Homeদেশের গণমাধ্যমেবাসা-বাড়িতে অগ্নিকাণ্ড রোধে সাবধান হবেন কীভাবে

বাসা-বাড়িতে অগ্নিকাণ্ড রোধে সাবধান হবেন কীভাবে


ঘনবসতিপূর্ণ আমাদের এই বাংলাদেশে প্রায়ই বাসা-বাড়িতে অগ্নিকাণ্ডের সংবাদ সামনে আসে। সংবাদ দেখে কিছুক্ষণ খারাপ লাগে, তারপর হয়তো ভেবে নেন যে ‘আমরা তো সাবধানে আছি।’ কিন্তু সত্যিই কি যথেষ্ট সাবধানতা অবলম্বন করছেন?

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সামান্য অসাবধানতা বা নিরাপত্তা ব্যবস্থার অভাবই এসব দুর্ঘটনার মূল কারণ। বিশেষ করে শহুরে জীবনে, যেখানে গাদাগাদি করে বেড়ে ওঠা দালান, ঘরে ঘরে গ্যাসের সিলিন্ডার, আর অনিরাপদ বিদ্যুৎ লাইনের ছড়ছড়ি। চুলাটা একবার খেয়াল করে হয়তো ভাবতে পারেন আপনি নিরাপদ। কিন্তু দুর্ঘটনা শুধু চুলা থেকেই ছড়ায় না, আরও কারণ আছে। তাই সাবধান হওয়ার জন্য আগে কারণগুলো জেনে নেওয়া জরুরি।

বাসা-বাড়িতে অগ্নিকাণ্ডের প্রধান কারণ

১. বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট

বাংলাদেশে ঘরবাড়িতে অগ্নিকাণ্ডের সবচেয়ে বড় কারণ হলো ত্রুটিপূর্ণ বৈদ্যুতিক সংযোগ ও শর্ট সার্কিট। নিম্নমানের তার, অতিরিক্ত লোড, পুরনো ও ক্ষয়ে যাওয়া বৈদ্যুতিক লাইন মেরামত না করা এবং ফিউজের সঠিক ব্যবহার না করা। এই জিনিসগুলোতে খুব সহজেই একটি স্ফুলিঙ্গ থেকে বিশাল অগ্নিকাণ্ডে ছাই হয়ে যেতে পারে আপনার জীবন।

২. গ্যাস লিক বা রান্নার সময় অসাবধানতা

এলপি গ্যাসের সিলিন্ডার বা লাইনের লিক থেকে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। অনেক সময় রান্না শেষ করে গ্যাসের চুলা বন্ধ করতে ভুলে যাওয়া, গ্যাসের পাইপে ফুটো বা শিশুদের অসাবধানতাও বিপদ ডেকে আনে।

৩. জ্বালানি ও দাহ্য পদার্থের অসতর্ক সংরক্ষণ

কেরোসিন, ডিজেল, স্প্রে বা অ্যালকোহলজাতীয় দাহ্য পদার্থ অসাবধানে রাখলে সামান্য স্ফুলিঙ্গে বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ড ঘটতে পারে।

৪. সিগারেট বা মোমবাতির অসাবধান ব্যবহার

বিছানা, সোফা বা কাগজের কাছে সিগারেট ফেলা, মোমবাতি জ্বালিয়ে ঘুমিয়ে পড়া বা শিশুদের দিয়াশলাই নিয়ে খেলার কারণে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে।

৫. জেনারেটর ও ইলেকট্রনিক ডিভাইসের অতিরিক্ত ব্যবহার

জেনারেটর অতিরিক্ত চালালে বা ফ্রিজ, এসি, হিটারের মতো উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ডিভাইসের ওভারহিটিং থেকে আগুন ধরে যেতে পারে।

এগুলো হলো বাসা বাড়িতে অগ্নিকাণ্ডের প্রধান কয়েকটি কারণ। এগুলো ছাড়াও আরো কারণ রয়েছে। যেমন আবহাওয়া – প্রচণ্ড তাপদাহে যখন চারিদিক খটখটে ও শুষ্ক হয়ে থাকে। তখন শুকনো পাতার পাশে আপনার ফেলা একটি নিভু নিভু ম্যাচের কাঠিও বয়ে আনতে পারে বিপদ।

তবে জানা কারণগুলোতে সাবধানতা বাড়ানোর মাধ্যমে আপনি আপনার পরিবারকে আগের চেয়ে একটু বেশি নিরাপদ বাসস্থান দিতে পারেন।

অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধের উপায়

১. বৈদ্যুতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন

বাড়িতে অবশ্যই ভালো মানের তার ও ফিউজ ব্যবহার করুন। পুরোনো ভাড়া বাসায় উঠার আগে অবশ্যই বিদ্যুৎ লাইন সম্পর্কে খোঁজ নিন। সুইচগুলো ভালোভাবে অনঅফ হয় কিনা, কোথাও কোনো স্পার্ক হয় কিনা এগুলো খেয়াল করুন।

বাসা-বাড়িতে অগ্নিকাণ্ড রোধে সাবধান হবেন কীভাবে

নিয়মিত বৈদ্যুতিক লাইন চেক করুন এবং পুরনো তার পরিবর্তন করুন। একসঙ্গে অনেকগুলো ডিভাইস একটি সকেটে ব্যবহার করবেন না। সার্কিট ব্রেকার ও আর্থিং ব্যবস্থা রাখুন।

২. গ্যাসের ব্যবহারে সতর্কতা

রান্না শেষে গ্যাসের চুলা বন্ধ হয়েছে কিনা একাধিকবার চেক করুন। দীর্ঘদিনের জন্য বাসার বাইরে গেলে সিলিন্ডারের ভালভ বন্ধ করে যান। গ্যাসের পাইপ ও রেগুলেটর নিয়মিত চেক করুন।

গ্যাস লিক সনাক্ত করতে সাবান পানি ব্যবহার করুন। ছিদ্র থাকলে বুদবুদ উঠবে। গ্যাসের পাইপ না সিলিন্ডারের কাছে মোমবাতি বা লাইটার রাখবেন না।

বর্তমানে যেসব দালান নতুন করে তৈরি হচ্ছে, সেগুলোর গ্যাস সিলিন্ডার ফ্ল্যাটের বাইরে নিচতলায় গ্যারেজে রাখা হয়। তবে সে ক্ষেত্রে সবগুলো সিলিন্ডার গাদাগাদি করে না রাখা উচিত।

৩. দাহ্য পদার্থ সংরক্ষণে সতর্ক হোন

কেরোসিন, স্প্রে বা রাসায়নিক পদার্থ শিশুদের নাগালের বাইরে রাখুন। দাহ্য পদার্থের পাত্র শক্তভাবে বন্ধ করে ঠাণ্ডা ও অন্ধকার স্থানে রাখুন।

জ্বলন্ত কোনো বস্তু, যেমন ম্যাচের কাঠি, সিগারেট, মোমবাতি, না নিভিয়ে হাত থেকে ফেলবেন না।

৪. অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র ও ফায়ার সেফটি ড্রিল

বাসায় একটি ফায়ার এক্সটিংগুইশার রাখুন এবং পরিবারের সদস্যদের ব্যবহার শেখান। দালানে ফায়ার অ্যালার্ম সিস্টেম লাগান।

জরুরি প্রস্থানের পথ পরিষ্কার রাখুন এবং পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ফায়ার ড্রিল অনুশীলন করুন। বিশেষ করে শিশুদের বয়স তিন থেকে পাঁচের মধ্যে থাকার সময়ই তাদেরকে সাবধানতাগুলো বলতে শুরু করুন এবং দুর্ঘটনার সময় তারা কোন পথ দিযে দ্রুত বের হয়ে যাবে, তা খেলার ছলে শেখাতে শুরু করুন।

৫. শিশু ও বয়স্কদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন

শিশুদের আগুন, ম্যাচবক্স বা লাইটার থেকে দূরে রাখুন। তবে বোঝার বয়স হলে লাইটার ও ম্যাচের সম্পর্কে তাদের ধরনা দিন, এগুলো কেন তাদের জন্য অনিরাপদ তা বুঝিয়ে বলুন, যেন আপনার অনুপস্থিতিতে কৌতুহলবসত তারা এগুলো হাতে নিয়ে না ফেলে।

বয়স্ক বা শারীরিকভাবে অক্ষম ব্যক্তিদের নিরাপদ স্থানে রাখুন এবং জরুরি প্রস্থানের ব্যবস্থা করুন।

জরুরি অবস্থায় করণীয়

আগুন ছোট থাকতেই যদি তা খেয়াল করতে পারেন তবে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করুন। ধোঁয়া বা আগুন বেশি হলে জিনিসপত্র বাঁচানোর চেষ।টা না করে দ্রুত বেরিয়ে আসুন এবং ফায়ার সার্ভিসে কল করুন।

ফায়ার সার্ভিসের নম্বর খুঁজে না পেলে ৯৯৯ ডায়াল করুন। আপনার শিশুদেরও এটি করতে প্রশিক্ষণ দিয়ে রাখবেন।

কোনভাবেই লিফট ব্যবহার করবেন না, সিঁড়ি দিয়ে নামুন।

আমাদের দেশে বাসা-বাড়িতে অগ্নিকাণ্ডের বেশিরভাগ ঘটনাই প্রতিরোধযোগ্য। সামান্য সচেতনতা ও সতর্কতা অবলম্বন করে আমরা আমাদের পরিবার ও সম্পদ সুরক্ষিত রাখতে পারি। বৈদ্যুতিক নিরাপত্তা, গ্যাসের সঠিক ব্যবহার এবং অগ্নিনির্বাপক সরঞ্জামের প্রস্তুতি – এই তিনটি বিষয়ে বিশেষ নজর দিলে অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি অনেকাংশে কমানো সম্ভব।

এএমপি/এমএস



Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত