পুলিশ সপ্তাহ ২০২৫-এর দ্বিতীয় দিনে পুলিশের পক্ষ থেকে একাধিক দাবির কথা তুলে ধরা হয়েছে, যার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো—ওভারটাইম ভাতা চালুর প্রস্তাব। কনস্টেবল থেকে শুরু করে আইজিপি পর্যন্ত সব পর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের নির্ধারিত ৮ কর্মঘণ্টার অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনের জন্য ভাতা প্রদানের দাবিটি এসেছে সরাসরি মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে। পাশাপাশি মামলা তদন্তের জন্য সরকার যে অর্থ বরাদ্দ দেয় তা অপ্রতুল উল্লেখ করে তদন্ত ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাবও তোলা হয়েছে।
বুধবার (৩০ এপ্রিল) রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে বাংলাদেশ পুলিশ অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের উপস্থাপনা ও সন্ধ্যায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাদের সঙ্গে বৈঠক। সেখানে পুলিশের পক্ষ থেকে মোট সাতটি দাবি উত্থাপন করা হয়। দিনভর সিআইডি, র্যাব, পিবিআই, ট্যুরিস্ট পুলিশ, এন্টি টেররিজম ইউনিট, হাইওয়ে পুলিশ, এপিবিএন, রেলওয়ে পুলিশ, নৌ পুলিশ ও শিল্পাঞ্চল পুলিশ তাদের ইউনিটভিত্তিক সাফল্য ও দীর্ঘদিনের সংকট তুলে ধরে।
বৈঠকে পুলিশ সদরদপ্তরের অতিরিক্ত ডিআইজি মোস্তাফিজুর রহমান সরকারি আবাসন পরিদপ্তরের ফ্ল্যাটে পুলিশের জন্যও বরাদ্দ চেয়ে প্রস্তাব দেন। তিনি বলেন, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সরকারি আবাসন সুবিধা পেলেও পুলিশ এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত। ফলে মাঠপর্যায়ে পুলিশ সদস্যদের আবাসন সংকট ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।
চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম জানান, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ প্রতিদিনই নির্ধারিত সময়ের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করে। তবুও পুলিশের কারো জন্য কোনো ওভারটাইম ভাতা নেই। তিনি কনস্টেবল থেকে আইজিপি পর্যন্ত সবার জন্য অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনে ভাতা চালুর আহ্বান জানান।
ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার আনিসুজ্জামান মামলার তদন্ত ব্যয়ে সরকারি বরাদ্দ অপ্রতুল বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, কোনো কোনো মামলায় বরাদ্দের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি অর্থ ব্যয় হয়, যা তদন্ত কর্মকর্তাদের পকেট থেকে বহন করতে হয়। ফলে সরকারি বরাদ্দ বৃদ্ধির বিকল্প নেই।
সভায় গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার জনবল বৃদ্ধির দাবি জানান। অপরদিকে সিআইডির পক্ষ থেকে প্রতিটি জেলায় একটি করে ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাব স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়।
সভায় উপস্থিত ছিলেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, গৃহায়ন উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়ব এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরী। সভায় সভাপতিত্ব করেন ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ বাহারুল আলম। এছাড়া বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিশেষ করে স্বরাষ্ট্র, আইন, গৃহায়ন, তথ্যপ্রযুক্তি ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিবরা সভায় উপস্থিত ছিলেন।
একইদিন র্যাবের পৃথক উপস্থাপনায় বাহিনীটির ডিজি একেএম শহিদুর রহমান জানান, র্যাব এখন স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। মানবাধিকার সেল ও অভ্যন্তরীণ তদন্ত ইউনিট গঠন করা হয়েছে। পাশাপাশি ‘র্যাব আইন ২০২৪ (খসড়া)’ প্রণয়ন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে, যা পাস হলে বাহিনীটি আইনসঙ্গত কাঠামোর মধ্যে পরিচালিত হবে এবং আর কেউ ব্যক্তিস্বার্থে বাহিনীকে অপব্যবহার করতে পারবে না।
এদিকে, পুলিশ ইউনিটগুলোর উপস্থাপনায় মামলার তদন্ত ও অজ্ঞাত লাশের ব্যবস্থাপনায় কোনো নির্দিষ্ট বাজেট না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। ইউনিটগুলো জানায়, নিজস্ব ভবনের অভাব, যানবাহন সংকট, পর্যাপ্ত প্রযুক্তিগত সরঞ্জাম ও প্রশিক্ষণের অভাব এবং অনিশ্চিত বদলি সংস্কৃতি—এসবই তদন্ত ও অপারেশন কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করছে।