গত রোববার থাইল্যান্ড যাওয়ার উদ্দেশে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গেলে চিত্রনায়িকা নুসরাত ফারিয়াকে আটক করা হয়। পরবর্তী সময়ে তাঁকে জুলাই অভ্যুত্থানের এক হত্যাচেষ্টা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। গতকাল সোমবার অভিনেত্রীকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। নুসরাত ফারিয়াকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ জানাচ্ছেন তাঁর সহশিল্পীরা। বিবৃতি দিয়েছে অভিনয়শিল্পীদের সংগঠন অভিনয়শিল্পী সংঘ।
জুলাই অভ্যুত্থানের সময় নুসরাত ফারিয়া দেশের বাইরে ছিলেন। তাই অনেকেই মনে করছেন, ফারিয়ার অপরাধ ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’ সিনেমায় শেখ হাসিনার চরিত্রে অভিনয় করা। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় এই চরিত্রে অভিনয় করে ফারিয়া যেমন প্রশংসিত হয়েছেন, আবার সরকারের পতনের পর হয়েছেন সমালোচিত। এ প্রসঙ্গে কয়েক মাস আগে এক পডকাস্টে ফারিয়া বলেছিলেন, একজন অভিনেত্রী হিসেবেই সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন তিনি। সে সময় বাহবা পেলেও জুলাইয়ের পর থেকে অনেকেই তাঁর প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করা শুরু করে। জুলাইয়ের পর থেকে অনেক পরিচালক-প্রযোজক তাঁকে নিয়ে কাজ করতে ভয় পান।
অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, ‘কী লজ্জার বিষয়! যারা ফ্যাসিবাদী শাসন চালিয়ে সাধারণ মানুষের ওপর অত্যাচার করেছে, তাদের সঙ্গে এই মেয়েটির কোনো সম্পর্ক নেই। বর্তমান পরিস্থিতি এবং ব্যবস্থা নিয়ে আমি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। এই ঘটনা একেবারেই গ্রহণযোগ্য না।’
কাজী নওশাবা আহমেদ লেখেন, ‘শিল্প ও শিল্পীর অবমূল্যায়ন জাতির ধ্বংসের কারণ। শিল্পী যদি সত্যিই অপরাধী প্রমাণিত হয়, অবশ্যই তার সুষ্ঠু বিচার হোক।…কিন্তু মিথ্যা মামলা, আটক, হয়রানি, পাবলিক/মিডিয়া/সোশ্যাল মিডিয়া ট্রায়াল, মব ভায়োলেন্স এসব মানহানি বন্ধ হোক এখনই।’
অভিনেতা খায়রুল বাসার লেখেন, ‘উনি অভিনেত্রী, উনার কাজ অভিনয় করা। কোনো গল্পে যে চরিত্রটা পাবেন সে চরিত্রের যথাযথ প্রকাশ তিনি করবেন; এটা উনার কাজ। উনি কোনো রাজনীতি করেন না, এমনকি বিটিভিতে গিয়ে মায়াকান্নাও করেন নাই। অভিনেত্রী হিসেবে একটা সিনেমায় অভিনয় করা কোনো ক্রাইম না। নুসরাত ফারিয়ার সঙ্গে অন্যায় হচ্ছে। বর্তমান সরকার যদি শিল্পীদের কোনো রাষ্ট্রীয় আয়োজনে ডাকেন, তবে শিল্পীদের করণীয় কী হবে?’
নির্মাতা আশফাক নিপুন লেখেন, ‘এভাবেই দিনে দিনে প্রকৃত খুনি ও অপরাধীদের বিরুদ্ধে মামলা দুর্বল করতে অন্যদের সফট টার্গেট করা হয়ে আসছিল এবং করা হচ্ছে। এটাকে আর যা-ই হোক, সংস্কার বলে না। হত্যাচেষ্টার যে মামলা করা হলো এবং যে হত্যার সময় তিনি দেশেই ছিলেন না, সেই ঘটনায় নুসরাত ফারিয়াকে গ্রেপ্তার এবং কারাগারে প্রেরণ দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেই ইঙ্গিতই দেয়। আমরা জুলাই গণহত্যার সুষ্ঠু বিচার চাইছিলাম। কোনো রকম প্রহসন চাই নাই, এখনো চাই না। চিহ্নিত অপরাধীদের পালিয়ে যাওয়া বা পালাতে দেওয়া এবং ঢালাও গায়েবি মামলাবাজির নাটক বন্ধ করেন।’
নির্মাতা শিহাব শাহীন লেখেন, ‘অবিশ্বাস্য এক আজগুবি মামলায় নুসরাত ফারিয়ার গ্রেপ্তার হয়রানিমূলক।’
শরাফ আহমেদ জীবন লেখেন, ‘বোঝার চেষ্টা করলাম, নুসরাত ফারিয়ার অপরাধটা কী? …আপাতদৃষ্টিতে অপরাধ দুইটা। ১. মুজিব সিনেমায় অভিনয় করা! ২. জুলাই-আগস্টে শেখ হাসিনার সাথে সেও হত্যা মামলার আসামি! কী ভয়ংকর হাস্যকর! নুসরাত ফারিয়া একজন শিল্পী! সে মুজিব সিনেমায় অভিনয় করেছে! আরও অনেক শিল্পীই অভিনয় করেছে! অনেক শিল্পী অডিশন দিয়েছে। অনেকে নানাভাবে সংশ্লিষ্ট ছিল! তাহলে তাদের সবাইকে গ্রেপ্তার করা হবে?… বিচার হোক প্রকৃত অপরাধীর!’
অভনিয়শিল্পী সংঘের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সমাজ তথা রাষ্ট্রের সেবা ও স্বার্থ সংরক্ষণে অভিনয়শিল্পীরা সর্বদা সোচ্চার ও সচেতন থাকেন। যেকোনো মানবিক প্রয়োজনেও শিল্পীদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। সুতরাং শিল্পীদের স্বার্থ ও সম্মান সংরক্ষণ করাও সমাজ তথা রাষ্ট্রেরই নৈতিক দায়িত্ব বলে আমরা বিশ্বাস করি। তাই শিল্পী সমাজের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার সংঘবদ্ধ চলমান অপচেষ্টা বন্ধ হোক। সরকারের কাছে ন্যায়সংগত ও বৈষম্যহীন কর্মপন্থা প্রত্যাশা করছি।
নুসরাত ফারিয়ার ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় আরও পোস্ট দিয়েছেন শাহরিয়ার নাজিম জয়, ইমতিয়াজ বর্ষণ, জয় চৌধুরী, অধরা খান, পিকলু চৌধুরীসহ অনেকে।