[ad_1]
একটি পরিবারকে আগলে রাখার ক্ষেত্রে একজন মায়ের ভূমিকা আলাদা করে বলার কিছু নেই। সন্তানের দেখাশোনা, ভবিষ্যৎ ভাবনা তো বটেই, পুরো সংসার ও পরিবারকে সামলাতে গিয়ে মায়েদের মানসিক চাপ একটু বেশিই। অতিরিক্ত মানসিক চাপ শরীরে স্থায়ীভাবে নানান সমস্যার উদ্রেক ঘটায়। অতিরিক্ত রাগ, উত্তেজনা, ভীতি ও মানসিক চাপের কারণে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা দেখা দেয়। এ ছাড়া অতিরিক্ত মানসিক চাপ, আশপাশের পরিবেশ অনুকূলে না থাকলে ও দিনের পর দিন ব্যক্তি এই পরিস্থিতির মধ্য় দিয়ে গেলে খাওয়াদাওয়া ও জীবনযাপন পদ্ধতিতে সঠিকভাবে নজর না দিলে ডায়াবেটিস, স্ট্রোক, ডিমেনশিয়াসহ আরও নানান অনিরাময়যোগ্য় রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। বলাবাহুল্য়, চলতি সময়ে ষাটোর্ধ্ব প্রায় সব মা এসব রোগে আক্রান্ত।
এর বাইরে কিছু সমস্যা যেমন স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া, চিন্তা, মনোযোগ ও ভাষা প্রকাশে সমস্যা হওয়া, ব্যক্তিত্ব ও মেজাজের পরিবর্তন ঘটা ইত্যাদি একটা বয়সের কমবেশি সব মায়েরই হয়। এই পরিবর্তনগুলো সময়ের সঙ্গে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে এবং দৈনন্দিন জীবনকে প্রভাবিত করতে শুরু করে। সে ক্ষেত্রে কী করে পরিবারের বয়োজ্য়েষ্ঠ এই সদস্য়ের মানসিক চাপ কমানো যায়, সেদিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন।
দিন যাচ্ছে, আর শিশুমন জেগে উঠছে…
সন্তানদের প্রথমেই মনে রাখতে হবে, দিন যত যাবে, সম্পর্কে ভূমিকার রূপান্তর তত দ্রুত হবে। আমি মায়ের ভূমিকায় এবং মা আমার ছোটবেলাকার ভূমিকায় পৌঁছে যাবেন। কাজেই মাকে কোনো কিছু করার জন্য জোর করার আগে মনে রাখতে হবে এই মানুষটি একদিন দুর্দান্ত প্রতাপে সংসার চালিয়েছেন আপনার জন্মের আগে থেকে। কাজেই ‘তুমি এখন কিছু বোঝো না’ এই কথাগুলো সন্তানের কাছ থেকে শোনা তাঁর জন্য অপমানজনক। এ রকম সময় মাকে বোঝানোর থেকে কাউন্সিলিংয়ের সাহায্য নেওয়া জরুরি।

মনে রাখা চাই, ৫০, ৬০,৭০, ৮০ বছর এভাবেই তো তিনি পার করেছেন। কাজেই এখন চাপ দেবেন না। বার্ধক্য মানুষকে অসহায় করে তোলে। মা কী বলেন, সেটা মন দিয়ে শুনুন। সেটা ১০ মিনিট হতে পারে, আবার এক ঘণ্টাও। তিনি নিয়মিত ওষুধ খাচ্ছেন কি না এবং চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে আছেন কি না, এই খেয়াল রাখাটা খুব জরুরি।
বোঝাবুঝিই মূল ওষুধ
বার্ধক্যে মানুষ শিশুর মতো হয়ে যায়। মা হয়তো অনেক কিছু ভুল করতে পারেন। ভুলেও যেতে পারেন। বারবার একই কথা আপনাকে বা আপনাদের জিজ্ঞেস করতে পারেন। উনার সঙ্গে একটি কঠিন আচরণ করবার আগে মনে রাখবেন, আপনারও সামনে বার্ধক্য অপেক্ষা করছে। আপনি আপনার মায়ের সঙ্গে কেমন ব্যবহার করছেন, আপনার অজান্তে আপনার সন্তান কিন্তু সেটাই শিখছে। আপনি আজকে যেটা সন্তান হিসেবে দেবেন, ভবিষ্যতে নিজেই সেটা নিজ সন্তানের কাছ থেকে ফেরত পাবেন। একদিন অনেক দামি কিছু দেওয়ার থেকে প্রতিদিন ছোট ছোট জিনিস খেয়াল রাখা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এই যত্নগুলো মায়েদের মনকে তৃপ্ত করে।
খুশি রাখাটাই পরশপাথর
মায়ের চাহিদাটা কি শারীরিক, মানসিক, সামাজিক নাকি আধ্যাত্মিক, সেটা চিহ্নিত করুন প্রথমে। এবার সেটা কীভাবে মেটানো যায়, আশপাশে কী উপায় আছে, সেটা খেয়াল করা জরুরি। প্রয়োজনে অন্য কারও সহায়তা নিন। কারণ, আপনি নিজেও ক্লান্ত হয়ে যেতে পারেন। মায়ের যদি কোনো সমস্যা তৈরি হয়, সেই সমস্যার সমাধানে মাকেও যুক্ত করুন। মা পারবেন না বলে তাঁকে অতি আদরের জায়গা থেকে আলাদা করে ফেলবেন না। তাহলে তিনি নিজেকে এখনও প্রয়োজনীয় মনে করবেন।
কাছাকাছি থাকুন
সবশেষে যে কথাটি জরুরি, তা হলো মাকে নিজের সন্তানের থেকে আলাদা করবেন না। দুই প্রজন্মের মানুষদের মধ্য়কার সম্পর্ক তৈরি করায় কোনো ভুল করবেন না। আপনি আপনার মায়ের সঙ্গে কেমন আচরণ করেন, তার ওপর নির্ভর করবে আপনার সন্তান তার দাদি বা নানির সঙ্গে কেমন আচরণ করবে। মনে রাখা জরুরি, এই মানুষটি ছিল দেখেই আজকে আপনি সমাজে প্রতিষ্ঠিত। সেই মানুষগুলো সৌভাগ্যবান, যাদের বাবা এখনো বেঁচে আছেন।
লেখক: চিকিৎসক, কাউন্সেলর, সাইকোথেরাপি প্র্যাকটিশনার, ফিনিক্স ওয়েলনেস সেন্টার বিডি
[ad_2]
Source link