Homeদেশের গণমাধ্যমেস্মরণীয় মুসলিম মনীষী | কালবেলা

স্মরণীয় মুসলিম মনীষী | কালবেলা

[ad_1]

হাদিসশাস্ত্রের ইতিহাসে ইমাম মুসলিম (রহ.) একটি অমর ও উজ্জ্বল নাম। তিনি সহিহ হাদিস সংকলনের ক্ষেত্রে যে অবদান রেখেছেন, তা মুসলিম উম্মাহর জন্য এক অমূল্য সম্পদ। তার পূর্ণ নাম ছিল আবুল হুসাইন মুসলিম ইবনুল হজ্জাজ ইবনু মুসলিম আল-কুশাইরি আন-নিশাপুরি। তিনি হিজরি ২০৬ সালে (খ্রিষ্টাব্দ ৮২১-২২) ইরানের খোরাসান অঞ্চলের বিখ্যাত শহর নিশাপুরে জন্মগ্রহণ করেন।

ইমাম মুসলিম ছোটবেলা থেকেই জ্ঞানচর্চার প্রতি প্রবল অনুরাগী ছিলেন। অল্প বয়সেই তিনি কোরআন হিফজ করে ফেলেন এবং তাফসির, ফিকহ ও হাদিসশাস্ত্রের শিক্ষায় মনোনিবেশ করেন। তিনি নিশাপুরেই প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন এবং পরে অধিকতর জ্ঞান আহরণের জন্য বসরা, কুফা, মক্কা, মদিনা, হিজাজ, মিশর, সিরিয়া প্রভৃতি স্থানে সফর করেন। হাদিসশাস্ত্রে তার গভীর দক্ষতা ও অনুসন্ধিৎসা তাকে আলেমদের মধ্যে খ্যাতিমান করে তোলে।

ইমাম মুসলিমের শিক্ষকদের মধ্যে সর্বাধিক প্রভাবশালী ছিলেন ইমাম বোখারি (রহ.), যার সান্নিধ্যে ইমাম মুসলিম দীর্ঘ সময় কাটিয়েছেন এবং যার কাছ থেকে বিশালসংখ্যক হাদিস বর্ণনা করেছেন। এ ছাড়া তিনি ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, কুতাইবা ইবনু সাঈদ, ইসহাক ইবনু রাহুয়াইহ, ইবনে আবি শাইবা প্রমুখ বিখ্যাত মুহাদ্দিসদের কাছ থেকে জ্ঞান অর্জন করেন। ইমাম মুসলিমের শিষ্যদের মধ্যে অন্যতম হলেন ইমাম তিরমিজি, আবু হাকিম, আবু ইসা, আবু আয়ুব ও ইমাম ইবনে খুজাইমা। অনেক বিশিষ্ট মুহাদ্দিস তার শিষ্যত্ব গ্রহণ করে হাদিসশাস্ত্রে উচ্চমর্যাদা অর্জন করেন।

ইমাম মুসলিম (রহ.)-এর সর্ববিখ্যাত গ্রন্থ হলো ‘সহিহ মুসলিম’, যা ইসলামী ইতিহাসে ‘কুতুবুস সিত্তা’ বা ছয়টি বিশুদ্ধ হাদিস গ্রন্থের অন্যতম এবং ইমাম বোখারির ‘সহিহ বোখারি’র পরেই সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য হাদিসগ্রন্থ হিসেবে বিবেচিত। সহিহ মুসলিম গ্রন্থে প্রায় ৭ হাজার ৫০০ হাদিস রয়েছে (পুনরুক্ত বাদ দিলে প্রায় ৪ হাজার)। তিনি এ গ্রন্থ সংকলনে কঠিন শর্ত অনুসরণ করেন। তিনি শুধু বিশ্বস্ত সনদের হাদিস গ্রহণ করতেন এবং হাদিসের বর্ণনাকারীদের শুদ্ধতা ও স্মৃতিশক্তির ব্যাপারে অত্যন্ত কঠোর ছিলেন। সহিহ মুসলিমের বৈশিষ্ট্য হলো—তিনি প্রতিটি অধ্যায়ে হাদিসসমূহ এমনভাবে বিন্যস্ত করেছেন যে, পাঠকের জন্য বিষয়বস্তু সহজে অনুধাবন করা যায়। এ ছাড়া তার অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ রচনার মধ্যে রয়েছে—‘আল-আসমা ওয়াল-কুনা’, ‘আল-ইলাল’, ‘আল-মুখাদ্দাম ওয়াল-মু’খার’, ‘তামিজ’ ইত্যাদি।

ইমাম মুসলিম (রহ.) হিজরি ২৬১ সালে (খ্রিষ্টাব্দ ৮৭৫-৮৭৬) মাত্র ৫৫ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। বলা হয়, তিনি একবার একটি জটিল হাদিস নিয়ে গভীর গবেষণায় নিমগ্ন ছিলেন এবং সে সময়ে প্রচুর খেজুর খেয়ে ফেলেন, যার ফলে পেটের অসুস্থতায় আক্রান্ত হয়ে ইন্তেকাল করেন। তার জানাজায় হাজারো মানুষ উপস্থিত হয়েছিল এবং তাকে শ্রদ্ধাভরে নিশাপুরে দাফন করা হয়।

ইমাম মুসলিম (রহ.) হাদিসশাস্ত্রকে পরিশুদ্ধ করার জন্য যে পরিশ্রম করেছেন, তা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য এক অনন্য দৃষ্টান্ত। তার সংকলিত ‘সহিহ মুসলিম’ আজও বিশ্বের সব প্রান্তের আলেম ও মুসলিমদের জন্য বিশুদ্ধ দ্বীনি জ্ঞানের উৎস হিসেবে বিবেচিত।



[ad_2]

Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত