে যে প্রসঙ্গটি এড়ানো যায় না তা হলো, পাকিস্তানি ও তুর্কি সিরিজ থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে নারীরা পোশাক পরিচ্ছদও ফ্যাশন উপকরণ বেছে নিচ্ছেন। সেখানে বাদ যাচ্ছে না ওয়াইড লেগ প্যান্ট থেকে শুরু করে সিগারেট প্যান্ট, স্কার্ফ, ফ্রিল দেওয়া পোশাক, ফ্লোরাল প্রিন্ট, ভারী মেটালের গয়না, একরঙা সিল্কের পোশাক, পেন্সিল হিল ইত্যাদি। আর এই হাওয়া লেগেছে আমাদের দেশেও। তবে এ প্রসঙ্গে কোরিয়ান সিরিজকে বাদ দিলে দাঁতে জিভ কাটতে হবে। জেনজিরা ওভারসাইজড টপস, লুজ কার্গো প্যান্ট ও চুলে বো–ব্যান্ড জড়িয়ে দিব্য়ি চলে যাচ্ছে ক্লাসে এমনকি পার্টিতেও। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্য়লয়ের আশপাশ দিয়ে ঘোরাঘুরি করলে চোখে পড়বে ছেলে ও মেয়ে উভয় ছাপা কাপড়ে তৈরি তিনকোণা ছোট স্কার্ফ হেডব্যান্ডের মতো করে মাথায় পরছেন। এগুলোর সবই বিশ্ব ফ্যাশনের প্রতিচ্ছবি। আমাদের দেশের ডিজাইনাররাও এই ফ্যাশন সচেতন তরুণ–তরুণীদের কথা বিবেচনায় রেখে অন্যান্য দেশের পোশাক ও আসাদের দেশীয় ঘরাণার মিলমিশে ফিউশন ঘরাণার পোশাক তৈরি করছেন।
বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন ডিজাইন অ্যান্ড টেকনোলজির সপ্তম সেমিস্টারের ছাত্রী মাহিরা রহমান। সম্প্রতি কাজাখস্তানের সংস্কৃতি, স্থাপত্য এবং সিম্বলিক মোটিফ দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্য বেশ কয়েকটি পোশাক নকশা করেছেন। এই পোশাকগুলো আমাদের দেশের সাধারণ তরুণ–তরুণীদের ব্যবহারের উপযোগী কিনা তা জানতে চাওয়ায় মাহিরা বলেন, ‘যদিও এসব পোশাক আমাদের দেশে প্রচলিত নয়, তবে আমি চেয়েছি এমন একটি ফিউশন তৈরি করতে, যেখানে আন্তর্জাতিক এবং আমাদের দেশীয় ঘরাণার মেলবন্ধন ঘটবে। এটা একটা নিরীক্ষাধর্মী কাজ বলতে পারেন, যেখানে স্টাইলিংয়ের মাধ্যমে দুটি সংস্কৃতিকে সংযুক্ত করা হয়েছে।’
ফিউশনভিত্তিক এ পোশাকগুলো কাজাখস্তানের ঐতিহ্যবাহী মোটিফ, প্রতীক এবং স্থাপত্যের অনুপ্রেরণায় ডিজাইন করা হয়েছে। পোশাকে ব্যবহৃত হয়েছে দেশীয় হাতের কাজ, যেমন–এমব্রয়েডারি ও অ্যাপ্লিক। রোজকার ব্যবহারের জন্য ও সান্ধ্যকালীন ছোটখাটো পার্টিতে পরার উপযোগী এ পোশাকগুলোয় হালকা তবে অভিজাতরুচির নকশা করা রয়েছে। বাংলাদেশ যেহেতু গ্রীষ্মপ্রধান দেশ আবার কাজাখস্তানেও গ্রীষ্মে প্রচন্ড গরম ও শীতে প্রচুর ঠান্ডা পড়ে, তাই আবহাওয়ায় মিল থাকায় মসলিন, সুতি ও সিল্ক কাপড়ে পোশাকগুলো তৈরি করেছেন তিনি। চোখের আরাম হয় এমন রঙের কাপড়ে করেছেন নকশা। আকাশী, সাদা, অফহোয়াই রঙই প্রাধান্য পেয়েছে। মোটিফগুলোতে কাজাখস্তানের ট্র্যাডিশনাল জিওমেট্রিক ও ফ্লোরাল প্যাটার্ন ব্যবহার করা হয়েছে, যা এমব্রয়েডারি ও অ্যাপ্লিকের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
এই পোশাকগুলো মূলত কাদের উপযোগী তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই সংগ্রহটি মূলত বর্তমান ট্রেন্ড সেটার তরুণ–তরুণী, সংস্কৃতি এবং শিল্পপ্রেমীদের জন্য। যারা বরাবরই নিজেদের ভিন্নভাবে উপস্থাপন করতে পছন্দ করেন এবং পোশাকের মাধ্যমে নিজেদের স্টাইল ও রুচিকে প্রকাশ করতে ভালোবাসেন।’
এসব ফিউশনধর্মী পোশাকের দাম সম্পর্কে মাহিরা বলেন, ‘কাপড়, শ্রম ও নিখুঁত কাজ অনুযায়ী একেকটি পোশাকের সেটের দাম ৫৫০০ থেকে শুরু করে ১০,৫০০ পর্যন্ত হতে পারে।’