চাহিদা কমে যাওয়া ও সৌদি আরবের সরবরাহ বাড়ানোর ইঙ্গিত বিশ্ববাজারে তেলের দামে চাপ সৃষ্টি করেছে। গতকাল বুধবার বড় পতনের পর আজ বৃহস্পতিবার অবশ্য তেলের দাম কিছুটা স্থিতিশীল হয়েছে। সৌদি আরব বিশ্বের বৃহত্তম অপরিশোধিত তেল রপ্তানিকারক দেশ। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র তেলের সবচেয়ে বড় ভোক্তা। দেশটির অর্থনীতি সংকুচিত হওয়ার তথ্যও তেলের দামে প্রভাব ফেলেছে।
গ্রিনিচ মান সময় আজ সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে ব্রেন্ট ক্রুড ফিউচার্স (অর্থাৎ, যেসব তেল ভবিষ্যতে নির্দিষ্ট সময় পর সরবরাহ করা হবে) ব্যারেল প্রতি ৬১ ডলারে নেমেছে। এটি আগের দিনের চেয়ে ৬ সেন্ট বা দশমিক ১ শতাংশ কম। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই) ক্রুড ফিউচার্স ব্যারেল প্রতি ৫৮ দশমিক ০৯ ডলারে লেনদেন হয়েছে। দাম কমেছে ১২ সেন্ট বা দশমিক ২ শতাংশ। গত বুধবার ডব্লিউটিআই ২০১৪ সালের মার্চের পর সর্বনিম্ন দামে কেনাবেচা শেষ করেছিল।
নয়াদিল্লি ভিত্তিক গবেষণা সংস্থা এসএস ওয়েলথস্ট্রিটের প্রতিষ্ঠাতা সুগন্ধা সাচদেব বলেন, স্বল্পমেয়াদে তেলের দাম কমার সম্ভাবনাই বেশি। তিনি আরও বলেন, চাহিদার অবনতি এবং সরবরাহ বৃদ্ধির আসন্ন সম্ভাবনা তেলের বাজার নিয়ে হতাশাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করেছে। ব্রেন্ট ক্রুড ব্যারেল প্রতি ৫৫ ডলারে নেমে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, বিশ্বের বৃহত্তম অপরিশোধিত তেল রপ্তানিকারক সৌদি আরব মিত্র দেশ ও শিল্প বিশেষজ্ঞদের জানাচ্ছে যে, তারা সরবরাহ কমিয়ে তেলের বাজারকে সহায়তা করতে রাজি নয়। তারা দীর্ঘ সময় ধরে কম দাম সামাল দিতে পারবে।
বিশ্বের তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর জোট ওপেক প্লাসের সঙ্গে জড়িত তিনটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, ওপেক প্লাসের বেশ কয়েকটি সদস্য দেশ গ্রুপকে জুন মাসে পরপর দ্বিতীয় মাসের মতো উৎপাদন বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করার পরামর্শ দেবে। ওপেক প্লাসের ৮টি দেশ আগামী ৫ মে বৈঠক করে জুন মাসের উৎপাদন পরিকল্পনা ঠিক করবে।
সাচদেব বলেন, উৎপাদন সমন্বয়ের গতি বা মাত্রায় যেকোনো চমক আগামী দিনে তেলের বাজারের অস্থিরতাকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করতে পারে।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি ৩ বছরের মধ্যে প্রথমবার সংকুচিত হয়েছে। এটি ঘটেছে প্রথম প্রান্তিকে। এর কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, শুল্কের কারণে উচ্চ ব্যয় এড়াতে ব্যবসায়ীরা দ্রুত আমদানি বাড়িয়েছিল। এটি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রায়শই বিশৃঙ্খল বাণিজ্য নীতির বিঘ্ন সৃষ্টিকারী প্রকৃতিকে তুলে ধরেছে।
রয়টার্সের এক জরিপে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, ট্রাম্পের শুল্কের কারণে চলতি বছর বৈশ্বিক অর্থনীতি মন্দায় পড়তে পারে। বুধবার রয়টার্সের এক জরিপে দেখা গেছে, বাণিজ্য বিরোধের কারণে চাহিদার পূর্বাভাসে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এর সঙ্গে ওপেক প্লাসের এর সরবরাহ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত চলতি বছর তেলের দামের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে।
বাজার বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান কেপলার ২০২৫ সালের বিশ্বব্যাপী তেলের চাহিদার বৃদ্ধির পূর্বাভাস সংশোধন করেছে। তারা আগে প্রতিদিন ৮ লাখ ব্যারেল উৎপাদিত হওয়ার পূর্বাভাস দিলেও, তা কমিয়ে ৬ লাখ ৪০ হাজার ব্যারেলে নামিয়েছে। কারণ হিসেবে ক্রমবর্ধমান চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য উত্তেজনা এবং দুর্বল ভারতীয় চাহিদার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
এপ্রিল মাসে ৪০ জন অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকের এক জরিপে ২০২৫ সালে ব্রেন্ট ক্রুডের গড় দাম ব্যারেল প্রতি ৬৮ দশমিক ৯৮ ডলার হবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। মার্চ মাসে এই পূর্বাভাস ছিল ৭২ দশমিক ৯৪ ডলার। তারা আশা করেন, যুক্তরাষ্ট্রের ক্রুডের গড় দাম হবে ৬৫ দশমিক ০৮ ডলার, যা গত মাসে ৬৯ দশমিক ১৬ ডলার দেখা গিয়েছিল।
গতকাল বুধবার মার্কিন এনার্জি ইনফরমেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (ইআইএ) জানিয়েছে, গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের অপরিশোধিত তেলের মজুত ২৭ লাখ ব্যারেল কমেছে। উচ্চ রপ্তানি ও শোধনাগারের চাহিদার কারণে এটি ঘটেছে। রয়টার্সের এক জরিপে বিশ্লেষকেরা ৪ লাখ ২৯ হাজার ব্যারেল মজুত বৃদ্ধির প্রত্যাশা করেছিলেন।