আঁধার নামছে, বাতাসে ভেসে আসছে অজানা এক শীতলতা। হ্যাঁ, ২০২৫ সালে মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে ভয় ও আতঙ্কের নতুন অধ্যায় নিয়ে নির্মিত বেশ কিছু হরর সিনেমা। আপনি নিজেকে যতই সাহসী ভাবুন, এ বছরের হরর সিনেমাগুলো আপনার নিঃশ্বাস আটকে দিতে প্রস্তুত। অন্ধকারে লুকিয়ে থাকা ছায়া, অদ্ভুত সব আওয়াজ আর হঠাৎ করেই উদয় হওয়া প্রাণঘাতী সত্তা, সবকিছু মিলিয়ে চলতি বছর হতে যাচ্ছে হররপ্রেমীদের জন্য এক বিভীষিকাময় স্বপ্নপূরণের বছর। রাতের নীরবতা আর আগের মতো থাকবে না। চোখ বন্ধ করলেও পিছু ছাড়বে না আতঙ্ক। নিচে রইল সেই পাঁচটি হরর সিনেমার তালিকা, যেগুলো আপনার নিদ্রাহীন রাতের কারণ হয়ে উঠতে পারে।
ফাইনাল ডেস্টিনেশন: ব্লাড লাইনস
এক দশক অপেক্ষার পর অবশেষে মুক্তি পেতে চলেছে জনপ্রিয় হরর ফ্র্যাঞ্চাইজির নতুন সিনেমা ‘ফাইনাল ডেস্টিনেশন: ব্লাডলাইন’। সম্প্রতি ওয়ার্নার ব্রাদার্স মুভিটির অফিসিয়াল ট্রেলার প্রকাশ করেছে, যা এরই মধ্যে ভক্তদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।
নতুন মুভির গল্পে দেখা যাবে কলেজ শিক্ষার্থী স্টেফানি লুইসকে (ক্যাটলিন সান্তা জুয়ানা), যিনি বারবার ভয়াবহ দুঃস্বপ্নের শিকার হচ্ছেন। দুঃস্বপ্নে আতঙ্কিত হয়ে তিনি বাড়ি ফিরে যান এবং জানতে পারেন তার দাদি একসময় মৃত্যুকে ফাঁকি দিয়েছিলেন। সেই ঘটনার জেরে পুরো লুইস পরিবার এখন মৃত্যুর লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে।
ট্রেলারে অন্যতম আলোচিত দৃশ্য হলো কুখ্যাত লগ ট্রাক দৃশ্যটি, যা আগের সিনেমায় দর্শকদের মনে গভীর দাগ কেটেছিল। নতুন ট্রেলারে দেখা যায়, সিনেমার চরিত্ররা প্রথমে সেই ট্রাক থেকে রক্ষা পেলেও নিয়ম অনুযায়ী মৃত্যুকে একবার ফাঁকি দিলে, তা আর কাউকে সহজে মুক্তি দেয় না। প্রযোজনা সংস্থা জানিয়েছে, আগের থেকে এবারের মুভি আরও বেশি ভয়াবহ ও হিমশীতল অভিজ্ঞতা নিয়ে আসবে। নতুন প্রজন্মের দর্শকরা যেমন রোমাঞ্চ অনুভব করবেন, তেমনি পুরোনো ভক্তদের জন্যও থাকছে আগের সেই পরিচিত আতঙ্কের স্বাদ। জ্যাক লিপোভস্কি ও অ্যাডাম বি স্টেইন পরিচালিত এ সিনেমায় অভিনয় করেছেন গ্যাব্রিয়েল রোজ, টনি টড, রিচার্ড হারমনসহ আরও অনেকে। এটি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবে ১৬ মে।
ফ্রাঙ্কেনস্টাইন
আগামী নভেম্বর মাসে গিলারমো দেল তোরোর বহু প্রতীক্ষিত সিনেমা ফ্রাঙ্কেনস্টাইন অবশেষে নেটফ্লিক্সে মুক্তি পেতে যাচ্ছে। মেরি শেলির ১৮১৮ সালে প্রকাশিত ফ্রাঙ্কেনস্টাইন উপন্যাস থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তৈরি হয়েছে এই গথিক সায়েন্স-ফিকশন হরর চলচ্চিত্রটি।
প্যানস ল্যাবিরিন্থ ও দ্য শেপ অব ওয়াটারের মতো মুভির মাধ্যমে ভীতিকর অথচ আবেগঘন গল্প বলার জাদুকর হিসেবে পরিচিত দেল তোরো এবারও তার স্বকীয় শৈলীতে মিশিয়েছেন ভয় ও অন্ধকারের এক অনন্য রূপ।
ড. ভিক্টর ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইনের ভূমিকায় অভিনয় করছেন অস্কার আইজ্যাক আর ফ্রাঙ্কেনস্টাইনের দানব হিসেবে আবেগঘন চরিত্রে দেখা যাবে জেকব এলোরডিকে। এতে আরও রয়েছেন মিয়া গোথ, যিনি তার আগের হরর মুভির অভিজ্ঞতা দিয়ে চরিত্রে এনে দিয়েছেন এক রহস্যময় আবেদন।
নভেম্বরে নেটফ্লিক্সে মুক্তির মাধ্যমে ফ্রাঙ্কেনস্টাইন হতে যাচ্ছে এই শরতের অন্যতম আলোচিত সিনেমা এবং সম্ভবত পুরস্কার প্রতিযোগিতারও অন্যতম দাবিদার হতে পারে বলে মনে করছেন সিনে-বিশ্লেষকরা।
ব্ল্যাক ফোন-২
স্কট ডেরিকসন পরিচালিত ব্ল্যাক ফোন-২ হলো জনপ্রিয় আমেরিকান হরর ফিল্ম দ্য ব্ল্যাক ফোনের একটি সিক্যুয়েল। এটি মুক্তি পেতে যাচ্ছে আগামী ১৭ অক্টোবর।
যখন সবাই ভাবছিল দ্য গ্র্যাবারের দাপট চিরতরে শেষ, ঠিক তখনই ব্ল্যাক ফোন-২-তে তাকে ফিরিয়ে এনেছে আরও ভয়ংকর রূপে। ২০২২ সালের স্লিপার হিট ‘দ্য ব্ল্যাক ফোন’ সুপারন্যাচারাল সাসপেন্স এ সিনেমাটি বক্স অফিসে দারুণ সাফল্য পায় এবং হরর ঘরানায় একটা শক্ত অবস্থান গড়ে তোলে।
আসন্ন এ সিক্যুয়েলে নির্মাতা হিসেবে এবারও ফিরছেন পরিচালক স্কট ডেরিকসন, সঙ্গে থাকছেন সহ-লেখক সি. রবার্ট কারগিল এবং প্রথম মুভিতে দ্য গ্র্যাবার হিসেবে সবাইকে ভয় ধরিয়ে দেওয়া দুর্দান্ত অভিনেতা ইথান হক।
দ্য গ্র্যাবার কীভাবে মৃত্যু থেকে ফিরে আসে, তা এখনো রহস্যই রয়ে গেছে। তবে প্রাথমিক টিজারগুলো ইঙ্গিত দিচ্ছে, এবার তার উপস্থিতি আরও অতিপ্রাকৃত ও প্রতিশোধপরায়ণ হতে চলেছে। এই সিক্যুয়েলে বিস্তৃত করা হয়েছে আগের সিনেমায় দেখা সেই অন্ধকার জগৎকে। সম্ভবত এবার উঠে আসবে খুনির অতীত জীবনের কিছু অজানা দিক।
আসন্ন চলচ্চিত্রটিতে ফের দেখা যাবে মেসন থেমসকে ফিনি চরিত্রে এবং ম্যাডেলিন ম্যাকগ্রাকে গুয়েন হিসেবে। তাদের সঙ্গে এবার নতুন মুখ হিসেবে যোগ দিচ্ছেন ডেমিয়ান বিচির এবং হরর দুনিয়ার নতুন এক পরিচিত নাম আনা লোর। হ্যালোইন সিজনে মুক্তির জন্য নির্ধারিত ব্ল্যাক ফোন-২ হতে চলেছে এ বছরের সবচেয়ে ভয়ংকর এবং প্যাঁচানো ভূতের গল্প।
দ্য কনজুরিং: লাস্ট রাইটস
হলিউডের সবচেয়ে জনপ্রিয় হরর ফ্র্যাঞ্চাইজি দ্য কনজুরিং ইউনিভার্সের শেষ অধ্যায় ‘দ্য কনজুরিং: লাস্ট রাইটস’ মুক্তি পাচ্ছে আগামী ৫ সেপ্টেম্বর। এ সিনেমায় শেষবারের মতো দেখা যাবে বাস্তবভিত্তিক অতিপ্রাকৃত তদন্তকারী এড ও লরেইন ওয়ারেনকে, যাদের যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০১৩ সালের প্রথম দ্য কনজুরিং সিনেমা দিয়ে।
সিনেমাটির পরিচালনায় রয়েছেন মাইকেল চ্যাভস। যিনি জানিয়েছেন, এ পর্বটি হবে ফ্র্যাঞ্চাইজির সবচেয়ে অন্ধকার, গভীর ও ভয়াবহ অংশ।
সিনেমাটির গল্পটি নির্মিত হয়েছে স্মুর্ল পরিবারের এক বাস্তব আতঙ্কের কাহিনি থেকে, যা ১৯৮৬ সালে পেনসিলভানিয়ার ওয়েস্ট পিটস্টনে শুরু হয়। ছোট ছোট অস্বাভাবিক ঘটনা ক্রমেই রূপ নেয় এক ভয়ংকর অতিপ্রাকৃত দুঃস্বপ্নে। এড ও লরেইন চরিত্রে আবারও ফিরছেন জনপ্রিয় জুটি প্যাট্রিক উইলসন ও ভেরা ফারমিগা। তবে এবার তাদের মুখোমুখি হতে হবে এক প্রাচীন ও অশুভ শক্তির, যা তাদের বিশ্বাস, ভালোবাসা এবং অতীতের সব সংগ্রামকে চ্যালেঞ্জ জানায়।
‘দ্য কনজুরিং: লাস্ট রাইটস’ শুধু একটি হরর ফিল্ম নয়, এটি ওয়ারেন দম্পতির জীবনের শেষ অধ্যায়ের এক আবেগঘন, কাব্যিক প্রতিফলন, যা দর্শকের মনে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলবে।
মেগান ২.০
মেগান ২.০ মুক্তি পাচ্ছে আগামী ২৭ জুন। ভয়ংকর ও স্টাইলিশ অ্যান্ড্রয়েড মেগান এবার ফিরছে আরও ভয়াবহ রূপে। মুভিটির পরিচালনায় আগের মতোই রয়েছেন জেরার্ড জনস্টোন এবং চিত্রনাট্যে তার সঙ্গে রয়েছেন আকেলা কুপার। অ্যালিসন উইলিয়ামস (জেমা) ও ভায়োলেট ম্যাকগ্রা (ক্যাডি) ফিরে আসছেন মূল চরিত্রে এবং অ্যামি ডোনাল্ড ও জেনা ডেভিস যথাক্রমে মেগানের শরীর ও কণ্ঠ হিসেবে ফিরছেন।
এ ছাড়া পুনরাগমনের তালিকায় আছেন ব্রায়ান জর্ডান আলভারেজ ও জেন ভ্যান ইপস আর নতুন সংযোজন ইভানা সাখনো, জারমেইন ক্লেমেন্ট, অ্যারিস্টটল আথারি ও টিম শার্প।
গল্পটির যাত্রা শুরু আগের ঘটনার দুই বছর পরের। জেমা এখন এআই নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে এবং কিশোরী ক্যাডি বিদ্রোহী হয়ে উঠেছে। এদিকে অ্যামেলিয়া নামে এক নতুন ভয়ংকর মিলিটারি, গ্রেড অ্যান্ড্রয়েডে হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। তাকে থামাতে জেমা বাধ্য হয় মেগানকে আরও শক্তিশালী করে ফিরিয়ে আনতে।
সিনেমাটিতে থাকছে হিংস্রতা, ব্যঙ্গ এবং সেই কুখ্যাত হিউমার, যা প্রথম পর্বকে বেশ জনপ্রিয়তায় পরিণত করেছিল।