দীর্ঘ প্রায় এক যুগেরও কাছাকাছি সময় ধরে সংস্কারের অভাবে পড়ে রয়েছে আন্তর্জাতিক ভেন্যুর মর্যাদাপ্রাপ্ত নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার ‘শহীদ রিয়া গোপ ক্রিকেট স্টেডিয়াম’ (আগের নাম খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়াম)। বর্তমানে খেলাধুলাই হচ্ছে এই মাঠে। দুই বছর আগে সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হলেও স্টেডিয়ামের আউটডোরে খুবই ধীরগতিতে কাজ চলছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, খুব শিগগির পুরোদমে স্টেডিয়ামের কাজ শুরু হবে। কাজ শেষ হলে আবারও খেলার উপযোগী হয়ে উঠবে আন্তর্জাতিক ভেন্যুর মর্যাদাপ্রাপ্ত স্টেডিয়ামটি।
জেলার ক্রীড়া সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০০৬ সালের ২৩ মার্চ বাংলাদেশ বনাম কেনিয়ার একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচের মাধ্যমে ২৫ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতার খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামটির যাত্রা শুরু হয়। একই বছরের ২৮ এপ্রিল বাংলাদেশ বনাম ভারতের একটি একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচের মাধ্যমে শেষ হয় একদিনের ম্যাচের ইতিহাস।
২০০৬ সালের ৯-১৩ এপ্রিল বাংলাদেশ বনাম অস্ট্রেলিয়ার ম্যাচের মধ্য দিয়ে শুরু হয় টেস্ট খেলা। এরপর ২০১৫ সালের ১০-১৪ জুন বাংলাদেশ বনাম ভারতের টেস্ট ক্রিকেট খেলার মাধ্যমে শেষ হয় এই স্টেডিয়ামের টেস্ট ম্যাচের ইতিহাস। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ কখনো এই মাঠে গড়ায়নি। তারপর মাঠটিতে দু-একটি ক্লাবের খেলা ও বিভিন্ন টুর্নামেন্টের খেলা অনুষ্ঠিত হলেও বর্তমানে খেলাধুলার কোনো উপায় নেই।
সরেজমিনে দেখা যায়, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডঘেঁষা ভিআইপি প্রবেশ গেটেই ময়লার স্তূপ। স্টেডিয়ামের কমেন্ট্রি বক্স ও অন্যান্য স্থাপনার গ্লাসগুলো ভাঙাচোরা। গ্যালারিতে দর্শকদের রোদ-বৃষ্টি থেকে বাঁচার ছাউনিটিও ভেঙে গেছে। বাইরে থেকে ভেতরে প্রবেশ করার সময় যে কারও কাছে মনে হবে এটি একটি পরিত্যক্ত জায়গা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২৩ সালের ২৪ অক্টোবর তৎকালীন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালক মো. আকরাম ও তানভীর আহমেদ টিটু মাঠটি পরিদর্শনে আসেন। এসময় তারা জানান, তাদের নিজস্ব অর্থায়নেই আন্তর্জাতিক ভেন্যুর মর্যাদাপ্রাপ্ত স্টেডিয়ামকে খেলার উপযোগী করে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হবে। সেইসঙ্গে আন্তর্জাতিক খেলা না হলেও আপাতত ফার্স্ট ডিভিশন, সেকেন্ড ডিভিশন, থার্ড ডিভিশন এবং প্রিমিয়ার ডিভিশন খেলার আয়োজন করা হবে। বাকি কাজগুলো জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসপি) সম্পন্ন করবে বলে জানান তারা।
ওইসময় আকরাম খান বলেছিলেন, ‘মাঠটা আমাদের অনেক উচুঁ করতে হবে। যেহেতু বাইরের ড্রেনিং সিস্টেমটা অনেক খারাপ, যতটুকু পারি মাঠটা উচুঁ করে খেলার উপযোগী করবো। এই সজেনে পারবো না, নেক্সট সিজেনে পারবো। আপাতত মাঠটা খেলার উপযোগী করা হবে। পরে এনএসপির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ করা হবে।’
স্থানীয় বাসিন্দা জসিম উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মর্যাদাপ্রাপ্ত এই মাঠটি নারায়ণগঞ্জবাসীর জন্য গর্বের বিষয় ছিল। কিন্তু সেই মর্যাদার বিষয়টি হাতছাড়া হতে যাচ্ছে কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাবে। আমাদের দাবি, দ্রুত এই স্টেডিয়ামকে আন্তর্জাতিক ম্যাচের জন্য উপযুক্ত করা হোক।’
বিসিবির গ্র্যাউন্ডস কমিটির ম্যানেজার আব্দুল বাতেন বলেন, স্টেডিয়ামের আউটডোরে কাজ চলছে। ভেতরে মাটি ফেলা হয়েছে। মাটি শক্ত না হওয়া পর্যন্ত কাজ শুরু করা যাচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, কাজ শুরুর ক্ষেত্রে কিছু জটিলতা ছিল। সেটা সমাধান হয়েছে। আশা করছি খুব শিগগির স্টেডিয়ামের ভেতরের কাজ শুরু হবে।
এসআর/জেআইএম